নিয়মটা অদ্ভূত। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দেরও থাকবে বয়সের সীমারেখা! কপাল কুঁচকানোর মতো খবর হলেও এমন চিন্তাভাবনা করছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। ৩২ বা ৩৩ বছর হলেই জাতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে খেলোয়াড়দের।
বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করছে বলে বুধবার জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.)। আগামী এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এএইচএফ কাপ থেকেই এ নিয়ম চালু করতে চায় ফেডারেশন।
জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের বয়সের সীমারেখা টেনে দেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘যদি ৩৫ বছরের একজনকে ক্যাম্পে ডাকা হয় তাহলে ২৭-২৮ বছরের একটা ছেলের জায়গা চলে যাচ্ছে, যাদের ভবিষ্যত আছে। ৩৫ বছর বয়সের খেলোয়াড়ের ভবিষ্যত হয়তো আমার কাছে আর নেই, দলের কাছেও নাই। দেখা যায় ৩৫ বছরের খেলোয়াড় ক্যাম্পে কোনোভাবে টিকলো, দলে নির্বাচিত হলো না। সেক্ষেত্রে আমাদের একটা জায়গা নষ্ট হলো।’
তাহলে জাতীয় দলের জন্য কত বছর বয়স পর্যন্ত আপনারা নেবেন বলে মনস্থির করেছেন? ‘আমরা এ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। একটা রাফ বয়স ধরা আছে ৩২-৩৩ বছরের ওপরে যাচ্ছি না। কারণ, এ ধারনাটা আমাদের জন্য প্রথম। এই বয়সের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সও যদি ক্যাম্পে ভালো না হয় তাহলে দল যখন এএইচএফ কাপ খেলতে যাবে তখন বয়সের সীমা আরো কমিয়ে নিয়ে আসবো। কারণ, আমরা দুইটা বয়স্ক খেলোয়াড় না নিয়ে যদি দুইটা তরুণ খেলোয়াড় নেই তাহলে তারা ভবিষ্যতে আরো উন্নতি করতে পারবে। এটা দলের জন্য অনেক ভালো হবে’- বলেছেন সাধারণ সম্পাদক।
ফেডারেশন যে চিন্তাভাবনা করছে তাতে আগামীতে নামের ভারে আর কেউ দলে ডাক পাবেন না। সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.) বলেছেন, ‘আমরা দেখি নাম ধরে ধরে খেলোয়াড় ডেকে আনা হয়। এমনটি আর হবে না। জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা যাদের আছে তাদের বয়স চেক করা হচ্ছে। ক্যাম্পে ডাকার আগে এসব বিবেচনা করা হবে। আমরা একটা ডাটাবেস তৈরি করছি। সেখানে সবার প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে।’
অনেক সময় দেখা যায় মাঠে জুনিয়রদের চেয়ে সিনিয়র কেউ কেউ ভালো পারফরম্যান্স করছেন। তাহলে তাকে কেন জাতীয় দলে ডাকা হবে না? জবাবে হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘সাধারণত বেশি বয়সের খেলোয়াড়দের ঘরোয়া হকিতে ভালো খেলতে দেখা যায়। যখন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামবে তখন কিন্তু বয়স বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। দেখা যাবে প্রতিপক্ষ দলের গড় বয়স ২৮ বছর। তখন তো আমাদের ৩২ বছর বয়সের খেলোয়াড় থাকলে সেওতো তাদের তুলনায় বয়স্ক হয়ে যাবে। যে যতই বলুক, আমাদের দেশের খেলোয়াড়দের ফিজিক্যাল ফিটনেস ইউরোপের দেশগুলোর মোত নয়। এমন কি এশিয়ার কোরিয়ার কথা বলবো তাদের সাথে অনেক ব্যবধান। কারণ, আমাদের খেলোয়াড়দের তো সেভাবে ছোটকাল থেকে গড়ে ওঠানো হয়না। আমাদের তো ফিজিক্যাল ফিটনেস উন্নতির পরিকল্পনা নেই। যা থাকা উচিত।’
খেলোয়াড়দের জন্য এই ডাটাবেজ তৈরি কাজ কি শুরু করেছেন? ‘আমরা ডাটাবেস তৈরির কাজ শুরু করেছি। আমার কাছে এরই মধ্যে ২০-২৫ জনের তথ্য চলে এসেছে তাদের জন্মতারিখসহ। এখন আমরা একটা শীট তৈরি করবো। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যদি খেলাটাকে এগিয়ে নিতে চাই তাহলে তরুণদেরই বেশি নিতে হবে। আপনারও বেশি দেখেছেন যে, মাঠের খেলা নষ্ট করে কারা? যাদের বয়স হয়ে গেছে, খেলা পড়তির দিকে, দল তার কাছে যা আশা করে অথচ দিতে পারছে না। তখনই কিন্তু মাঠের মধ্যে একটা গন্ডগোলের সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ বিজয় দিবস হকিতেও আমরা এ জিনিসটি খেয়াল করেছি। মজার বিষয় হলো আমাদের সভাপতি মহোদয়ের চোখেও এ জিনিসটা পড়েছে’- বলেছেন সাধারণ সম্পাদক।
এপ্রিলের এএইচএফ কাপের জন্য হকি ফেডারেশন মার্চ থেকে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের ক্যাম্প শুরু করবে। তার আগে ২০ ফেব্রুয়ারি খেলোয়াড়দের কুপার টেস্ট করা হবে। ‘কুপার টেস্টে যারা টিকবে তাদের ক্যাম্পের জন্য নির্বাচিত করা হবে। যারা টিকবেন না তাদের জন্য আমাদের কিছুই করার থাকবে না। আমরা ২৭-২৮ জন সিনিয়র খেলোয়াড়ের তালিকা তৈরি করতে যাচ্ছি। যারা সার্ভিস দলে আছেন তারা সেখানে চলে যাবে’- বলেছেন সাধারণ সম্পাদক।
জাতীয় দলের জন্য শক্তিশালী একটি কোচিং স্টাফ তৈরি কাজও শুরু করেছে ফেডারেশন। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশের ফেডারেশনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে কোচের তালিকা দিতে। সেখান থেকে কোচ বাছাই করবে ফেডারেশন। পাশাপাশি স্থানীয় কোচিং স্টাফও থাকবে। ‘কোন দেশের কোচ শেষ পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হবে সেটা এখনো জানি না। তবে ফরম্যাটটা আমরা ঠিক করেছি। দেশি হোক বা বিদেশি, একজন থাকবেন প্রধান কোচ। দুইজন সহকারী কোচ এবং একজন ট্রেনার থাকবেন সাথে। আমাদের স্বাধীন একটা কমিটি থাকবে যারা কোচদের মনোনীত করব ‘-বলেছেন হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।
জাতীয় ও অনূর্ধ্ব-২১ দলের জন্য এক সাথেই কোচ সার্চ করবে ফেডারেশন। তারপর সেখান থেকে দুই দলকে আলাদাভাবে কোচিং স্টাফ দেওয়া হবে। সিনিয়র দলের কোচিং স্টাফ নিয়োগ দেওয়া হবে শর্টটার্মে। একটু লম্বা সময়ের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে জুনিয়র দলের কোচ। জুলাইয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। দেশে ও দেশের বাইরে বেশ কিছু প্রীতি ম্যাচ খেলানোর পরিকল্পনা আছে ফেডারেশন। পাঁচ মাসের মতো প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে ভারত যাবে অনূর্ধ্ব-২১ দল।
আরআই/আইএইচএস/