Site icon Amra Moulvibazari

বাংলা ও বিশ্ব সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের রূপায়ণ

বাংলা ও বিশ্ব সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের রূপায়ণ


ফারজানা অনন্যা

সাহিত্য জাতির দর্পণস্বরূপ। সাহিত্যের মধ্যে প্রতিফলিত হয় একটি জাতির সামগ্রিক জীবনচিত্র। সমকালীন শিল্পমাধ্যম হিসেবে কথাসাহিত্যের অবস্থান নিঃসন্দেহে অগ্রগণ্য এবং স্বমহিমায় প্রোজ্জ্বল। ‘বাঙালি’ জাতি কিংবা ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের উদ্ভব ও বিবর্তনক্রমে সংশ্লিষ্ট ঘটনাসমূহ তাই স্বাভাবিকভাবেই স্থান পেয়েছে বাংলা সাহিত্যে। ‘বাংলা সাহিত্য’ ও ‘বাংলাদেশের সাহিত্য’ ধারণা দুটি আবার ভিন্ন ভিন্ন বিষয়সমূহকে ধারণ করে। বাংলাদেশের সাহিত্য বলতে দেশবিভাগোত্তর ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ের পূর্ববাংলার সাহিত্যকে বোঝালেও এর উত্থান ও বিস্তৃতির আলোকায়নের বীজ-উপ্ত ১৯৪৮ ও ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এমনকি বাংলা সাহিত্যের সীমানা পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বেদনাবহ মর্মস্পর্শী সুর মানবিক শিল্পীদের হাত ধরে ছড়িয়ে গিয়েছিল বিশ্ব সাহিত্যের পরতে পরতে।

বাঙালি জীবনের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা বৈপ্লবিক যুগান্তরের সম্ভাবনায় তাৎপর্যবহ ও সুদূরপ্রসারী। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যাপক আকারে উদ্ভাসিত। গল্প, কবিতা, ছড়া, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, স্মৃতিকথা, চলচ্চিত্র, গানসহ সব শাখায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিফলিত বাস্তব আলেখ্যে। মুক্তিযুদ্ধের চিত্র কীরূপে বাংলা সাহিত্যে স্থান পেয়েছে তার সূক্ষ্ম কোনো সীমারেখা নির্ধারণ করা না গেলেও মোটাদাগে কিছু বিষয় নির্বাচন করাই যায়। যেমন- মুক্তিযোদ্ধাদের সক্রিয় ভূমিকা ও আত্মত্যাগ, পাকিস্তানি হানাদারদের এ দেশীয় নিরীহ মানুষদের ওপর নির্যাতনের বিভীষিকাময় বিবরণ, নারী নির্যাতনের চিত্র, মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শরণার্থী শিবিরে বাঙালিদের অবস্থান ও মানবেতর জীবনচিত্র, রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের বিশ্বাসঘাতকতা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সাধারণ মানুষের মমত্ববোধ ও সহযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের জনগণের প্রতিক্রিয়া, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি- প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি প্রভৃতি।

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ঔপন্যাসিকদের সামনে খুলে দিয়েছিল অসংখ্য দরজা, বিস্তর উপাদান, বিষয় ও পটভূমি নির্মাণের অজস্র ক্ষেত্র, অভিনব ঘটনা ও বিচিত্র চরিত্রের খোঁজ। স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিকায় আমরা যে কয়টি উপন্যাস পেয়েছি, তার প্রায় সবকটিতেই আপাত মর্মন্তুদ ও যন্ত্রণাদীর্ণ প্রতিবেদন উপস্থিত। মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি নিয়ে রচিত উপন্যাসগুলোতে ঔপনিবেশিক তত্ত্ব উপস্থিত থাকায় পোস্টকলোনিয়াল দৃষ্টিকোণ থেকে উপন্যাসগুলো পাঠ ও বিচার করলে ‘সাহিত্যিক’ মর্যাদার পাশাপাশি প্রতিটি উপন্যাস ‘রাজনৈতিক’ ও ‘সামাজিক’ উপাদানের আধার হয়ে ওঠে।

