চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪১ বছর ইমামতির পর আশরাফ আলী (৭০) নামের এক ইমামকে লাখ টাকা হাদিয়া দিয়ে ফুল ছিটিয়ে রাজকীয় বিদায় দিয়েছেন স্থানীয় মুসল্লিরা।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রানিহাটি ইউনিয়নের চকলামপুর বেলপাড়া জামে মসজিদের ইমাম আশরাফ আলীকে জুমার নামাজ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হয়।
শেষবারের মতো উপস্থিত মুসল্লি ও এলাকাবাসীর কাছে নিজের ভুলত্রুটির ক্ষমা চান তিনি। পরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা সহকারে মাইক্রোবাসে করে নিজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় ইমামকে।
এর আগে মসজিদের বিদায়ী ইমাম মাওলানা আশরাফ আলীকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে নগদ ১ লাখ ৩ হাজার টাকা ও ব্যবহারযোগ্য কিছু সরঞ্জাম উপহার দেন মুসল্লিরা। এছাড়া শত শত মুসল্লির উপস্থিতিতে মাইক্রোবাসে ওঠানো হয় ইমামকে। সামনে-পেছনে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে ইসলামের বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে ইমামকে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
আশরাফ আলী সদর উপজেলার রানিহাটি ইউনিয়নের কৃষ্ণ গোবিন্দপুর ক্যাঠ্যাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও চুনাখালি কলেজের সাবেক প্রভাষক।
স্থানীয় বাসিন্দা আলী হাসান বলেন, ‘বেলপাড়া জামে মসজিদে ৪১ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইমামতি করে আসছিলেন আশরাফ আলী। কোনোদিন কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি। এমনকি কেউ কটূ কথা বললেও উত্তর দেননি। এজন্য এলাকার মুসল্লিরা তাকে খুব ভালোবাসেন।’
হাসিব আলী নামের আরেকজন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বাবাও তার কাছে কোরআন পড়তে শিখেছেন। আমিও তার কাছে কোরআন পড়া এবং নামাজ আদায় করতে শিখেছি। তিনি এই এলাকার মানুষকে অনেক শিক্ষা দিয়েছেন।’
সাবেক ইউপি মেম্বার এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইমামের কাছে অনেক ভালো আচরণ শিখেছি। তিনি রেগে গিয়ে কখনো কথা বলতেন না। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে সম্মান করতেন। তার চলে যাওয়া স্থানীয়রা মেনে নিতে পারছেন না।’
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বিদায়ী ইমাম মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, ‘বিগত ৪১ বছর এই মসজিদে ইমামতি করে আসছি। মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে আগে বুঝে উঠতে পারিনি। আমি তাদের এত ভালোবাসা সত্যিই মুগ্ধ।’
চকলামপুর বেলপাড়া জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন জুয়েল বলেন, আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের অনেক কিছুই দিয়েছেন। অনেকভাবেই তার কাছে শিখেছি। আজ তাকে বিদায় দিতে হচ্ছে। এটি খুবই কষ্টের।
সোহান মাহমুদ/এসআর/এএসএম