Site icon Amra Moulvibazari

আট বিভাগের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে উৎসব

আট বিভাগের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে উৎসব


বাংলাদেশের আট বিভাগের আট সাংস্কৃতি ঐতিহ্য তুলে ধরতে আয়োজন করা হয়েছে ‘আনন্দ বৈভব: উৎসবের বাংলাদেশ’। আজ (৮ নভেম্বর) শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ছিল উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

‘আনন্দ বৈভব: উৎসবের বাংলাদেশ’ আয়োজনে আট বিভাগের আট বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনুসঙ্গ মঞ্চে তুলে ধরেন আট উন্নয়ন সংস্থার আশি জন শিল্পী। ‘বাহা’ উৎসবের অনুসঙ্গ পরিবেশন করে ব্রতী, রাঙ্গামাটির ‘সাংগ্রাই’ উৎসবের অনুসঙ্গ পরিবেশন করে কালচার ফর হেরিটেজ স্টাডিজ, সিলেটের ‘মণিপুরী লাই হারাওবা’ উৎসবের অনুসঙ্গ পরিবেশন করে মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স, ঢাকা কালিহাতির ‘শাওনে ডালা’ উৎসবের অনুসঙ্গ পরিবেশন করে সাধনা, বরিশালের ‘নৌকা বাইচ’ পরিবেশন করে উড়ন্ত আর্টিস্ট কমিউনিটি, খুলনার রাশমেলা পরিবেশন করে ভাবনগর ফাউন্ডেশন, রংপুরের ধামের গান পরিবেশন করে গিদরি বাউলি এবং ময়মনসিংহের ‘দেউলি পৌষ’ উৎসবের অনুসঙ্গ পরিবেশন করে উইমেনস লিডার।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউনেস্কোর প্রধান কর্মকর্তা মিজ সুজান ভাইজ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উৎসবের সহ-আয়োজক আট উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লুবনা মারিয়াম।

শারমিন এস মুরশিদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে থাকায় আমি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে আপাতত বিরতি নিয়েছি, কিন্তু হৃদয় থেকে নয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার। ২০২৪ সালে এসে দেশের ছাত্রসামাজের মাধ্যমে যার পুনর্জন্ম হয়। অভ্যুত্থান থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি যে, অসততা ও দুর্নীতি দিয়ে দেশ শাসন করা যায় না। আমাদের সততার সাথে কাজ করতে হবে। কারণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য ছাত্রদের মৃত্যু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আমরা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও এর ঐহিত্য রক্ষায় সবাইকে কাজ করে যেতে হবে।

মিজ সুজান ভাইজ বলেন, ইউনেস্কো সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সাথে বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করে। স স বিভাগের স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতা, শিল্পচর্চাকারী এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ের আটটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করব আমরা।

লুবনা মারিয়াম বলেন, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও আচার-অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্য আমরা ভুলে যাই। আমাদের আগামী প্রজন্মকে দেশের সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করতে হবে। আমাদের আট সংস্থা আটটি সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশ এবং সেগুলো সুরক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।

আতাউর রহমান বলেন, আমরা সব শিল্পী, সংস্থা এবং ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাই যারা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য একত্র হয়েছেন।

বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি দেশ। এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ইতিহাস ৫ হাজার বছর ধরে লালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দেশ, মানুষের বৈচিত্রময় গোষ্ঠীর সাথে, বৈচিত্র্যময় বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য (ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ) এ দেশের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। এ দেশের সংস্কৃতির ধারা-উপধারা এতই বিস্তৃত যে, সেসবের সন্ধান করা কষ্টকর। সেসবের মধ্যে অনেক ঐতিহ্য ইতোমধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে। যে ঐতিহ্যগুলো রয়েছে, সেগুলোকে সুরক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

তারা আরও বলের, বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি একটি দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরে এবং সাংস্কৃতিক সত্ত্বার অস্তিত্বকে জানান দেয়। বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষ্ঠানে বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে লুবনা মারিয়ামের লেখা চারটি বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী। ইংরেজি ভাষায় লেখা বইগুলো হলো ‘টেরাকোটা টেলস ফ্রম সোমপুর’, ‘রাসমেলা: অ্যাটনমেন্ট বাই দ্য সি’, ‘অব মিথস, মনসুন অ্যান্ড মনসা’ ও ‘লাঠিখেলা: ড্যান্স অর ডিফেন্স’।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষার জন্যে ‘ইমপ্লিমেন্টিং কমিউনিটি বেজড হেরিটেড ফেস্টিভ্যাল ইন এইট অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ ডিভিশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পটির মূল পৃষ্ঠপোষক ইউনেস্কো। যৌথভাবে এ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ব্রতী, কালচার ফর হেরিটেজ স্টাডিজ, মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স, সাধনা, উড়ন্ত আর্টিস্ট কমিউনিটি, ভাবনগর ফাউন্ডেশন, গিদরি বাউলি এবং উইমেনস লিডার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে ছিল র‌্যালি।

এমআই/আরএমডি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version