‘রাইফেল রোটি আওরাত’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত প্রথম উপন্যাস। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস থেকে জুনের মধ্যকার সময়ে রচিত এটি। তবে উপন্যাসটির প্রকাশকাল ১৯৭৩ সাল। তাই প্রকাশকালের দিক থেকে এটি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম উপন্যাস না হলেও রচনাকালের দিক থেকে এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস। প্রকাশকালের দিক থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম উপন্যাসটি হলো ওপার বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘একটি কালো মেয়ের কথা’। ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ উপন্যাসটিকে অনেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিলও বলে থাকেন। উপন্যাসটির রচয়িতা শহীদ বুদ্ধিজীবী আনোয়ার পাশা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের নির্ভীক শিক্ষক ও বিদগ্ধ সাহিত্যিক। ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ উপন্যাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক সুদীপ্ত শাহীন চরিত্রের আড়ালে আনোয়ার পাশা নিজেকেই একেঁছেন। উপন্যাসের নায়ক সুদীপ্ত শাহীনই যেন বাংলাদেশ! সুদীপ্ত শাহীন ২৫ মার্চের কালোরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাকবাহিনীর বাঙালি নিধনযজ্ঞ ও বীভৎস হত্যাকাণ্ড দেখে শিউরে ওঠেন। দুটি ভয়াল মৃত্যুশীতল রাতে চোখের সামনে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. ফজলুল রহমান, ড. মুক্তাদির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের মধুদার নৃশংস হত্যাকাণ্ড তাঁকে স্থবির করে দেয়। তারপরও তিনি একটি জাতির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্যে বসে চিত্ত স্থির-অবিচল রেখে ভবিষ্যতের জন্য আশাতুর মনোভাব লিখে যাওয়ার এক অতিমানুষিক চেষ্টা করেছেন। উপন্যাসটিতে তিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখলেও বাস্তবে স্বাধীনতাকে দেখে যেতে পারেননি।

সুদীপ্ত শাহিন, মহীউদ্দিন ফিরোজ, মীনাক্ষী নাজমা, গাজী মাসউদ-উর রহমান, বুলা, জামাল আহমেদ উপন্যাসটির অসংখ্য চরিত্রের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন দেশের ক্রান্তিলগ্নে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মনস্তত্ব। তিনি দেখেছেন সুশীল প্রগতিশীলতার আড়ালে অনেকের পাকিস্তানপন্থী মনোভাব, আবার অনেককে দেখেছেন নিভৃতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতে। দেখেছেন সাধারণ মানুষের অবরুদ্ধকর জীবন-যাপন, যার অংশ ছিলেন তিনি নিজেও। তবে উপন্যাসটিতে তিনি চরিত্রের ক্রমবিকাশকে খানিকটা অবহেলা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার গণহত্যার বিবরণ, প্রায় জনমানবশূন্য ঢাকায় প্রিয়জনদের তালাশ, গ্রামান্তরে পালিয়ে থাকার যন্ত্রণা, মুক্তিযুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে তর্ক, এসব বাস্তব আলেখ্য শুধু সাহিত্য নয় বরং ইতিহাসেরও অমূল্য উপাদান। যে বাংলাদেশ বিপন্ন ও ভীত কিন্তু আশাহীন নয়, সেই বাংলাদেশের কথা বলেছেন তিনি তাঁর কলমে! উপন্যাসের নায়ক সুদীপ্ত শাহীন আত্মদ্বৈরথ কাটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে পেরেছেন, দিন গুনতে পেরেছেন বিজয়ের প্রতীক্ষায়। স্বাধীনতা সূর্যের প্রতীক্ষায় বিবৃত তাঁর কথামালায় উদ্ভাসিত সে আশার বাণী, ‘আহা তাই সত্য হোক। নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভাত। সে আর কতো দূরে। বেশি দূরে হতে পারে না। মাত্র এই রাতটুকু তো! মা ভৈঃ কেটে যাবে।’

আনোয়ার পাশার ‘রাইফেল রোটি আওরাত’, শওকত ওসমানের ‘জাহান্নম হইতে বিদায়’ এবং শওকত আলীর ‘যাত্রা’- এই তিনটি উপন্যাসে খুব আশ্চর্যজনকভাবে একটি ঐক্য খুঁজে পাওয়া যায়। সেটি হচ্ছে এই তিনটি উপন্যাসের বিষয়, পরিবেশ এবং চরিত্রগত মিল। ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ উপন্যাসের সুদীপ্ত শাহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অনেকটা যেন আনোয়ার পাশারই প্রতিমূর্তি। ‘যাত্রা’ উপন্যাসের অধ্যাপক রায়হানও যেন শওকত আলীর ব্যক্তিজীবনের প্রতিরূপ। এমনকি ‘জাহান্নম হইতে বিদায়’ উপন্যাসের পৌঢ় শিক্ষক গাজী রহমান শওকত ওসমানেরই আরেক প্রতিমূর্তি! তিনটি উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের মধ্যেই বাঙালি মধ্যবিত্তসুলভ আত্মরক্ষা ও আত্মোন্নতির প্রবণতা লক্ষ্যণীয়।

১৯৭৬ সালে প্রকাশিত ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রচিত একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কালের যশোরের কালীগঞ্জে এক মায়ের সত্য ঘটনা অবলম্বনে তিনি উপন্যাসটি রচনা করেন। উপন্যাসটির নামকরণেও রয়েছে চমৎকার প্রতীকী ব্যঞ্জনা। ‘হাঙর’, ‘নদী’ আর ‘গ্রেনেড’ এই তিনটি শব্দ তিন ভিন্ন ভিন্ন বিষয়কে নির্দেশ করে। আবহমানকাল ধরে বয়ে চলা শান্ত নদী মাতৃক বাংলাদেশে পাকিস্তানি দোসররূপ হাঙরের অবস্থান, সাধারণ মানুষকে ক্ষতবিক্ষত করা এবং হাঙরের অত্যাচার থেকে বাঁচতে গ্রেনেডের আঘাতে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা হাঙর বিতারণ প্রচেষ্টা! আর রচিত হয় মুক্তিযুদ্ধে মা জাতির গৌরবময় ইতিহাস।

মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি মহাকাব্যিক দলিল জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘জোছনা ও জননীর গল্প’। উপন্যাসটিতে আছে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা, রাজাকারদের বর্বরতা, জ্বালাও পোড়াও, হত্যা, লুটপাট। ২৫ মার্চের কালোরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীনিবাসগুলোতে পাকহানাদারদের নির্মম অকথ্য অত্যাচারের বাস্তব ভাষ্য। শরণার্থী শিবিরে আসমানী ও অন্যান্যদের মানবেতর জীবনচিত্র। একই সঙ্গে এ দেশের নিয়মিত ও সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের বিস্ময়কর বীরত্ব ও আত্মত্যাগ। মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রধান ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান চরিত্রটি উপন্যাসের বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মতো বেদনাবহ সংগ্রামময় অধ্যায় বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে আর ছিল না। এ সংগ্রামের প্রায় সবটুকু একাকার হয়ে আছে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসে। এ ছাড়া গল্পনির্ভর ভঙ্গিতে মুন্সিয়ানার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’ (১৯৭৪), ‘সৌরভ’ (১৯৭৮), ‘আগুনের পরশমণি’ (১৯৮৬), ‘অনিল বাগচীর একদিন’ (১৯৯২), ‘১৯৭১’ (১৯৯৩), ‘দেয়াল’ (২০১৩) ইত্যাদিও বিশেষ মনোযোগ দাবি করে। বিশেষ করে ‘শ্যামল ছায়া’য় মুক্তিযুদ্ধকালীন ঢাকা শহরের শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ ও বিধ্বস্ত মানুষের মর্মন্তুদ আহাজারি প্রাধান্য পায় শৈল্পিকভাবে।

১৯৭৮ সালে প্রকাশিত রিজিয়া রহমানের ‘রক্তের অক্ষর’ উপন্যাসে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। যেখানে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাক সেনা কর্তৃক ধর্ষিত নারীরা পরবর্তী সময় বীরাঙ্গনায় ভূষিত হলেও তা সম্মানের পরিবর্তে প্রবঞ্চনা ও উপহাসের মাদুলি হয়ে ওঠে। এসব ঘটনা তাদের অনেককে অন্ধকার জীবনের দিকে ঠেলে দেয়। গণিকালয়ের সবিস্তার বর্ণনা, দরিদ্রতা ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতন এবং লাঞ্ছনার কারণে তাদের কাউকে কাউকে করুণ মৃত্যুও মেনে নিতে হয়। একই সঙ্গে বিকৃত রুচির পুরুষদের অন্ধ লালসায় শিকারের ছবিগুলো চিত্রিত হয়েছে উপন্যাসের ছত্রে ছত্রে।

সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ মুক্তিযুদ্ধের ব্যতিক্রমধর্মী উপন্যাস। উপন্যাসে সৈয়দ শামসুল হক চূড়ান্ত বিজয়ের রচনা করেননি। তিনি তুলে ধরেছেন চলমান ভয়াবহতা। তা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, যখন পড়তে পড়তেই পাঠক হঠাৎ বুঝেছে তারা যার সঙ্গে যাত্রা করতে চলেছেন, তিনি একজন নারী। যার নাম বিলকিস। যে নারী নিজের অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন। এ ছাড়া রশীদ করীমের ‘আমার যত গ্লানি’ (১৯৭৩), মাহমুদুল হকের ‘জীবন আমার বোন’ (১৯৭৬), রশীদ হায়দারের ‘খাঁচায়’ (১৯৭৫), ‘অন্ধকথামালা’ (১৯৮৬), সৈয়দ শামসুল হকের ‘নীল দংশন’ (১৯৮১), শহীদুল জহিরের ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ (১৯৮৮), শওকত ওসমানের ‘নেকড়ে অরণ্য’ (১৯৭৩), ‘দুই সৈনিক’ (১৯৭৩), ‘জলাংগী’ (১৯৭৪), সেলিনা হোসেনের ‘যুদ্ধ’ (১৯৯৮), আমজাদ হোসেনের ‘অবেলায় অসময়’ (১৯৮৬), আনিসুল হকের ‘মা’ (২০০৩), তাহমিনা আনামের ‘এ গোল্ডেন এজ’ (২০০৭) উপন্যাসগুলোতে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি বহুবঙ্কিম রঙে চিত্রিত হয়েছে। যা বাংলা সাহিত্যের উপন্যাসের ধারাকে করেছে সমৃদ্ধ ও বাস্তবধর্মী।

বাংলাদেশের ছোটগল্পের ধারার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প রচনা করেছেন অসংখ্য গল্পকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্পগুলোর মধ্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পগুলো হয়ে উঠেছে অনন্য ও অনতিক্রম্য। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পগুলোতে মুক্তিযুদ্ধ দুই রূপে উঠে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ রূপ এবং মুক্তিযুদ্ধের পরোক্ষ রূপ। ‘রেইনকোট’ এবং ‘অপঘাত’ গল্প দুটিতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের অসম সাহসিকতা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা, মুক্তিযুদ্ধ কীভাবে ভীরু মানুষের মাঝেও শক্তির সঞ্চার ঘটিয়েছে ইত্যাদি বিষয়গুলো শৈল্পিক ভাষা ও ভঙ্গিমায় উপস্থাপিত হয়েছে। ‘প্রতিশোধ’, ‘মিলির হাতে স্টেনগান’, ‘খোঁয়ারি’, ‘জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল’ ইত্যাদি গল্পে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বপ্নভঙ্গ ও রূঢ় বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়েছে তীব্র ভাষায়।

বাংলাদেশের সাহিত্যে গল্প সাহিত্য শাখাটিতে সম্পাদনাধর্মী গ্রন্থের আধিক্য রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম গল্পসংকলন প্রকাশ করেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ‘বাংলাদেশ কথা কয়’ (১৯৭১) শিরোনামে। এটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। পরে অবশ্য এটির বাংলাদেশে সংস্করণ করা হয়। এ ছাড়া রয়েছে শওকত ওসমান ও শামীমা হাসিন সম্পাদিত ‘প্রতিবিম্বে প্রতিদ্বন্দ্বী’ (১৯৮১), আবুল হাসানাত সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’ (১৯৮৩), হারুন হাবীব সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত গল্প’ (১৯৮৫) প্রভৃতি। আমাদের গল্পকারদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে রচনা করেছেন একক গল্পগ্রন্থ। এদের মধ্যে শওকত ওসমানের ‘জন্ম যদি তব বঙ্গে’ (১৯৭৫), বশীর আল হেলালের ‘প্রথম কৃষ্ণচূড়া’ (১৯৭২), আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘আমার রক্ত, স্বপ্ন আমার’ (১৯৭৫), হাসান আজিজুল হকের ‘নামহীন গোত্রহীন’ (১৯৭৫), রাজেন ঠাকুরের ‘তীর্থযাত্রা’ (১৯৭৭), সাদেকা শফিউল্লাহর ‘যুদ্ধ অবশেষে’ (১৯৮৩) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

