চট্টগ্রামে শিশু নিপীড়নের অপরাধের মামলায় মাকসুদুর রহমান (২৮) নামে মাদরাসার অধ্যক্ষসহ দুজনকে যাবজ্জীবন দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে উভয়কে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের জন্য সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা পৃথক দুই মামলার রায়ে ওই আদেশ দেন। দণ্ডিত মাকসুদুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার দেওঘর এলাকার বাসিন্দা। মাকসুদুর চট্টগ্রাম মহাগরের উত্তর পতেঙ্গা এলাকার জামিয়াতুল মদিনা মাদরাসার অধ্যক্ষ ছিলেন। আরেক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন নোয়াখালীর চরজব্বর থানার পূর্ব চরভাটা এলাকার জোবায়ের হোসেন (২৭)।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, রায়ের সময় আসামি মাকসুদ উপস্থিত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানামূলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে আসামি জোবায়ের আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের পিপি শফিউল মোরশেদ চৌধুরী।
তিনি জানান, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত পৃথক মামলার রায়ে আসামি মাকসুদ ও জোবায়েরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে আদালত দুই আসামির প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগরের উত্তর পতেঙ্গা এলাকায় পাঁচ বছর বয়সী ভিকটিম শিশু তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ির সামনে মোবাইলে গেম খেলছিল। আসামি মাকসুদ ওই এলাকার জামিয়াতুল মদিনা মাদরাসার অধ্যক্ষ ছিলেন। ভিকটিম শিশু ওই মাদরাসার শিক্ষার্থী। ঘটনার দিন অধ্যক্ষ মাকসুদ ওই শিশুকে তার বড় ভাইয়ের সামনে থেকে ডেকে মাদরাসায় নিয়ে যান। এরপর মাদরাসায় তার নিজ রুমে নিয়ে ওই শিশুকে যৌন নিপীড়ন করেন। এ ঘটনায় ভিকটিম শিশুর বাবা আসামি মাকসুদের বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পুলিশ মামলার তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ২৭ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০২২ সালের ২ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ছয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে আদালত এ রায় দেন। নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় মাদরাসার আরেক শিক্ষককে খালাস দিয়েছেন আদালত।
অন্যদিকে ২০১৯ সালের ৬ জুলাই নগরীর পাঁচলাইশ থানার পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায় ১৩ বছর বয়সী এক শিশুকে যৌন নিপীড়ন করেন আসামি জুবায়ের। তারা দুজনই ওই এলাকার একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। এ ঘটনায় ওই শিশুর মা পাঁচলাইশ থানায় জুবায়েরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পুলিশ মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মোট ৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে আদালত এ রায় দেন।
এমডিআইএইচ/এমএইচআর/এএসএম