Site icon Amra Moulvibazari

সীতাকুণ্ডে রূপবান শিমে বাড়তি আয় কৃষকের

সীতাকুণ্ডে রূপবান শিমে বাড়তি আয় কৃষকের


পাহাড়ি ভূমিতে যতদূর চোখ যায় ফুটে আছে রূপবান শিমের ফুল। কোথাও থোকা থোকা ঝুলছে বেগুনি রঙের শিম। আবার কোথাও থোকা থেকে সদ্য ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের কেউ কেউ বাজারে বিক্রির জন্য শিম তুলছেন। আবার কেউ শিমের লতা পরিচর্যায় ব্যস্ত। এমন চিত্র দেখা গেছে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের বড় কুমিরা পাহাড়ে। রূপবান জাতের এ শিম গ্রীষ্মকালে লাগানো হয় বলে একে গ্রীষ্মকালীন শিম বলা হয়।

জানা গেছে, পাহাড়ে শিম আবাদ করে সফলতা পেয়েছেন শত শত কৃষক। উপজেলার ছোটদারোগার হাট থেকে শুরু করে ছলিমপুর পর্যন্ত চার শতাধিক স্পটে পাহাড়জুড়ে এ শিম চাষ করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন জাতের শিমের উৎপাদন করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করছেন চাষিরা।

ধর্মপুর এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা পাহাড়ে নানা রকম কৃষি উৎপাদন শুরু করি। কাউকে খাজনা বা টাকা দেওয়া লাগে না। নেই কোনো সেচ দেওয়ার চিন্তা।’

সীতাকুণ্ড উপজেলা শিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। সীতাকুণ্ডের শীতকালীন শিম বিশেষ করে ছুরি, লইট্টা, বাঁটা শিমের চাহিদা বেশি। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন শিমও সুস্বাদু ও লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর চাষ বাড়ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে সীতাকুণ্ড উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ হয়েছিল ২৮ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর তা বেড়ে ৩০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।

কৃষক জাহাঙ্গীর আলম এবং দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে পাহাড়ে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করে আসছি। এ শিম ওঠার শুরুতে প্রতি কেজি বিক্রি করেছি ১৬০-১৭০ টাকা। এখনো ১৪০ টাকা দরে শিম বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এসে এ শিম নিয়ে যাচ্ছেন।’

স্থানীয়রা জানান, সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে শিম চাষ হয়। দুর্গম হওয়ায় উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি। বর্ষায় সমতলে অতিবৃষ্টিতে পানি জমে শিমের লতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু পাহাড়ে পানি জমে থাকে না। ফলে শিম গাছ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। পাহাড়ে এ শিমের চাষ বাড়তে থাকায় অনাবাদি জমির পরিমাণও কমছে। রূপবান শিমের ফলন শীতকালীন শিমের চেয়েও দীর্ঘসময় ধরে পাওয়া যায়। ফলে এ শিমে লাভও বেশি।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সীতাকুণ্ডে গ্রীষ্মকালীন রূপবান শিম চাষ করেছেন প্রায় ৩০০ কৃষক। কুমিরা ও বাঁশবাড়িয়ার পাহাড়ের বেশিরভাগ এলাকায় রূপবান শিম চাষ হয়েছে। এ ছাড়া বাঁশবাড়িয়া, সৈয়দপুর, বারৈয়ারঢালা ও সীতাকুণ্ড পৌর সদরেও রূপবান শিম চাষ হয়েছে।

ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুজন ঘোষ বলেন, ‘প্রতি হাটে (সপ্তাহে দুদিন) ইউনিয়ন থেকে অন্তত ১৫ টন শিম বিক্রি করেন কৃষকেরা। এখন ১৫ টন শিমের মূল্য ১৫-১৮ লাখ টাকা। আমরা কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিই। ফুল আসার পর সেগুলো ধরে রাখার জন্য ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়, তার পরামর্শ দিই। পাহাড়ে গিয়ে বিভিন্ন সময় তদারক করি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘এই শিমে দীর্ঘসময় ফলন হয়। শীতকালীন শিমের চেয়েও দাম বেশি। ফলে কৃষকেরা গ্রীষ্মকালীন শিম চাষের দিকে ঝুঁকছেন। প্রতি বছর বাড়ছে শিম চাষ। শীতকালীন শিমের মতো রূপবান শিমও খুব সুস্বাদু। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে এর সুনাম আছে।’

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version