Site icon Amra Moulvibazari

স্বেচ্ছায় মৃত্যুর বৈধতার বিপক্ষে ভোট দিতে এমপিদের প্রতি আহ্বান

স্বেচ্ছায় মৃত্যুর বৈধতার বিপক্ষে ভোট দিতে এমপিদের প্রতি আহ্বান


মাহবুব আলী খানশূর, যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি

যুক্তরাজ্যে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভুগছেন- এমন কোনো মানুষ যদি ইচ্ছা করেন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে নিজের মৃত্যু নিশ্চিত করতে পারবেন। স্বেচ্ছায় মৃত্যু নিশ্চিত করাকে আইনগত বৈধতা দিতে ‘এসিস্টেড ডায়িং’ নামক একটি বিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উত্থাপন করেছে সরকার।

এই বিল আইনে পরিণত হলে অসুস্থ মানুষ ওষুধ সেবনের মাধ্যমে মারা যেতে পারবেন- ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মে যা আত্মহত্যার শামিল। তাই দেশটির মুসলিম এবং নন-মুসলিম বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ এই বিলটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

আগামী ২৯ নভেম্বর বিলটি পার্লামেন্টে সেকেন্ড রিডিংয়ের জন্য উত্থাপন করা হবে। এই বিলের বিপক্ষে অবস্থান নিতে এমপিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের সর্বস্তরের ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের নিজ নিজ এলাকার এমপির কাছে চিঠি লিখে বিলের বিপক্ষে ভোট দিতে আহ্বান জানাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে থার্টিন রিভার ট্রাস্ট ও মুসলিম বুরিয়াল ফান্ডের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ইডেন কেয়ারের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাদিরা হুদা, থার্টিন রিভার্স ট্রাস্টের পক্ষে আবু মুমিন, মুসলিম বুরিয়াল ফান্ড ম্যানেজার ইউসুফ খান ও এমবিএফ অ্যাম্বসেডর আমিনুর চৌধুরী।

প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়ছে, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় মাস বা তার কম সময় বেঁচে থাকার সম্ভাবনাসহ দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভুগছে এমন অনেক মানুষ নির্ণয় করা হয়েছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মারা যেতে পারবেন।

এই আইন যুক্তরাজ্যে সংখ্যালুঘু, নিম্ন আয়ের মানুষ, প্রতিবন্ধী এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের ওপর বেশ প্রভাব বিস্তার করবে। একজন প্রতিবন্ধী কিংবা মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে তার পরিবার বোঝা মনে করতে পারে। সুতরাং, পরিবারই হয়তো তাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেবে।

থার্টিন রিভার্স ট্রাস্টের আবু মুমিন বলেন, ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী খুবই অবহেলিত। অনেক ক্ষেত্রেই সন্তানরা মা বাবাকে দেখাশোনা করতে চায় না। তাই একজন মা কিংবা বাবা যখন দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভুগবেন এবং পরিবারের সদস্যরা তার পাশে থাকবে না, তখন তিনি ওষুধ সেবনের মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করতে রাজি হতে পারেন।

তিনি বলেন, এই আইন বর্তমানে কানাডা এবং নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশে চালু আছে। কানাডায় অভিবাসী, মুসলিম, সংখ্যালুঘু কমিউনিটির মানুষই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই আইনের সুবিধা নিচ্ছে। কারণ ওই শ্রেণির মানুষ বিভিন্ন কারণে স্বাস্থ্য বৈষম্যের শিকার।

নেদারল্যান্ডসের আইনটি এখন আরও সম্প্রসারণ হচ্ছে। আগে সেখানে শুধু দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তদের ওষুধ সেবনের মাধ্যমে মৃত্যুবরণে আগ্রহী করা হতো, এখন অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও একই আইন প্রয়োগ হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, যারা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তারা এবং ১২ বছর বয়সীরাও স্বেচ্ছায় মারা যেতে পারবেন।

আবু মুমিন আরও বলেন, খুবই ভয়াবহ একটা বিষয় হচ্ছে যে, চিকিৎসকরা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অকেজো করে দিতে ওষুধ খেতে দেবে। তাই ওষুধ সেবনের পর মারা যেতে অনেক সময় লাগবে। তাছাড়া, ওষুধ সেবনের পর অনেকে মারা নাও যেতে পারে। সুতরাং তাদের জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি তীব্র যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হবে। তাই আমরা ইসলাম বিরোধী, মানবতাবিরোধী এই বিল সংসদে পাস না করতে এমিপদের প্রতি আহ্বান জানাই। আমরা যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সর্বস্তরের ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের তাদের স্থানীয় এমপির বরাবরে চিঠি লিখতে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন সব এমপি বিলের পক্ষে ভোট প্রয়োগ থেকে বিরত থেকে, বিলের বিপক্ষে ভোট দেয়।

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি,
স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা
পাঠানোর ঠিকানা –
[email protected]
Exit mobile version