Site icon Amra Moulvibazari

সহজ করুন আর্থিক স্বাধীনতার পথ

সহজ করুন আর্থিক স্বাধীনতার পথ


যেকোনো সাফল্যের প্রথম শর্ত হলো লক্ষ্য নির্ধারণ করা। আপনি যদি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া জীবন চালান, তাহলে সেই জীবন নির্দিষ্ট কোনো দিকে অগ্রসর হবে না। প্রখ্যাত অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক একবার বলেছিলেন, “আপনার তো কোনো লক্ষ্যই ছিল না, আপনি সফল হবেন কিভাবে?” তাই সফলতার পথে প্রথম পদক্ষেপ হলো একটি স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত লক্ষ্য ঠিক করা। আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করতে গেলে আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আর্থিক লক্ষ্য ছাড়া সঠিক পথে চলা প্রায় অসম্ভব।

আর্থিক লক্ষ্য কী?

আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ মানে হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে কত টাকা দরকার হবে এবং কীভাবে সেই টাকা অর্জন করবেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা করা। আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে
আপনি আপনার ভবিষ্যৎ জীবনকে সুনিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খল করতে পারেন। এটি হতে পারে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে, যেমন একটি নতুন টেলিভিশন কেনা, সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো, বা একটি বাড়ি তৈরি করা। ফিনান্সিয়াল টাইমস এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, “নির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্য থাকলে সঞ্চয়ের হার বৃদ্ধি পায় এবং আর্থিক লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়” ।

লক্ষ্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা

আমাদের জীবনে লক্ষ্যহীনভাবে চললে আমরা কোথাও পৌঁছাতে পারি না। আর্থিক লক্ষ্য সেটি যে কোনো কিছু হতে পারে—ছোট বা বড়। যেমন, ৫ বছর পরে আপনার সন্তানকে বিদেশে পাঠাতে চাইলে আজ থেকেই সেই পরিকল্পনা করা উচিত। আপনার আর্থিক লক্ষ্য যদি নির্দিষ্ট হয়, তাহলে তার জন্য কাজ করাও সহজ হয়ে যায়। যদি পাঁচ বছর পরে সন্তানকে বিদেশে পাঠাতে চান, তাহলে সেই সময়ের মধ্যে ৩০-৪০ লক্ষ টাকা জমানো প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ, প্রতিমাসে কত টাকা সঞ্চয় করতে হবে তা পরিকল্পনা করে নিতে হবে।

অর্থনৈতিক লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা অর্জনের জন্য সঠিক পরিকল্পনা করা জরুরি। জীবনের যাত্রাপথে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ আসবে, তবে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে সেই চ্যালেঞ্জগুলো সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ না করলে জীবনের বড় বড় খরচগুলোতে হঠাৎ করে চাপ সৃষ্টি হয়। তাই আজ থেকেই আপনার আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করুন।

এই পরিকল্পনাকে আরও সুনির্দিষ্ট করতে হবে, যাতে আপনার দৈনন্দিন জীবনে এটি বাস্তবায়ন করা যায়। অর্থাৎ, আর্থিক লক্ষ্যগুলো যেন বাস্তবসম্মত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ছোট ছোট আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করেন এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করেন, তারা দীর্ঘমেয়াদে সফল হন। ন্যাশনাল এন্ডাউমেন্ট ফর ফাইনান্সিয়াল এডুকেশন (NEFE) এর ২০১৯ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, “নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করলে ৮০% মানুষের সঞ্চয় অভ্যাসের উন্নতি ঘটে।”

আর্থিক লক্ষ্য তিন ধরনের হতে পারে: স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদী

আর্থিক লক্ষ্য সাধারণত তিন ধরনের হতে পারে: স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদী। স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য হলো এমন কিছু যা ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে অর্জন করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ৬ মাস পর একটি টেলিভিশন কিনতে চান এবং তার জন্য ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়, তাহলে মাসে ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় করলেই তা অর্জন করা যাবে।

