Site icon Amra Moulvibazari

দৈনিক ২০ লাখ টাকার রাজস্ব নেমেছে ৬০ হাজারে

দৈনিক ২০ লাখ টাকার রাজস্ব নেমেছে ৬০ হাজারে


চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে কমেছে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীর সংখ্যা। সম্প্রতি বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারত সরকারের ভিসানীতির প্রভাব পড়েছে এ চেকপোস্টে। যাত্রী সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোটায়। পূর্বে এ চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার নাগরিক দুই দেশে যাতায়াত করলেও বর্তমানে ৫০ থেকে ৭০ জন যাত্রী যাতায়াত করছেন। তাও আবার বেশিরভাগ মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসায়। এর বাইরে যাতায়াত করছেন ভারতের নাগরিকরা।

এতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি এ চেকপোস্টকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভ্যানচালকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। পাসপোর্টধারী যাত্রীর চাপ না থাকায় এক প্রকার অলস সময় পার করতে হচ্ছে তাদের।

দর্শনার জয়নগর ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত চলে। আগে ভোর থেকেই পাসপোর্টধারী যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ জন নাগরিক ভারত ও বাংলাদেশে যাতায়াত করতেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কমতে থাকে যাত্রীর সংখ্যা। এর মধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করে ভারত সরকার। শুধুমাত্র মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসা সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে। এজন্যই মূলত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীর সংখ্যা বর্তমানে শূন্যের কোটায়। তবে ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রীরা নির্বিঘ্নে যাওয়া-আসা করতে পারছেন।

দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আল ইকরাম অমিত জানান, জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে আগে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে ২ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন। এতে প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে এক হাজার টাকা ‘ভ্রমণ কর’ হিসেবে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হতো। কিন্তু ৫ আগস্টের পর যাত্রীর সংখ্যা কমতে কমতে ৫০ থেকে ৬০ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন গড়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো রাজস্ব আসছে।

তিনি আরও বলেন, জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে সাধারণত পর্যটকরা বেশি ভারতে যাতায়াত করেন। কিন্তু ভারত ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ রাখায় বর্তমানে যাত্রী সংখ্যা নেই বললেই চলে। ট্যুরিস্ট ভিসা চালু না হলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার একেবারে শূন্য হয়ে যাবে।

এদিকে জয়নগর চেকপোস্টে পাসপোর্টধারী যাত্রী কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে বিরূপ প্রভাব পড়েছে এ অঞ্চলে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আগে যেখানে দিনভর পর্যটকদের আনাগোনায় জমজমাট থাকত, সেখানে এখন সবকিছু খাঁ খাঁ করছে। চেকপোস্টকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মানি এক্সচেঞ্জ, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও থ্রি হুইলার চালকরা অলস বসে সময় কাটাচ্ছেন।

চা-দোকানি সাহার আলী বলেন, ‘সকালে এসে দোকান খুলি। আগে প্রচুর ভিড় থাকলেও এখন খুব একটা বেচা-বিক্রি নেই। আসলে যাত্রীই তো আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে দোকান বন্ধ করে অন্য পেশায় যেতে হবে।’

ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ব্যবসায়ী শিপন মিয়া বলেন, ‘কী আর বলবো, পর্যটক নেই, ব্যবসাও নেই। দেখতেই তো পাচ্ছেন দোকান একেবারে খালি পড়ে আছে। চাহিদা-বিক্রি না থাকলে মাল ওঠাবো কীভাবে। এমনিতেই খুব লোকসানে আছি।’

স্থানীয় মানি এক্সচেঞ্জার আরিফ হোসেন বলেন, ‘ভারতগামী যাত্রীদের টাকা এক্সচেঞ্জের ব্যবসা আমার। বর্তমানে যাত্রী কমে যাওয়ায় আমাদের কাজও কমে গেছে। দেশের ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আমরা একেবারেই বসে আছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের পথে বসতে হবে।’

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version