হাসান আজিজুল হকের ‘ভূষণের একদিন’, জহির রায়হানের ‘সময়ের প্রয়োজনে’, শওকত আলীর ‘পুনর্বার বেয়নেট’, মাহমুদুল হকের ‘বেওয়ারিশ লাশ’, রাহাত খানের ‘মধ্যিখানে চর’, সেলিনা হোসেনের ‘আমিনা ও মদিনার গল্প’, আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘ব্ল্যাক আউট’, শাহরিয়ার কবিরের ‘একাত্তরের যীশু’, শহীদুল জহিরের ‘কাঁটা’, রিজিয়া রহমানের ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার গল্প’, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘গ্লানি’, শাহাদুজ্জামানের ‘অগল্প’, সুব্রত বড়ুয়ার ‘নির্বাসনে একজন’ একেকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ইতিহাস কিংবা স্বদেশপ্রেমের মূল্য বিচারে অমূল্য সাহিত্য সম্পদ। তবে মুক্তিযুদ্ধের গল্পে একটি বিশেষ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, সেটা হচ্ছে আমাদের গল্পকারেরা মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সংগ্রামের চিহ্ন এবং সম্মুখযুদ্ধের অভিজ্ঞতা কম এনেছেন বর্ণনায়। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ের মুক্তিযুদ্ধোদ্ধাদের হতাশা, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পালাবদল গল্পের বিষয় হলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উলঙ্গসত্যরূপে প্রকাশিত হয়নি গল্পশব্দগুচ্ছে!

বাংলাদেশের সাহিত্যে ‘মুক্তিযুদ্ধের নাটক’ এক জ্বলন্ত চেতনার অগ্নিসংযোজক অধ্যায়! স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও বিকশিত সাহিত্য শাখা হচ্ছে নাটক। আবহমানকাল ধরে নাটক বরাবরই আমাদের প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধ অনুষঙ্গটিও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের অম্লান চেতনা এবং অনির্বাণ প্রেরণার উৎস হিসেবে বাংলাদেশের নাট্যকারেরা মুক্তিযুদ্ধের নাটক রচনা করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ (১৯৭৬), ‘যুদ্ধ এবং যুদ্ধ’ (১৯৮৭), মমতাজউদ্দীন আহমদের ‘কী চাহ শঙ্খচিল’ (১৯৮৫), ‘বর্ণচোর’ (১৯৭২), ‘বকুলপুরের স্বাধীনতা’, ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ (১৯৭১), আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘নরকের লাল গোলাপ’ (১৯৭৪), নীলিমা ইব্রাহিমের ‘যে অরণ্যে আলো নেই’ (১৯৭৪), কল্যাণমিত্রের ‘জল্লাদের দরবার’ (১৯৭২), মান্নান হীরার ‘একাত্তরের রাজকন্যা ও ফেরারী নিশান’ (১৯৯৬), শান্তনু বিশ্বাসের ‘ইনফরমার’ (২০০২), দীপক চৌধুরীর ‘একাত্তরের শকুন’ (২০০২), আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘পলাশি থেকে ধানমন্ডি’ ইত্যাদি।

