Site icon Amra Moulvibazari

স্বাচ্ছন্দ্যে করলে স্মরণ দুঃসময়ে তিনি রাখবেন মনে

স্বাচ্ছন্দ্যে করলে স্মরণ দুঃসময়ে তিনি রাখবেন মনে


সুখ-দুঃখ মিলেই আমাদের জীবন। তবে একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় গুণ হলো সে সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করে। যারা সব সময় ধৈর্য অবলম্বন করে চলে তারাই মূলত আল্লাহপাকের প্রিয় বান্দা। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে যারা ইমান এনেছ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)।

এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর বান্দার উচিত, তার চেষ্টা-প্রচেষ্টায় সে যেন লেগে থাকে এবং তার অধ্যবসায়ে যে কখনো ভাটা না পড়ে, উদ্দেশ্য সাধনের পথে কখনো যেন মনে নৈরাশ্য সৃষ্টি না হয়, যা কিছু মন্দ ও ক্ষতিকর তা যেন সে বর্জন করে এবং যা ভাল তা যেন সে আঁকড়ে ধরে এবং সব বিষয়ে সব সময় ধৈর্য ধারণ করে।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ঈমানদারের ব্যাপারটা আশ্চর্যের; ঈমানদারের সব অবস্থাই কল্যাণকর আর এটা শুধু মুমিনদেরই বৈশিষ্ট্য। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময় মুমিন শোকর করে, এটা তার জন্য কল্যাণকর। কোনো বিপদ এলে মুমিন ধৈর্য ধরে, এটাও তার জন্য কল্যাণকর। (সহিহ মুসলিম)

হাদিসে আরো উল্লেখ রয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘মহানবি (সা.) একবার এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, মহিলাটি এক কবরের পাশে বসে মাতম করছিল। তিনি (সা.) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আল্লাহতায়ালাকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর। ঐ মহিলা বললো, সরে যাও, নিজের রাস্তায় চলো, যে বিপদ আমার ওপর পরেছে সেই বিপদ তোমার ওপর পরে নাই। প্রকৃতপক্ষে, ঐ মহিলা তাকে (সা.) চিন্তে পারে নাই (সেজন্যই রাগান্বিত এমন কথা তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে) তাকে যখন বলা হল যে, ইনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.), তখন সে অস্থির হয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরজায় উপস্থিত হলো আর সেখানে তাকে বাধা দেয়ার মত কোনো দারোয়ান না থাকায় সোজা সে অন্দর মহলে চলে গেল আর সবিনয়ে নিবেদন করলো, হুজুর (সা.) আমি আপনাকে চিন্তে পারি নাই। তখন তিনি (সা.) বললেন, প্রকৃত ধৈর্য তো দুঃখ আঘাত হানা কালেই ধারণ করতে হয় (নইলে কান্না কাটি করে ব্যথিত-ক্লান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত সবাই তো ধৈর্যেরই পথ ধরে)’ (বুখারি, কিতাবুল জানায়েজ)।

এ প্রসঙ্গে মহানবির (সা.) অত্যন্ত আকর্ষণীয় উপদেশ রয়েছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, একবার যখন আমি মহানবির (সা.) পিছনে (উটের পিঠে) ছোয়ারি হয়ে বসে ছিলাম, তিনি (সা.) বললেন, ‘হে স্নেহাস্পদ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা বলছি। প্রথম কথা হলো, আল্লাহর কথা স্মরণ রেখ, তিনি তোমাকে নিরাপদ রাখবেন, আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখলে তুমি তাঁকে নিকটেই পাবে, কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আল্লাহতায়ালার কাছেই চাও, তোমার সাহায্যের প্রয়োজন হলে আল্লাহতায়ালার সাহায্য যাচনা কর।

জেনে রাখ, সমস্ত লোক একত্রিত হয়ে তোমার ভালো করতে চাইলেও তারা তোমার কোনোই মঙ্গল সাধন করতে পারবে না যদি আল্লাহতায়ালা তা না চান আর তোমার কপালে তা না লিখেন। আর যদি তারা তোমার ক্ষতি করতে একাত্ম হয়ে যায় তবুও তোমার কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না যদি না আল্লাহতায়ালা তোমার কপালে সেই ক্ষতি লিখে রাখেন, কলম তুলে নেন, আর কালিও যায় ফুরিয়ে।’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, মহানবি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখ তুমি তাঁকে সামনে পাবে, স্বাচ্ছন্দ্যকালেও তুমি তাঁকে স্মরণ করো, তাহলে দুঃসময়েও তিনি তোমাকে মনে রাখবেন। আর জেনে রাখ, তুমি যা হারিয়েছ বা যা তুমি লাভ করতে পার নাই তা তোমার জন্য ছিল না আর যা তুমি পেয়ে গিয়েছ তা তোমারই, প্রাপ্তির বাইরে তা থাকতে পারে না, কেননা, অবধারিত নিয়তির লিখন এটাই ছিল। বুঝে নাও আল্লাহতায়ালার সাহায্য ধৈর্যধারণকারীদের সাথে থাকে। সুখ-আনন্দ উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সাথে, হাসি-আনন্দ দুঃখ-বেদনার সাথে একীভূত হয়ে থাকে আর প্রত্যেক অভাব-অনটনের পর রয়েছে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য’ (সুনান তিরমিজি)।

যারা সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণ করেন তাদের সাথেই আল্লাহ থাকেন, কেননা ধৈর্যশীলদের তিনি ভালোবাসেন। যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ধৈর্য ধর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৪৬)।

আল্লাহপাক আমাদেরকে সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে স্মরণ এবং ধৈর্যশীল হওয়ার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।
[email protected]

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version