২০২৪ সালের আগস্টের বন্যার সময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছিল সম্পূর্ণ নবীন, তাই সরকার বন্যা দুর্গতদের পাশে সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি। এই বন্যার জন্য বিশ্ব মোড়লরা দায়ী থাকলেও বিশ্ববাসীও পাশে দাঁড়ায়নি। এসময় বন্যা দুর্গতদের জীবন বাঁচাতে ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে দেশের তরুণ সমাজ।
ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে জলবায়ুজনিত দুর্যোগ মোকাবিলা ও পানির ন্যায্যতা নিশ্চিতে তরুণদের সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই। তাই জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তরুণদের ‘পেইড ভলেন্টিয়ার’ হিসেবে যুক্ত করার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) আজারবাইজানের বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনের ‘ওয়াটার ফর ক্লাইমেট’ প্যাভিলিয়নে আয়োজিত সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে মিশন গ্রিন বাংলাদেশ (এমজিবি), ইয়ুথ প্লাটফর্ম ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (ওয়াইপিএসডি), বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (ন্যাকম) ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ।
ক্যাপসের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামারুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্ব ও তরুণ জলবায়ুকর্মী ফারিয়া অমির সঞ্চালনায় এই সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (ন্যাকম) নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মনজুরুল হান্নান খান, মূল প্রবন্ধে তিনি আগস্টের বন্যার ভয়াবহতা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও তরুণদের তৎপরতার চিত্র তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন:
সংলাপে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসাইন খান, ওয়াটারকিপার্স সেনেগালের সমন্বয়ক এম্ব্যাক স্যাক, ক্লাইমেট ফরোয়ার্ড পাকিস্তানের শিশু ও যুববিষয়ক উপদেষ্টামণ্ডলীর চেয়ারপারসন মাহনুর রশিদ, ইয়ুথ প্লাটফর্ম ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট-ওয়াইপিএসডির প্রধান সমন্বয়ক সাইদুল ইসলাম, জাতিসংঘ জলবায়ু কর্মসূচির পানি ও জলবায়ু গবেষক আসিফ ইকবাল, ওয়াটার এইডের প্রোগ্রাম অ্যান্ড পলিসি অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর পার্থ হেফাজ শেখ এবং মিশন গ্রীন বাংলাদেশের পরিচালক কেফায়েত শাকিল, আইক্যাড এর যুব প্রতিনিধি আল মামুন রাকিব ও ফুটস্টেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি শাহ রেফায়েত চৌধুরী।
এম জাকির হোসাইন খান তার বক্তব্যে বলেন, পানির ন্যায্যতা হলো জলবায়ু ন্যায্যতার একটি বড় অংশ। প্রকৃতি কেন্দ্রীক বৈশ্বিক শাসনের জন্য জাতীয় এবং আন্ত:সীমান্ত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা জরুরি। বিশেষ করে তরুণদের জন্য এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তরুণরাই পৃথিবীতে প্রকৃতিভিত্তিক উন্নয়নের পরিচালক।
ড. আহমেদ কামারুজ্জামান মজুমদার বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক পরিসরে যতই ক্ষতিপূরণ চাই না কেন, আমাদের মনঃস্তাত্তিক ক্ষয়ক্ষতি, পৈতৃক ঘর-বাড়ি হারানো, ধর্মীয় স্থাপনা হারানোর বেদনা আমরা কীভাবে কাভার করবো?
তাই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করার সময় মানসিক বিষয়গুলোও মাথায় রাখতে হবে। সেই সঙ্গে শুধু ক্ষতিপূরণের দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তরুণদেরকে জলবায়ু, পানির ন্যায্যতাসহ সব পরিবেশ সমস্যায় সম্পৃক্ত করা জরুরি।
এম্ব্যাক স্যাক বলেন, আমাদের সবারই উচিত তরুণদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ এবং পানি ন্যায্যতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করা। কারণ তারাই পৃথিবীর আগামী।
মাহনুর রশিদ বলেন, পাকিস্তানের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবকদের মতোই উত্তর পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বন্যায় দুর্যোগ মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এটি বার্তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাপী তরুণদের অবদানের ক্ষমতায়ন এবং স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাইদুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যা যখন দেশ ও বিশ্ব ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে তখন তরুণরা অগ্রণী ভূমিকা রেখে বন্যা মোকাবিলার মাধ্যমে স্পষ্ট করেছে যে, জলবায়ুজনিত দুর্যোগ মোকাবিলা ও পানির ন্যায্যতা নিশ্চিতে তরুণদের সম্পৃক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। তাই আমরা চাই জাতিসংঘের দেশগুলোর মাধ্যমে তরুণদের পেইড ভলেন্টিয়ার হিসেবে যুক্ত করুক এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিক।
আসিফ ইকবাল বলেন, জরুরি প্রতিক্রিয়ার জন্য দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সব প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সামগ্রীর অ্যাক্সেস রয়েছে তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য তাদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং এর জন্য সরকার তাদেরকে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, কর্মশালার সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে।
কেফায়েত শাকিল বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে ফেনীর বন্যার ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে তিনি নিজেই একজন। বন্যায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ক্ষতিপূরণ পাইনি, কবে পাবো জানিও না। আমি মনে করি তরুণরা আমাদের তাৎক্ষণক যে সহায়তা করেছে সেটিই আমাদের একমাত্র পাওয়া। তাই তরুণদের আরও সক্ষম করা, বিশেষ করে জল ও বায়ুর ন্যায্যতা নিশ্চিতে তরুণদের ক্ষমতায়ন প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
আরএএস/এসএনআর/জেআইএম