Site icon Amra Moulvibazari

কথায় কথায় চলে নির্যাতন, খাবার চলে যায় কর্মকর্তাদের বাড়িতে

কথায় কথায় চলে নির্যাতন, খাবার চলে যায় কর্মকর্তাদের বাড়িতে


কুষ্টিয়া সরকারি শিশু পরিবারে (বালক) দিনের পর দিন চলেছে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চরম স্বেচ্ছাচারিতা। পান থেকে চুন খসলেই শিশুদের ওপর নেমে আসতো অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের খড়গ। শিশুদের জন্য সরকারি বরাদ্দের মাছ-মাংস চলে যেত কর্মকর্তাদের বাড়ি। প্রতিষ্ঠানের গাছে ধরা আম-কাঁঠালেও ছিল না তাদের অধিকার।

লোকচক্ষুর অন্তরালে এভাবেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছিলেন উপতত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামান ও সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন। সম্প্রতি সেখানকার এক শিশু নিখোঁজের পর আলোচনায় আসে নানা অনিয়ম। সমাজসেবা অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও অনিয়মের চিত্র উঠে আসায় তাদের বদলি করা হয়েছে।

এদিকে দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও শিশু পরিবার থেকে নিখোঁজ রাইয়ান হোসেন রিজভীর সন্ধান মেলেনি। রিজভী নিখোঁজের ঘটনায় অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান ও ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে।

কুষ্টিয়া সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ সেখ বলেন, আসাদুজ্জামান ও ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের বদলি করা হয়েছে। নিখোঁজ শিশুটির সন্ধান এখনো মেলেনি।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে শহরতলীর চৌড়হাসে অবস্থিত সরকারি শিশু পরিবারে গিয়ে দেখা যায়, শিশুরা স্কুলমাঠে খেলাধুলা করছে। তাদের সঙ্গে কথা হলে সবারই বক্তব্য ছিল, ‘এখন তারা ভালো আছে।’ তবে কেউ কেউ আতঙ্কে ছিল, তাদের স্যার আসাদুজ্জামান ও ইলিয়াস আবারো ফিরে এলে কী হবে!

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম জানায়, ‘এখন আমরা পেটভরে খাবার পাচ্ছি। স্যাররা খোঁজখবর রাখছেন। আমরা অনেক ভালো আছি। আর কোনো সমস্যা হয়নি।’

চতুর্থ শ্রেণির মানিক জানায়, ‘সকালে তাদের ভাত-ডাল-আলু ভর্তা এবং দুপুরে পাঙ্গাস মাছ, সবজি ও ডাল দিয়ে খেতে দেওয়া হয়।’

এর আগে শিশুদের অভিযোগ ছিল, দুই কেজি চাল বেশি দিলেই হয়তো তারা পেটভরে খেতে পারবে, কিন্তু তা কোনোদিনই দেওয়া হয়নি।

এদিন বেশ কয়েকজন শিশু (নিরাপত্তার জন্য নাম প্রকাশ করা হয়নি) জানায়, আগে তাদের ঠিকমতো খেতে দেওয়া হতো না। সপ্তাহে দুইদিন মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও একদিন দেওয়া হতো। এছাড়া মাছ দেওয়ার কথা থাকলেও খরচ বাঁচাতে দেওয়া হতো ডিম। এমনকি যেদিন মাংস রান্না হতো, সেদিন সবাইকে দুই-এক পিস দিয়ে বাকি খাবার স্যাররা বাড়িতে নিয়ে চলে যেতেন পরিবারের জন্য। এছাড়া কথায় কথায় তাদেরকে খুব মারধর করা হয়। বুকের ওপর পা দিয়ে পাড়া দেওয়া হয়। কিল-ঘুষি মারে, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে উপতত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে আছেন মো. আফসার আলী। তিনি বলেন, শিশু পরিবার বালকে সর্বমোট ৬১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের জন্য মাসিক সরকারি বরাদ্দ ৫ হাজার টাকা। এরমধ্যে কিছু টাকা পোশাক ও চিকিৎসা, বাকি টাকা খাবারের জন্য ব্যয় করা হয়।

আগে শিশুদের খাবার চুরি ও অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, আগে কিছু দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে বলে শুনেছি। তবে আমি আসার পর শিশুদের আর খাবার নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকার কথা না। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তাদের ভালো রাখার।

এর আগে ওই প্রতিষ্ঠানের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিজভী গত ২ নভেম্বর নিখোঁজ হয়। এরপর ৪ নভেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করে সমাজসেবা কর্তৃপক্ষ। ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

তখন শিশুরা অভিযোগ করে, তাদের কথায় কথায় মারধর করা হয়। কখনো পেটভরে খেতে দেওয়া হয় না। শহরতলীর চৌড়হাস এলাকার আবাসিক ভবন থেকে তিন কিলোমিটার দূরে হাউসিং এলাকায় ক্লাসরুমে ঝুঁকিপূর্ণ পথ দিয়ে হেঁটে যেতে হয়।

এক শিক্ষার্থী বলে, ‘এখানে আমাদের খুব মারধর করা হয়। দুই কেজি চাল বেশি রান্না করলে হয়তো আমরা পেটভরে খেতে পারতাম। তারা কখনোই আমাদের কথা শোনে না। এখনে এতো মানুষ, তবুও ভয় দেখাচ্ছে। আপনারা চলে গেলেই আমাদের চাবুক দিয়ে মারবে।’

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version