সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল ওএসডি হওয়ার পরও দায়িত্ব পালন করে যাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (১৩ নভেম্বর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের চৌধুরী ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকার্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন ও অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে ওএসডি হওয়া ডিজি ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালকে ১৫ দিনের মধ্যে সরিয়ে দিতে গত ৫ নভেম্বর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে তার দায়িত্ব পালনের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন আদালত। জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতের এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
গত ১১ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ওএসডি হয়েও পদ ছাড়ছেন না সমাজসেবা অধিদপ্তরের ডিজি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করা হয়। এই আদেশের প্রায় এক মাস পরও তা অমান্য করে ডিজি পদে বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছেন এ কর্মকর্তা।
ওএসডি হওয়া সমাজসেবার ডিজি নিজেই অফিস করার কথা স্বীকার করেছেন। ওএসডি হওয়ার পর কীভাবে কাজ করছেন—জানতে চাইলে তিনি দাবি করে বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আমার অফিস করার মৌখিক নির্দেশ আছে। ওই নির্দেশে কাজ করে যাচ্ছি।
মৌখিক নির্দেশ কতটা যৌক্তিক—জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ হলেও দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয় থেকে আমার অবমুক্তি না হওয়া পর্যন্ত অফিস করতে পারি। তাছাড়া এখানে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
সমাজসেবা ডিজির ওএসডির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তার নতুন পদায়ন করা পদ হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রথম গ্রেডের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। অর্থাৎ যেদিন আদেশ জারি করা হয়েছে ওই তারিখ থেকে কার্যকর।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন, রাষ্ট্রপতির আদেশে করা প্রজ্ঞাপনের নির্দেশ মানছেন না ড. সালেহ। তিনি দপ্তরে নিয়মিত আসছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সভা করছেন। নানা কাজের নির্দেশনা দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অধিদপ্তরের নানা অনিয়ম, গোপন নথি গায়েব ও আলামত নষ্ট করতে ওএসডি হওয়ার পরও তিনি মন্ত্রণালয়ের মৌখিক নির্দেশের কথা বলে শুধু রুটিন দায়িত্ব নয়, আগের মতো দপ্তরের সব কাজ করছেন। বাস্তবে রাষ্ট্রপতির আদেশের পর মৌখিক নির্দেশে কোনো কর্মকর্তা এটি করতে পারেন না।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আদেশ জারি করার পর কোনো কর্মকর্তা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বা দপ্তরে থাকতে পারবেন না। আর ওএসডি এক ধরনের শাস্তি।
এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম