Site icon Amra Moulvibazari

সর্বাধুনিক মেশিনে আটা-ময়দা-সুজি উৎপাদন শুরু করলো প্রাণ

সর্বাধুনিক মেশিনে আটা-ময়দা-সুজি উৎপাদন শুরু করলো প্রাণ


মিলের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ১ লাখ ৬৫ হাজার টন
আগামীতে আসছে ভোজ্যতেল, লবণ, স্টার্চসহ আরও পণ্য

গাজীপুরের কালীগঞ্জ ইকোনমিক জোনে একটি শিল্পপার্ক গড়ে তুলেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠান ‘প্রাণ’। নতুন এ শিল্পপার্কে রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ফ্লাওয়ার মিল। প্রতিদিন ৫শ টন উৎপাদন সক্ষমতার এ কারখানায় হাতের কোনো স্পর্শ ছাড়াই সম্পূর্ণ অটোমেটিক মেশিনে আটা-ময়দা ও সুজি উৎপাদন শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

আগামীতে এ শিল্পপার্কে ভোজ্যতেল, লবণ, ডাল, স্টার্চ, পোল্ট্রি ফিড, মসলা, বেভারেজ, নুডলস, বিস্কুট, কনফেকশনারি ও ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিংসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্য রেখে এগিয়ে যাচ্ছে প্রাণ। প্রাথমিকভাবে এই শিল্পপার্কে বিনিয়োগ ১৫শ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ সম্পন্ন।

সরেজমিনে এ কারখানা ঘুরে দেখা যায়, এ শিল্পপার্কে দু-তিনটি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু চলছে। কয়েকটি কারখানার যন্ত্রপাতি বসানো প্রায় শেষের পথে। আবার কয়েকটি কারখানা নির্মাণাধীন। এরই মধ্যে শিল্পপার্কটিতে প্রায় ৯শ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। পুরোদমে চালু হলে তিন হাজার লোকের কাজের সুযোগ হবে এখানে।

এরই মধ্যে প্রায় ২১ বিঘা জায়গায় প্রায় ১০ তলা সমান সর্বাধুনিক প্রযুক্তির অটোমেটেড ফ্লাওয়ার মিলটি উৎপাদনে গেছে। এ কারখানার সম্পূর্ণ যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তি ইউরোপ থেকে আনা। ডিজিটাল মেশিনে পুরো কারখানা নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ অটোমেটেড এ কারখানায় কাঁচামাল আনলোড থেকে শুরু করে পণ্য প্যাকেজিং ও ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত সবকিছুই হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের বিভিন্ন মিলে প্রতি বছর ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। এর বেশিরভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। স্থানীয়ভাবে ১০-১২ লাখ মেট্রিক টন সংগ্রহ করা হয়। সেখান থেকে যে আটা-ময়দা-সুজি উৎপাদিত হচ্ছে তার বাজার প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার। এসব আটা-ময়দার মধ্যে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও হোটেলগুলোতে ব্যবহার প্রায় ৭৫ শতাংশ। বাকিটা ভোক্তারা বাসাবাড়িতে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য তৈরিতে ব্যবহার করেন। প্রতি বছর আটা-ময়দার চাহিদা ৮-১০ শতাংশ হারে বাড়ছে।

ফ্লাওয়ার মিলে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, ‘ভোগ্যপণ্যের বাজারের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে আটা-ময়দা। দেশে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের চাহিদাও বাড়ছে। প্রাণ নিজেও নিজস্ব বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করার জন্য দেশের এককভাবে সর্বোচ্চ আটা-ময়দার ক্রেতা। ফলে উৎপাদনের ৫০ শতাংশ নিজেরা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ পণ্য হিসেবে এবং বাকিটা ভোক্তার কাছে বিক্রি করা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশে আটা-ময়দার চাহিদাও ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। তাই এ খাতে বিনিয়োগে এসেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রাণ গ্রুপ বিশ্বাস করে, ভোগ্যপণ্যের বাজারে যত নতুন নতুন উদ্যোক্তা আসবে, তাতে বাজার প্রতিযোগিতামূলক হবে। ফলে ভোক্তাই লাভবান হবে।’

আটা-ময়দার সর্বোচ্চ গুণগতমান নিশ্চিতের জন্য রাশিয়া, ইউক্রেনের পাশাপাশি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি করা হচ্ছে বলে জানান প্রাণ-এর নির্বাহী পরিচালক নাসের আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এসব অঞ্চলের গমে প্রোটিনের মাত্রা ভালো থাকে। তবে স্থানীয়ভাবেও লালমনিরহাট, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়সহ কয়েকটি জেলা থেকেও গম সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া প্রাণ নিজেরাই জমি লিজ নিয়ে ভালো প্রোটিন পাওয়া যায় এমন গম উৎপাদন করবে। প্রাণ এরই মধ্যে গমসহ অন্য ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে উত্তরাঞ্চলে ৬শ একর জমি লিজ নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পণ্যের গুণগতমান বজায় রাখার জন্য কয়েকটি ধাপে কারখানায় আটা-ময়দা সুজি তৈরি করা হচ্ছে। আমদানি করা গম মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারের মাধ্যমে সরাসরি সাইলোতে নেওয়া হয়। কাঁচামাল রাখার জন্য কারখানায় প্রতিটি ১০ হাজার টন সক্ষমতার ছয়টি এবং এক হাজার টন সক্ষমতার তিনটি সাইলো রয়েছে। এছাড়া আরও ছয়টি সাইলো বসানো হবে।’

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, সাইলো থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গম চলে যায় মেশিনে। এরপর সেপারেটর মেশিনের মাধ্যমে গম থেকে বালিসহ অন্য ময়লা আলাদা করা হয়। পরে স্টোন সেপারেটর মেশিনের মাধ্যমে পাথর আলাদা করার পর কোকো সিলিন্ডার মেশিনের মাধ্যমে ভাঙা ও অপরিপক্ব গাম আলাদা করা হয়। এরপরও কয়েকটি ধাপে ক্লিনিং ও ম্যাগনেট সেপারেটর মেশিন হয়ে সম্পূর্ণ ফ্রেশ গম পাওয়ার পর ক্রাশিং কার্যক্রম শুরু হয়। ক্রাশিং পর্যায়ে কয়েকটি ধাপ পার হয়ে আটা-ময়দা তৈরি হওয়ার পর প্যাকেটজাত করা হয়।

গমের পুষ্টি পরিমাপের জন্য কারখানায় রয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাব, যার মাধ্যমে গমের গুণগতমান পর্যবেক্ষণ করা হয়। শুরুতে প্রাণ গ্রুপের উৎপাদিত ৫০ কেজির বস্তা নিজস্ব ডিলারের মাধ্যমে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার দোকানে পৌঁছে যাচ্ছে। প্রাণ ব্র্যান্ডের এক কেজি ও দুই কেজির প্যাকেটেরও পরীক্ষামূলক প্যাকেজিং চালু হয়েছে। দেশের বাজারে শিগগির সর্বত্র মিলবে প্রাণ ব্যান্ডের এই আটা-ময়দা ও সুজি।

প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, ‘শুধু ফ্লাওয়ার মিলের মেশিনারি ও অন্য বিল্ডিং নির্মাণে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা। শিগগির উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ শিল্পপার্কে ফিডমিল চালু রয়েছে, যা প্রোটিন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রাখছে। আমরা ভোগ্যপণ্যের বাজারে ভালো অবস্থান তৈরি করতে চাই। এজন্য সিড ক্র্যাশিং, ভোজ্যতেল, লবণসহ বেশ কয়েকটি পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কারখানায় কাজ চলমান। আশা করছি আগামী দুই বছরের মধ্যে ভোক্তারা প্রাণ-এর বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য হাতে পাবেন।’

এনএইচ/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version