আমাদের দেশে অনেক অঞ্চলে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশ্নোত্তরের প্রচলন আছে। মৃতের মাথা ও পায়ের দিকে দুজন দাঁড়িয়ে একজন মুনকার নাকিরে তিনটি প্রশ্ন (অর্থাৎ তোমার রব কে? তোমার নবি কে? তোমার ধর্ম কী?) করে, অপরজন উত্তর দেয়। তারা মনে করে এভাবে প্রশ্নোত্তর করলে মৃত ব্যক্তি সহজে কবরের প্রশ্নোত্তর পর্ব পার হতে পারবে।
ইসলামে এ ধরনের প্রশ্নোত্তর এবং এভাবে মৃতের উপকার হতে পারে এ রকম ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। নবিজি (সা.) ও সাহাবিদের সময় এ রকম প্রশ্নোত্তরের প্রচলন ছিল না। তাই এ ধরনের মনগড়া কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
তবে দাফনের তার কবরের পাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করে মৃত ব্যক্তির জন্য রহমত ও মাগফেরাত প্রার্থনা করা, ফেরেশতাদের প্রশ্নের জবাবে তার ইমানি দৃঢ়তা প্রার্থনা করা যেতে পারে। এটা মুস্তাহাব।
রাসুল (সা.) এ রকম আমল করেছেন বলে বর্ণিত রয়েছে। ওসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর সেখানে অবস্থান করতেন এবং বলতেন, আপনারা আপনাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তার জন্য দৃঢ়তার দোয়া করুন। এখনই তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৩২১৩)
সহিহ মুসলিমে এসেছে, বিখ্যাত সাহাবি আমর ইবনুল আস (রা.) তার মৃত্যুর সময় অসিয়ত করেছিলেন, তাকে দাফন করার পর কবরের পাশে অবস্থান করে দোয়া করতে। আবদুর রহমান ইবনে শামাসাহ থেকে বর্ণিত রয়েছে মৃত্যুর সময় আমর ইবনুল আস (রা.) বলেছিলেন, আমি যখন মারা যাব, তখন যেন কোনো বিলাপকারিনী অথবা আগুন আমার জানাজার সাথে না থাকে। আমাকে যখন দাফন করবে তখন আমার ওপর আস্তে আস্তে মাটি ফেলবেন এবং দাফনের পর একটি উট জবাই করে তার মাংস বণ্টন করতে যতক্ষণ সময় লাগে, ততক্ষন আমার কবরের পাশে অবস্থান করবেন। যেন আপনাদের উপস্থিতির (দোয়া ও ইস্তেগফারের) কারণে আমি আতঙ্কমুক্ত অবস্থায় চিন্তা করতে পারি যে, আমার রবের দূতদের প্রশ্নের কী জবাব দেব। (সহিহ মুসলিম: ১২১)
এ ছাড়া মৃত ব্যক্তির জন্য বেশি বেশি দোয়া করা উচিত, দান-সদকা, কোরআন তেলাওয়াত বা অন্যান্য আমল করে তার জন্য সওয়াব পাঠানো উচিত যেভাবে ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে।
ওএফএফ/এমএস