Site icon Amra Moulvibazari

জনপ্রিয় অভিনেত্রী থেকে অজনপ্রিয় রাজনীতিক

জনপ্রিয় অভিনেত্রী থেকে অজনপ্রিয় রাজনীতিক


নব্বই দশকের শুরু থেকে টেলিভিশনের প্রিয়মুখ হয়ে ওঠেন শমী কায়সার। যুক্ত ছিলেন মঞ্চনাটকের দল ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গেও। কয়েকটি সিনেমাতেও অভিনয় করেছিলেন। অকাল প্রয়াত অভিনেতা সালমান শাহর সঙ্গে করা নাটক তাকে মনে রাখার জন্য যথেষ্ট। জনপ্রিয়তার চূড়ায় অবস্থান করা অভিনেত্রী শমী কায়সার হঠাৎ বদলে গেলেন। তারকাখ্যাতি তাকে বদলে দিয়েছিল। আকাশ থেকে খসে পড়া তারার মতো হারিয়ে গেলেন তিনি। তাকে পাওয়া গেল রাজনীতির মাঠে, অজনপ্রিয়, এমনকি আওয়ামী লীগ দলটিতেও তার তেমন গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। যে কারণে মনোনয়ন চেয়েও পাননি।

শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সার ও লেখক, গবেষক, শিশু সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য পান্না কায়সার দম্পতির মেয়ে শমী। প্রযোজনায়ও নাম লিখিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন তিনি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি ছিলেন। হয়েছিলেন এফবিসিসিআই পরিচালকও। গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৪ অগাস্ট ই-ক্যাব সভাপতির পদ ছাড়েন শমী কায়সার।

বড় পর্দার শমীর কাজের সংখ্যা অল্প। প্রথম সিনেমা অনুপ সিংয়ের পরিচালনায় ‘নেম অব দ্য রিভার’। ছবিটি নির্মিত হয়েছিল প্রখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের জীবনের ওপর ভিত্তি করে। বিশ্বের কয়েকটি দেশে দেখানো হলেও বাংলাদেশে মুক্তি পায়নি ছবিটি। পরে ‘হাসন রাজা’ এবং ‘লালন’ নামে দুটো ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শমী।

শমী কায়সারের জায়গা হয়েছিল আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে। চলতি বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। সেও ঠিক ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) রামপুরা ভবনে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরে ১ আগস্ট আওয়ামী সমর্থক একদল শিল্পীর সঙ্গে ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষতিগ্রস্থ বিটিভি পরিদর্শনে যান শমী। সেদিন আরও ছিলেন ফেরদৌস, নিপুন, রিয়াজ, সুজাতা, অরুণা বিশ্বাস, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, সুইটি, হৃদি হক, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরু প্রমুখ। এরপর থেকে তরুণদের ঘৃণার শিকার হন শমী ও অন্যরা।

সেদিন বিটিভি ভবন পরিদর্শনে গিয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সার বলেছিলেন, ‘বিটিভি প্রাঙ্গণে এসে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।’এ নিয়ে প্রকাশিত একটি খবরের ফটোকার্ড শেয়ার করে তরুণ প্রজন্মের অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান লিখেছিলেন, ‘শেম অন ইউ গাইজ।’ পরে তিনি লেখেন, ‘একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বিটিভির প্রাঙ্গণে গিয়ে চোখের পানি ঝরিয়েছেন। অবশ্যই তাদের জীবন ও ক্যারিয়ারের সঙ্গে বিটিভিকেন্দ্রিক স্মৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের দুঃখ পাওয়াটা হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু এতগুলো ছাত্র, ছাত্রী, শিশু, মা, বোন, সাধারণ মানুষ যে মারা গেল, তা নিয়ে একবারও কিচ্ছু বললেন না! একবারো দুঃখ প্রকাশ করলেন না। একবারো এই মানুষগুলোর হত্যার বিচার চেয়ে কিছু বললেন না। কেন?’

গত ৫ নভেম্বর রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে অভিনেত্রী শমী কায়সারকে আটক করেছে পুলিশ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় একজন আহত হওয়ার ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় শমী কায়সারের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করা হয়েছিল। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাকে উত্তরা পূর্ব থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

শমী কায়সার প্রথম বিয়ে করেন ১৯৯৯ সালে। ভারতীয় নির্মাতা রিঙ্গোকে। দুবছর পর তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ২০০৮ সালের ৬ অক্টোবর শমী কায়সার বিয়ে করেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আরাফাত এ রহমানকে। সেই সংসার টেকেনি। পরে আরাফাত তথ্য প্রতিমন্ত্রী হন। ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৃতীয়বারের মতো ব্যবসায়ী রেজা আমিন সুমনকে বিয়ে করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে তরুণদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন শমী কায়সার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগে শমী কায়সারের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা হয়। গত ৯ অক্টোবর সৈয়দ হাসান মাহমুদ নামে বিএনপির এক কর্মীকে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ঢাকার সিএমএম আদালতে শমীর নামে মামলা করেন। ওই মামলায় শমী কায়সার ছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত অভিনেত্রী তারানা হালিম, কণ্ঠশিল্পী মমতাজসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়।
শমী কায়সারের জন্ম ১৯৭০ সালে।

এমআই/আরএমডি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version