Site icon Amra Moulvibazari

সরকারি মোটেলে আগ্রহ নেই পর্যটকদের, ভরসা ‘প্রেমিক যুগল’

সরকারি মোটেলে আগ্রহ নেই পর্যটকদের, ভরসা ‘প্রেমিক যুগল’


পর্যটনশিল্পে দেশের সবচেয়ে বড় হাব কক্সবাজার। সেখানে বাংলাদেশে পর্যটন উন্নয়ন করপোরেশনের অধীনে হোটেল লাবনীর নন এসি টুইন বেডের এক দিনের ভাড়া ১৪০০ টাকা। অথচ প্রায় সমান সুযোগ-সুবিধা থাকা সিলেটের পর্যটন মোটেলের একদিনের ভাড়া ২৪০০ টাকা। হোটেল লাবনীতে ৯০০ টাকায় একরাত থাকার সুবিধা রয়েছে। কিন্তু সিলেটে পর্যটন মোটেলে ২৪০০ টাকার নিচে অবকাশযাপনের কোনো সুযোগ নেই।

অতিরিক্ত ভাড়া ও প্রচার-প্রচারণার অভাবে অনেকটা আড়ালেই রয়েছে সিলেট নগরীতে অবস্থিত পর্যটন করপোরেশনের একমাত্র মোটেল ‘পর্যটন মোটেল সিলেট’। তিন দশক আগে বিমানবন্দর এলাকায় ৪১ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই পর্যটন মোটেল সারাবছরই অতিথি সংকটে ভুগছে।

তবে পর্যটকদের পদচারণা না থাকলেও সিলেটের প্রেমিক যুগলদের ‘নিরাপদ স্থান’ এই পর্যটন মোটেল। লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকায় অনেকটা নিরাপদে মোটেলে একান্ত সময় কাটান প্রেমিক-প্রেমিকারা। মোটেলের কতিপয় কর্মচারীকে ‘ম্যানেজ’ করে চলে এসব অপকর্ম। বকশিশের লোভে প্রেমিক যুগলদের জাতীয় পরিচয়পত্র ম্যানেজ করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এখানকার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।

শুধু তাই নয়, মোটেল লাগোয়া ইকো পার্কেও চলে এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড। এসব অপকর্ম ঠেকাতে নিরাপত্তাকর্মী দিয়েছে ‘পর্যটন মোটেল সিলেট’। তবুও থামছে না অনৈতিক কর্মকাণ্ড। এসব কারণে পর্যটন মোটেল ও ইকোপার্কে পর্যটকদের আনাগোনা খুবই কম।

১৯৯৪ সালে সিলেটের এয়ারপোর্ট এলাকায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের অধীনে মোটেলটি গড়ে ওঠে। অতিথিদের সুবিধার্থে মোটেলের সঙ্গে রয়েছে একটি রেস্তারাঁও। মোটেলের সামনে দৃষ্টিনন্দন উদ্যান ও প্রাকৃতিক পরিবেশ যে কারও নজর কাড়ে মুহূর্তেই। মোটেল এলাকাটি ইকোপার্ক হিসেবেও গড়ে তোলা হয়েছে। যার প্রবেশ ফি ৫০ টাকা।

মোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, মোটেলে মোট কক্ষ রয়েছে ২৬টি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১৫টি আর সাধারণ ১১টি। কাপল বেডের ভাড়া ৩৫০০ টাকা, এসি টুইন বেড ৩০০০ টাকা ও নন এসি টুইন বেড ২৪০০ টাকা। এছাড়াও এখানে একটি কনফারেন্স রুমও রয়েছে। কনফারেন্স রুমের ভাড়া পূর্ণদিবস ৮ হাজার টাকা এবং অর্ধদিবস ৫৫০০ টাকা।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সরেজমিন মোটেল ঘুরে কোনো অতিথি চোখে পড়েনি। মোটেল লাগোয়া রেস্তারাঁটিও ছিল একেবারে ফাঁকা। তবে দায়িত্বরত কর্মচারীরা জানান, দুয়েকটি রুমে অতিথি রয়েছেন। আরও কিছু রুম বুকিং করা রয়েছে। অতিথিরা আসবেন। তবে মোটেল এলাকার ইকোপার্ক ঘুরে অনেক প্রেমিক যুগলদের বসে গল্প করতে দেখা গেছে।

মোটেল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন ৫০ টাকা টিকিট কেটে অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ জন পর্যটক ইকোপার্কে ঘুরতে আসেন। এখানে পর্যটকরা খুব কম আসে বলে জানান তারা।

একটি সূত্র জানায়, ইকোপার্কে যেসব প্রেমিক যুগল ঘুরতে আসেন, একপর্যায়ে তারা মোটেল ভাড়া করে একান্ত সময় কাটান। অনেকে আবার সরাসরি মোটেল রুম ভাড়া করে একান্ত সময় কাটান। মোটেলের কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই চলে এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড।

পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে পর্যটন মোটেলের এক কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এসময় জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া রুম ভাড়া নেওয়া যাবে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনার এনআইডি দিলেই চলবে। মেয়েরটা ম্যানেজ করে নেবো।’

কীভাবে ম্যানেজ করবেন জানতে চাইলে ওই কর্মচারী বলেন, ‘আগের যেকোনো একটা দিয়ে চালিয়ে দেবো। আপনি আসেন। শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে পর্যটন মোটেল সিলেটের ব্যবস্থাপক কাজী ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে আমাদের এখানে পর্যটক কম। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্ষগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু রুম সংস্কার করা হয়েছে। কনফারেন্স রুমও সংস্কার করা হচ্ছে। ফার্নিচারের অভাবে ভাড়া দেওয়া যাচ্ছে না।’

মোটেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ বৈধ কাগজপত্র দেখিয়ে রুম ভাড়া নিতে চাইলে আমরা তাকে ফিরিয়ে দিতে পারি না। তবে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো অনৈতিক কাজে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না।’

ইকোপার্ক প্রসঙ্গে কাজী ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে অনেকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। একজন নিরাপত্তাকর্মীও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বসার জায়াগায় বিভিন্ন সচেতনতামূলক কথা লেখা হয়েছে। জঙ্গলও পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না।’

এসআর/জেআইএম

Exit mobile version