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতিকথা, প্রবন্ধ ও সাক্ষাৎকারমূলক গ্রন্থের মধ্যে এম আর আখতার মুকুলের ‘আমি বিজয় দেখেছি’, জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’, সুফিয়া কামালের ‘একাত্তরের ডায়েরী’, ড. নীলিমা ইব্রাহিমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’, অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের ‘বাংলাদেশ: অ্যা লিগাসি অব ব্লাড’, ‘দ্য রেপ অব বাংলাদেশ’, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘ইতিহাসের রক্ত পলাশ’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্যে কবিতার একক রাজত্ব! মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবচেয়ে বেশি স্পন্দিত করেছে কবিতা শিল্পকে। বাংলাদেশের কবিগোষ্ঠীর কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিলো স্পষ্ট। ফলে কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলন ঘটেছে নানাভাবে। কখনো সরাসরি মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে রচিত হয়েছে কবিতা, কখনো মৃত্যুশাসিত ভয়াল দিনরাত্রির কথা, হত্যা, লুণ্ঠন, নারী, শিশু ও নিরপরাধ বাঙালিদের ওপর হানাদারবাহিনীর নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা, হানাদারদের প্রতি ঘৃণা উচ্চারিত হয়েছে কবিতায়। মুক্তিযুদ্ধোত্তর স্বাধীনতা বিরোধীদের উত্থান ও প্রতিশোধ সংগ্রামের চিত্রও উপস্থাপিত হয়েছে জীবন্তভাবে।

কবি সিকান্দার আবু জাফরের ‘বাংলা ছাড়ো’ অথবা তাঁর ‘সংগ্রাম চলবেই’ কবিতার ইস্পাতসম শাব্দিক আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে কী লাগে আর! রাজনীতি সচেতন শামসুর রাহমানের কবিতায় বাঙালির সমকালীন জাতীয় জীবনের প্রতিটি সংকটময় মুহূর্ত মূর্ত হয়ে উঠেছে। ‘বন্দী শিবির থেকে’ কবিতায় কবি স্বাধীন দেশের কবিদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন তাঁর অবরুদ্ধকর নগরীর গল্প। নারীদের ওপর ভয়াবহ বিভীষিকাময় নির্যাতন চিত্রের খসড়া পাওয়া যায় হাসান হাফিজুর রহমানের ‘বীরাঙ্গনা’ কবিতায়। মুক্তিযুদ্ধের আহ্বানে শব্দসৈনিক হেলাল হাফিজ তাঁর ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ শিরোনামে লিখেছেন, ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ কবি রফিক আজাদ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার কোনো বিকল্প নেই বলে উচ্চারণ করেছেন তাঁর ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার আত্মসমর্পণ’ কবিতায়।

মুক্তিযুদ্ধের সময়েই শুধু নয়, যুদ্ধোত্তর সময়েও আমাদের সমস্ত নবীন-প্রবীণ কবিদের ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি বড় বেশি আলোড়িত করেছে। ‘স্বাধীনতা’ শব্দটিকে নিয়ে, স্বাধীনতাকে উপলক্ষ করে গত চার দশকে অসংখ্য কবিতা রচনা করেছেন কবিরা। নির্মলেন্দু গুণ রচিত ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতায় স্বাধীনতাকে শব্দটি তেজের সাথে পরিচয় করান আমাদের। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বাংলা কবিতায় কিছু নির্দিষ্ট অনুষঙ্গ ও শব্দ এসেছে, যা একান্তভাবে মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার। যেমন বন্দুক, রাইফেল, বুলেট, বেয়োনেট, ট্রিগার, মর্টার, মাইন, অ্যাম্বুশ, ঘেরাও, গেরিলা, হানাদার, বারুদ, রাজাকার, ক্যামোফ্লাজ ইত্যাদি। উপমা, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প, রূপক ইত্যাদি নির্মাণেও মুক্তিযুদ্ধের বিচিত্র অনুষঙ্গ ব্যবহৃত হয়েছে নানা ভঙ্গিমায়। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ দুঃস্বপ্ন, সাহস ও বিক্রমের নতুন মাত্রার শিল্পিত বিবরণ, গৌরব ও আত্মদানের ফলাফল, যুদ্ধবিজয়ের বহুমুখী বর্ণনা প্রকাশিত হয়েছে বাংলা কবিতায়। মুক্তিযুদ্ধের কবিতা এ দেশের কাব্যধারায় স্বতন্ত্র ও যথার্থ কণ্ঠধ্বনির আপসহীন কাব্য নিদর্শন। কবিতাগুলোয় মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ, অনুষঙ্গ, ঐতিহাসিক ভিত্তিতে স্বকীয় সত্তায় গৌরবময় মহীয়ান হয়ে আছে।

