Site icon Amra Moulvibazari

পুত্র সন্তানের জন্মেও শহীদ শাহজাহানের ঘরে দুশ্চিন্তার ছাপ

পুত্র সন্তানের জন্মেও শহীদ শাহজাহানের ঘরে দুশ্চিন্তার ছাপ


জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গুলিতে শহীদ হন মো. শাহজাহান। তার শহীদ হওয়ার প্রায় সাড়ে ৫ মাস পর শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন স্ত্রী ফাতেহা। শাহজাহানের রেখে যাওয়া নাম মো. ওমর ফারুকই রাখা হয়েছে শিশুটির। জন্মের পর একে একে সবার কোলে উঠলেও বাবার কোলে ওঠা হলো না ওমর ফারুকের। এমনকি বাবার মুখও দেখা হলো না তার।

শহীদ শাহজাহান মো. ইমান আলী ও মোসা. আয়শা বেগম দম্পতির ছেলে। তারা ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে বসবাস করতেন। তাদের দেশের বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজীপুরে।

স্ত্রী ফাতেহা জানান, গত বছর ২৫ এপ্রিল পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় শাহজাহান-ফাতেহার। বিয়ের পর তারা ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। ঢাকার নিউ মার্কেটের সামনে ফুটপাতে পাপোশের ব্যবসা করে সংসার চালাতেন শাহজাহান।

গত ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে শহীন হন শাহজাহান। স্বামীর মৃত্যুর সময় তিনি ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। স্বামী শহীদ হওয়ার পর শ্বশুরবাড়িতে বেশিদিন থাকা হয়নি ফাতেহার। আশ্রয় হয়েছে বাবার বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ছোটধলী গ্রামের বদ্দার বাড়িতে। মৃত বাবার রেখে যাওয়া জরাজীর্ণ ঘরেই মায়ের সঙ্গে বসবাস করছেন তিনি।

ফাতেহা জানান, শাহজাহানের স্বপ্ন ছিল তার পুত্র সন্তান হলে নাম রাখবেন ওমর ফারুক। সেই নামই রাখা হয়েছে। ছেলেকে মাদরাসার পড়ানোর স্বপ্ন ছিল শাহজাহানের। তার স্বামী দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। তার সন্তানের পড়াশোনাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেন তিনি।

ফাতেহার মা মোসা. নবীশা ও বড়ভাই মো. সবুজ জানান, আজ ফাতেহার ছেলে সন্তান হয়েছে। এটি খুবই খুশির খবর হলেও বেদনাদায়ক। শাহজাহান তার ছেলের মুখ দেখে যেতে পারেনি। এমনকি সন্তানকে কখনো কোলে নিয়ে আদরও করতে পারবে না। শিশুটিও তার বাবার কোলে উঠতে পারবে না, ডাকতেও পারবে না।

তারা আরও বলেন, ফাতেহা ও তার সন্তানকে ভালোভাবে রাখার সামর্থ্য আমাদের নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করবো ওকে ও ওর সন্তানকে ভালো রাখার। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা দাবি করছি।

ভোলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. রাহিম ইসলাম জানান, শাহজাহান শহীদ হওয়ার পর থেকেই তারা শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। পুত্রসন্তান জন্মের খবর পেয়ে তারা সবাই শনিবার এশিয়ান মেডিকেল সেন্টারে ছুটে যান।

তিনি বলেন, আমরা সাবই শাহজাহানের ছেলে ওমর ফারুকের অভিভাবক। ওমর ফারুকের মাদরাসায় পড়াশোনা ও তাদের অসচ্ছল পরিবারের সকল সুযোগ-সুবিধার দেওয়ার জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে যাবো।

ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জানান, খবর পেয়ে তিনি শাহজাহানের সন্তানকে দেখতে শনিবার মেডিকেল সেন্টারে যান। এরইমধ্যে তিনি শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ-খবর ও চিকিৎসার জন্য আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। শাহজাহানের ছেলে ওমর ফারুকের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version