Site icon Amra Moulvibazari

প্লাস্টিকের বিনিময়ে ডিম-তেল-ডাল পেলেন হতদরিদ্র ৩০০ পরিবার

প্লাস্টিকের বিনিময়ে ডিম-তেল-ডাল পেলেন হতদরিদ্র ৩০০ পরিবার


প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধের কর্মসূচি উপলক্ষে প্লাস্টিকের বিনিময়ে গেঞ্জি-ডিম-তেল-ডাল পেলেন রামুর হতদরিদ্ররা। বুধবার (১৩ নভেম্বর) রামু বৌদ্ধ মন্দিরের মাঠে চলে ‘প্লাস্টিক দিয়ে বাজার নিন কর্মসূচি’। সকাল ১০টায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন রামুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল।

রামুর স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য বসানো ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার’ কর্মসূচি থেকে ৩০০ স্থানীয় দুস্থ পরিবার প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার করেন। এখান থেকে প্রায় ৩ মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত প্লাস্টিক সমূহ শতভাগ রিসাইকেল করার জন্য দেশের স্বনামধন্য রিসাইকেল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। সংগৃহীত প্লাস্টিকের একটি অংশ দিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নির্মাণ করা হবে ‘প্লাস্টিকের ভাস্কর্য’।

দেখা যায়, রামুর চেরাংগর রোডের বৌদ্ধ মন্দিরের মাঠে বিশাল একটি সুপারশপ নানা রকমের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছে। প্লাস্টিকের বিনিময়ে এসব পণ্য কিনতে পারবেন স্থানীয়রা। বাজারে ১ কেজি প্লাস্টিকের দাম ২০-৩০ টাকা হলেও এ বাজারে তার দাম প্রায় ৫০-৮০ টাকা মূল্য ধরা হয়। এক কেজি প্লাস্টিক দিয়ে এক কেজি চাল মিলেছে। ৬টি ডিমের বিনিময়ে নেওয়া হয় এককেজি প্লাস্টিক। প্রায় ১৯টি পণ্য থেকে নিজেরাই বাছাই করে কেনার স্বাধীনতা পান সাধারণ মানুষ।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের পরিবেশেকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্লাস্টিক নিরসনে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এমন মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবক ও ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার’ প্রোগ্রামের সমন্বয়ক মো. মোবারক বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের অস্তিত্বের হুমকি প্লাস্টিক। পৃথিবীকে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য রাখতে হলে প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।

প্লাস্টিক দূষণ একটি ব্যাপক পরিবেশগত সমস্যা, যা বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্র, মানবস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশে এ চ্যালেঞ্জটি বর্তমানে পৌঁছেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে, যা শহর ও গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৬ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাপক চাপের সম্মুখীন। দেশে প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নদী, খাল এবং বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে। থ্রি আর কৌশল তথা রিডিউস, রিইউজ ও রিসাইকেল বা ব্যবহার হ্রাস, বারবার ব্যবহার ও নতুন করে অন্য কিছু তৈরি করার কৌশল অবলম্বন করে প্লাস্টিকের চক্রাকার ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করা সম্ভব।

এই বাস্তবতায় গত ২ মাস ধরে সারাদেশব্যপী ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার’ কর্মসূচি চালিয়ে আসছে বিদ্যানন্দ। গত ৭ নভেম্বর থেকে কক্সবাজারের সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে ৪ মাসের জন্য জেলা প্রশাসন কক্সবাজার ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন চালু করেছে ‘প্লাস্টিক বিনিময় স্টোর’। যেখানে পর্যটকরা ব্যবহৃত প্লাস্টিক জমা দিলেই পাবেন উপহার এবং প্রান্তিক মানুষ কুড়ানো বা জমানো প্লাস্টিক জমা দিলে পাবেন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী।

বুধবারের প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার কর্মসূচিতে রামু প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি এস এম জাফর, রামু প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোয়েব সাঈদ, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক নিতিশ গোলদার, মংনিং থোয়াই, শিশু ও যুব ফোরাম ফতেখাঁরকুলের সমন্বয়ক তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version