বাংলাদেশের ছড়াসাহিত্যে আমাদের ছড়াকাররা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে গ্রন্থিত করেছেন অসাধারণ শব্দ ও ছন্দ কুশলতায়। ২৫ মার্চ কালোরাত্রির নির্মম হত্যাযজ্ঞ থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পোড়ানো, বুদ্ধিজীবী হত্যার পৈশাচিক বর্ণনা, বিজয়ের আনন্দ প্রভৃতি জীবন্তভাবে শাব্দিক কুশলতায় উঠে এসেছে প্রাঞ্জল ভাব ও ভঙ্গিমায়। আসাদ চৌধুরী, লুৎফর রহমান রিটন, সুজন বড়ুয়া, আমীরুল ইসলাম, আলী ইমাম, সুকুমার বড়ুয়া, আইউব সৈয়দ প্রমুখ ছড়াকার মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক চালচিত্র তাঁদের ছড়ার ছন্দের জাদুতে করেছেন জীবন্ত। মুক্তিযুদ্ধের বহুমাত্রিক প্রসঙ্গ ও শিল্পমাত্রাকে অবলম্বন করে বাংলা ছড়াসাহিত্য সমৃদ্ধ হয়ে চলেছে।

বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকার জীবন্ত বর্ণনা উঠে এসেছে ভিনদেশীয় কবি ও সংগীতজ্ঞদের কবিতা এবং গানে। হাতে যন্ত্রসংগীত, কণ্ঠে মানবতার গীত–এ নিয়ে ‘প্রতিবাদী যুদ্ধে’ সংঘবদ্ধ হন বিদেশি শিল্পী বন্ধুরা।

বাংলাদেশের পরম বন্ধু ছিলেন মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তাঁর কবিবন্ধু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থী বাঙালিদের দেখতে আসেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন নিজ চোখে বাঙালিদের মানবেতর জীবন ও দুর্দশা দেখে লিখে ফেলেন বিখ্যাত কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’।

১৯৭১ সালের ১ অগাস্ট নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে অনুষ্ঠিত চ্যারিটি কনসার্ট ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ ইতিহাসের অনবদ্য অংশ হয়ে থাকবে চিরকাল। পণ্ডিত রবিশঙ্করের প্রচেষ্টায় ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাঙালি শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক সচেতনতা এবং তহবিল ত্রাণ প্রচেষ্টা বাড়াতে সাহায্যের উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়েছিল কনসার্টটির। এ কনসার্টের প্রধান সংগঠক প্রাক্তন বিটলস্ তরুণ গায়ক জর্জ হ্যারিসনের ‘বাংলা দেশ’ গানটি ছিল অনুষ্ঠানের শিরোনাম গান। সংগীতশিল্পী জোয়ান বায়েজ ষাটের দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠ। বাংলাদেশের যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার চিত্র তুলে ধরে বাঁধেন ‘The Story of Bangladesh’ গান। গানটি পরে তাঁর অ্যালবামে ‘Song of Bangladesh’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এই গানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুমন্ত ছাত্রদের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শিল্পীদের আবেদনময়তা আমাদের এই বার্তাটি স্মরণ করায় যে, দেশ-কাল-জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা মানুষ। মানবিক মানুষ মাত্রই নির্মমতা ও বিভীষিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। পৃথিবীর শিল্পীরা সব বিভেদের সীমারেখা মুছে মানবতার জয়গান গেয়েছেন অপামর নিরীহ বাঙালির পক্ষে। তাই বিশ্বসাহিত্যেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুভ্র-শুদ্ধরূপে বিম্বিত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাহিত্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভৌগোলিক সীমানা মুছে ভাষা, ছন্দ, অলংকারের কাছে হার মেনে মানবিকতার সুরে মিশে গিয়েছে একাকার হয়ে। কথাসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমাদের আলোর মশাল স্বরূপ হয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বাংলা কথাসাহিত্যে অপ্রতিরোধ্য অনির্বাণ হয়ে তার দ্যুতি ছড়াচ্ছে বহুকাল ধরে।

এসইউ/জেআইএম

Exit mobile version