Site icon Amra Moulvibazari

এই প্রজন্মকে যেভাবে মূল্যায়ন করলেন রুনা লায়লা

এই প্রজন্মকে যেভাবে মূল্যায়ন করলেন রুনা লায়লা


কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার আজ জন্মদিন। কততম? সে প্রশ্ন অনেকের মনে। প্রতি বছর সেই প্রশ্নে শিল্পীর জবাব – ১৭। সতেরো নভেম্বর জন্ম বলে রসিকতাচ্ছলে তিনি ১৭ বলেন, তা নয়। শিল্পীদের বয়স নাকি ওরকম আটকে থাকে একটা নির্দিষ্ট বয়সে! এই প্রজন্মের তরুণদের সম্পর্কে মূল্যায়ন জানতে চেয়ে বয়স নিয়েও মজার সব কথা বললেন রুনা লায়লা।

কিংবদন্তিতুল্য রুনা লায়লা যখন সতেরো বছরের তরুণ, তখন ১৯৬৯ সাল। এই ভূখণ্ডে সেবারও ঘটে যায় এক গণঅভ্যুত্থান। আজ জন্মদিনের লগ্নেও অভূতপূর্ব এক গণঅভ্যুত্থানের সাক্ষী হয়েছেন এই শিল্পী। তবে তার তরুণ মনে জমেছে কিছুটা ধূলা। বয়স প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে তাই সহাস্যে তিনি বলেন, ‘বয়স কিছুটা বেড়েছে। এখন আমি ২৭।’ এই যে অল্প সময়ের ব্যবধানে বয়স দশ বছর বেড়ে গেল, কীভাবে?

সেসব পরে জানানো যাবে। আগে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাক রুনা লায়লার ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। ভারতীয় উপমাহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী তিনি। বাংলা তো বটেই, উর্দু, হিন্দি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, বালুচ, পশতু, ফারসি, আরবি, স্প্যানিশ, ফরাসি, ইংরেজি ভাষাসহ ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন তিনি। ‘কখন বাজে বারোটা’, ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘বন্ধু তিন দিন’, ‘কাল তো ছিলাম ভালো’ গানগুলো নব্বইয়ের দশকে ছিল ‘ভাইরাল’ গান। তার কণ্ঠেই ‘দামাদাম মাস্ত কালান্দার’ আমাদের কানে পৌঁছেছিল। সেই শিল্পীর আজ ৭২তম জন্মদিন। রসিকতা করে সংখ্যাটি উল্টে তিনি আমাদের বললেন, ‘বয়স কিছুটা বেড়েছে। এখন আমি ২৭।’

কীভাবে কাটাবেন আজ দিনটা? জানতে চাইলে জাগো নিউজকে এই শিল্পী বলেন, ‘বাসায় পারিবারিক আয়োজনে সবার সঙ্গে কাটাব। জন্মদিন বলে বাড়তি তেমন কোনো আয়োজন নেই।’

তবে কিংবদন্তিতুল্য রুনা লায়লার জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজন রেখেছে গণমাধ্যম। প্রতি বছরের মতো আজও বিভিন্ন চ্যানেলে তাকে ঘিরে নানান অনুষ্ঠান থাকবে। আর স্বশরীরে তিনি গিয়ে হাজির হবেন চ্যানেল আইতে। গান শোনাবেন, চারণ করবেন সংগীতজীবনের নানান স্মৃতি। তাকে শোনা যাবে বেতারেও। বাংলাদেশ বেতার আজ তাকে নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। একজন শিল্পীর জীবনে আর কী চাওয়া থাকতে পারে?

এই প্রশ্নটি করলে রুনা লায়লা জাগো নিউজকে জবাব দেন, ‘সংগীতজীবন নিয়ে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। কোনো কিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশাও নেই। শ্রোতা ও অনুরাগীদের যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তাতেই আমার জীবন পূর্ণ।’

নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের উদ্দেশে পরামর্শ চাইলে রুনা লায়লা বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই প্রজন্মের সব শিল্পীই খুব মেধাবী। তবে ওদের একটু সুযোগ দরকার। একটু সুযোগ পেলেই তারা অনেক কিছু করতে পারবে, আমার বিশ্বাস। সেই সঙ্গে আরও বলবো, সুযোগ পেতে হলে ওদের পরিশ্রমও করতে হবে। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো সুযোগটাও তৈরি করে দিতে হবে। আমার সামর্থ্যে যতটা সম্ভব, ওদের এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। কেউ আমার কাছে কোনো পরামর্শ চাইতে এলে, আমি তাকে সময় দিই, দিকনির্দেশনা দিই।’

কণ্ঠশিল্পী হিসেবে দেশে-বিদেশের সংগীতপ্রেমীদের কাছে পরিচিতি পেলেও শৈশবে প্রথম নাচ শিখেছিলেন রুনা লায়লা। বাবা এমদাদ আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। থাকতেন পাকিস্তানের করাচিতে। মা আমিনা লায়লা ছোট্ট রুনাকে ভর্তি করান বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসে। চার বছর সেখানে নাচ শিখেছেন রুনা লায়লা। কিন্তু নৃত্যশিল্পী না হয়ে তিনি হলেন বাংলা গানের অন্যতম সেরা কণ্ঠশিল্পী।

মনে করিয়ে দেওয়া যাক তার কৈশোরের কথা। মাত্র ১২ বছর বয়সে লাহোর থেকে একটি সিনেমায় গান গাওয়ার প্রস্তাব পান তিনি। কিন্তু বাবা সম্মতি দেননি। গান গাওয়া নিয়ে কোনো আপত্তি ছিল না, কিন্তু চলচ্চিত্রের ব্যাপারে তখন অনেকেরই ছিল নেতিবাচক ধারণা। অনেক কষ্টে বাবাকে রাজি করান রুনার মা। সিনেমার নাম ‘জুগনু’। ১৯৬৫ সালের ওই উর্দু ছবিতে রুনা গাইলেন ‘গুড়িয়া সি মুন্নি মেরি’ গানটি।

পাকিস্তান রেডিওর ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে রুনা লায়লা প্রথম বাংলা গান রেকর্ডিং করেন। দেবু ভট্টাচার্যের সুর করা গান দুটি ছিল ‘নোটন নোটন পায়রাগুলো’ আর ‘আমি নদীর মতো পথ ঘুরে’। সেই তো হলো শুরু, তারপর নদীর মতো বয়ে গেছে তার ক্যারিয়ার। যা আজ ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়।

দীর্ঘ সংগীতজীবনে রুনা লায়লা বেতার, টেলিভিশন, মঞ্চ ও সিনেমায় গান গেয়ে বাংলা ভাষাভাসী মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। সংগীতে অসামন্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা।

আরও পড়ুন:

শিল্পীর দায় বলে একটা কথা আছে! কেবল গানেই থেমে নেই রুনা লায়লা। সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমেও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের সহায়তায় সুইড বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করছেন তিনি। হয়েছিলেন সার্কের শুভেচ্ছাদূত। ইউএনএইডস-এর শুভেচ্ছাদূত হয়ে এইচআইভি সচেতনতায় কাজ করেছেন। বড় বোন দিনার মৃত্যুর পর ঢাকার শিশুহাসপাতালে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি ওয়ার্ড গড়েছেন।

এমএমএফ/আরএমডি/জেআইএম/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version