মধ্যমেয়াদি লক্ষ্য সাধারণত ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে পূরণ করা হয়। যেমন, আপনি যদি ৩ থেকে ৫ বছর পরে একটি গাড়ি কিনতে চান, তাহলে সেই অনুযায়ী প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ সঞ্চয় করতে হবে। এতে আপনি আপনার মধ্যমেয়াদি আর্থিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলো ৫ বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ১০ বছর পরে আপনার সন্তানকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করেন, তাহলে আজ থেকেই সেই লক্ষ্যে সঞ্চয় শুরু করতে হবে।

একটি প্রবাদ আছে: “যখন আপনি আপনার লক্ষ্যটি লিখে ফেলেন, তখন সেটি বাস্তবায়নের পথে অনেকটা এগিয়ে যান।” আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করার পর তা লিখে রাখা জরুরি, যাতে ভুলে না যান এবং প্রতিদিনের পরিকল্পনার সাথে লক্ষ্যটি জড়িত থাকে। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, “লিখিত আর্থিক পরিকল্পনা থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা ৩২% বেড়ে যায়” (2020)।

কেন আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ?

আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে আপনি আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি জানেন পাঁচ বছর পরে আপনার সন্তানকে বিদেশে পাঠানোর জন্য কত টাকা প্রয়োজন, তাহলে এখন থেকেই পরিকল্পনা করে সঞ্চয় শুরু করতে পারেন। লক্ষ্য ছাড়া হঠাৎ করে বড় কোনো খরচ এলে আর্থিক চাপ সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে আপনার জীবনের মানকে প্রভাবিত করতে পারে।

এছাড়াও, আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করার সময় বর্তমান আয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে কিনা তা বুঝতে হবে। যেমন, ৫ বছরের মধ্যে একটি বাড়ি তৈরি করতে চাইলে সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য কতটা আয় এবং কতটা সঞ্চয় করতে হবে তা বুঝতে হবে। যদি আয়ের পরিমাণ কম হয়, তাহলে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ফোর্বস এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “নির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্য পূরণের জন্য বহুমুখী আয়ের উৎস তৈরি করা সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি” (2021)।

আর্থিক লক্ষ্য অর্জনের পদ্ধতি

আর্থিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনটি ধাপে কাজ করা উচিত:

প্রথমত, নিরিবিলি বসে চিন্তা করুন যে আপনার জীবনের লক্ষ্যগুলো কী। আপনার সন্তানদের শিক্ষার জন্য, নিজের বাড়ি তৈরি, বা ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করার জন্য কত টাকা প্রয়োজন হতে পারে তা হিসাব করুন।

দ্বিতীয়ত, সেই চিন্তাগুলো লিখে রাখুন। একটি খাতায় লিখে রাখুন কত টাকা, কত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন হবে এবং কীভাবে সেই টাকা জোগাড় করবেন।

তৃতীয়ত, লিখিত সেই লক্ষ্যগুলো ডায়েরিতে সংরক্ষণ করুন এবং নিয়মিত দেখুন যে আপনার সঞ্চয় এবং আয় সেই লক্ষ্য পূরণের পথে এগোচ্ছে কিনা।

আর্থিক স্বাধীনতার জন্য পরিকল্পনা করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এর গবেষণায় বলা হয়েছে, “যারা নিজেদের আর্থিক লক্ষ্য স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে তাদের মধ্যে ৭৫% মানুষ জীবনের শেষদিকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন” (2019)।

অর্থনৈতিক লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা অর্জনের জন্য সঠিক পরিকল্পনা করা জরুরি। জীবনের যাত্রাপথে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ আসবে, তবে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে সেই চ্যালেঞ্জগুলো সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ না করলে জীবনের বড় বড় খরচগুলোতে হঠাৎ করে চাপ সৃষ্টি হয়। তাই আজ থেকেই আপনার আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করুন। অর্থ সঞ্চয় এবং আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে আপনার লক্ষ্য পূরণের পথে এগিয়ে যান।

লেখক: দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট।

এইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version