Site icon Amra Moulvibazari

প্রিলি-লিখিতের প্রশ্ন জমা দিতে ‘কড়াকড়ি’, মিশ্র প্রতিক্রিয়া

প্রিলি-লিখিতের প্রশ্ন জমা দিতে ‘কড়াকড়ি’, মিশ্র প্রতিক্রিয়া


বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার পর প্রশ্নপত্র সঙ্গে নিয়েই বের হতে পারতেন প্রার্থীরা। এবার সেই নিয়মে পরিবর্তন এনেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র উত্তরপত্রের সঙ্গে জমা দিয়ে পরীক্ষা কক্ষ ছাড়তে হবে প্রার্থীদের।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পিএসসি। এতে প্রশ্নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পিএসসির কর্মকর্তারা বলছেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জমা নিয়ে নিলে তাতে প্রার্থীর কোনো ক্ষতি হবে না। প্রশ্নপত্র বাইরে ছড়িয়ে পড়লে পরীক্ষা-পরবর্তী সময়ে জালিয়াত-চক্র নানাভাবে কারসাজি করার চেষ্টা করে। সেটা রুখতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন কমিশন। তবে চাকরিপ্রার্থী ও সংশ্লিষ্টরা নতুন এ নিয়ম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

অনেকে বলছেন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য প্রশ্নপত্র জমা নিয়ে নেওয়াটা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বরং এ ধরনের কঠোর বিধিনিষেধ প্রার্থীদের মনে সন্দেহ-সংশয়ের উদ্রেক করবে। অনেকে আবার এটিকে ভালো সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেছেন।

পিএসসির প্রকাশিত ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির ১৮.৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রিলিমিনারি টেস্টের প্রশ্নপত্র উত্তরপত্রের সঙ্গে জমা দিয়ে দিতে হবে।’ তাছাড়া ১৮.৩ ধারায় বলা হয়, ‘প্রিলিমিনারি টেস্টের এমসিকিউ উত্তরপত্র একটি গোপনীয় দলিল। এটি কোনো প্রার্থী বা তার প্রতিনিধিকে কোনোভাবে প্রদর্শন করা হবে না। প্রিলিমিনারি টেস্টের নম্বর কোনো প্রার্থী বা তার প্রতিনিধিকে প্রদর্শন বা প্রদান করা হবে না। তাছাড়া প্রিলিমিনারি টেস্টের উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ বা পুনঃনিরীক্ষণের সুযোগও থাকবে না।’

বিজ্ঞপ্তির ২৬ ধারায় লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও জমা দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। ২৬.৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র উত্তরপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। লিখিত পরীক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশাবলি পরবর্তী সময়ে কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।’

বিষয়টিকে ‘সন্দেহজনক’ উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন চাকরি তথা বিসিএসের প্রস্তুতি বিষয়ক একটি কোচিংয়ে কর্মরত শিক্ষক এস এম আতিক। নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘প্রত্যাশা করেছিলাম আরও স্বচ্ছতা। কিন্তু প্রশ্নই নাকি নিয়ে নেবে উত্তরপত্রের সঙ্গে। ফলে প্রশ্ন জাগছে অনেক। কেন জানি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে সব।’

পোস্টে তিনি দুটি জোরালো দাবিও তুলেছেন। তার ভাষায় সেগুলো হলো- ‘রেজাল্টের সঙ্গেই দেওয়া হোক সমাধানসহ প্রশ্ন’। আর ‘সাথে কাট মার্কসও বলে দেওয়া হোক’।

প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নেওয়ার সিদ্ধান্তে কী এমন স্বচ্ছতা আসবে, তা বোধগম্য নয় জানিয়েছেন একাধিক প্রার্থীও। তাদের অভিযোগ, এতে উল্টো প্রার্থীদের মধ্যে সংশয় বাড়বে। ফলাফলে অসন্তোষ ও সন্দেহের তৈরি হবে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করা রবিউল আলম এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রশ্নপত্র বাইরে নিয়ে যাওয়ার তো কোনো কারণ নেই। পরীক্ষা দেওয়ার পর এ দিয়ে আর কোনো কাজ নেই। তবে হ্যাঁ, এগুলো যেন কেউই আর বাইরে না আনতে পারে।’

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ এ প্রার্থীর ভাষ্যমতে, ‘কোচিং-সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন না পেলে ব্যবসা করতে পারবেন না। তাদের এ রিলেটেড (সম্পর্কিত) বড় ব্যবসা আছে। মডেল টেস্ট, নমুনা প্রশ্নের বই ছাপিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। সেজন্য তারা অনেকে বিরোধিতা করতে পারে। আমি বলবো- যদি প্রার্থী প্রশ্ন নিয়ে বের হতে না পারে, তাহলে কেউই যেন সেই প্রশ্ন বাইরে আনতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। কোনো বিগত বছরের প্রশ্ন-সমগ্র নামে কেউ যেন বই বানিয়ে বেচতে না পারে, সেটা কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে।’

বিষয়টি নিয়ে পিএসসির চেয়ারম্যানসহ একাধিক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পরীক্ষা শাখার কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

তারা জানান, জালিয়াত-চক্র এবং প্রশ্নফাঁসসহ নানা অনিয়ম রুখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ম কঠোরভাবে মানা হবে বলেও কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা হুঁশিয়ার করেছেন বলে উল্লেখ করেন তারা।

এএএইচ/এমএইচআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version