Site icon Amra Moulvibazari

সহায়তায় রাবিতে ভর্তি, এবার সাইফের ভয় পড়াশোনার খরচ নিয়ে

সহায়তায় রাবিতে ভর্তি, এবার সাইফের ভয় পড়াশোনার খরচ নিয়ে


ছোট বেলা থেকেই বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখতেন সাইফ। কিন্তু অভাব অনটনের সংসারে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই কঠিন ছিল। তবুও হাল ছাড়েননি। অষ্টম শ্রেণি থেকে টিউশনি ও অন্যের জমিতে কাজ করে পড়াশোনা করেছেন তিনি। কঠোর পরিশ্রমের ফলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে। তবে সেখানেও অর্থের অভাবে মেধাযুদ্ধে জয়লাভ করেও ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছিলেন আবু সাইফ।

এ সময় সাইফের পাশে এসে দাঁড়ান রাবি শাখা ছাত্রদলের এক নেতা। তার আর্থিক সহযোগিতায় সাইফ ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ভর্তি হয়েও দুশ্চিন্তা কাটছে না সাইফের। কীভাবে চালাবেন পড়াশোনার খরচ? টিউশন বা পার্টটাইম জবের সন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন তিনি। তবে এখনো কোনো সন্ধান পাননি সাইফ।

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন আবু সাইফ। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের খেজমত আলী ও মালেকা খাতুন দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে আবু সাইফ মেজো। গ্রামের বুজরুক বাখই সরকারি বিদ্যালয় থেকে ৪.৩১ পেয়ে এসএসসি ও কুমারখালি সরকারি কলেজ থেকে ৪.৯২ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন তিনি। সাইফের বড় ভাই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ফাইনাল ইয়ারে অধ্যায়নরত এবং ছোট বোন নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।

সাইফের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা পেশায় ছিলেন একজন রিকশাচালক। বাবার উপার্জন দিয়েই চলতো তাদের সংসার। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে সাইফের বাবার। দুটি ব্লকে রিং পরানোর ফলে তিনি আর কাজ করতে পারেন না। প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয় তাকে। সাইফের বড় ভাই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন করে বাবার চিকিৎসার খরচ ও সংসারের হাল ধরেছেন।

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েও অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছিলেন না সাইফ। বিষয়টি জানার পর রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম (শফিক) তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ভর্তির শেষ দিনে সাইফকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্য বিভাগে ভর্তি করান।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেকেই বহন করতে হচ্ছে। ফলে ছুটি পেলেই বাড়িতে গিয়ে অন্যের জমিতে কাজ করেন সাইফ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তিনি। আরবি বিভাগে পড়াশোনা করার ফলে টিউশনও পাচ্ছেন না তিনি। আল কুরআন শুদ্ধভাবে পড়ানো থেকে শুরু করে এসএসসির সকল বিষয়ে তিনি ভালো পড়াতে পারবেন। এ বিষয়ে সকলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন হার না মানা এই শিক্ষার্থী।

আবু সাইফ বলেন, আমি খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই অনেক লড়াই-সংগ্রাম করে বড় হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছিলাম না। শফিক ভাই বিষয়টি জানার পর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে ভর্তি করান। তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো।

পরিবারের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভাইয়ের টিউশনির টাকা দিয়ে তার নিজের খরচ, বাবার চিকিৎসা, সংসারের খরচ ও ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ চালান। ভাইয়ের পক্ষে আমার খরচ বহন করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় আমার পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এখন কোনো টিউশনি বা পার্ট টাইম কাজের ব্যবস্থা পেলে হয়তো আমি আমার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারতাম।

সকলকে আবু সাইফের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছিলেন না এমন সংবাদ শোনার পর পরই আমি তার সঙ্গে দেখা করি এবং তাকে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি তার জন্য আবাসিক হলে একটি সিটের ব্যবস্থা করে দিতে পারে, তাহলে আবু সাইফ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে আহ্বান জানাই, যার যার জায়গা থেকে আমরা আবু সাইফের পাশে দাঁড়াই। আমাদের একটু সহযোগিতায় আবু সাইফ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

মনির হোসেন মাহিন/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version