Site icon Amra Moulvibazari

৪ ছাত্রশিবির নেতাকে গুলি করে পঙ্গু করা হয়

৪ ছাত্রশিবির নেতাকে গুলি করে পঙ্গু করা হয়


আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুলিতে পঙ্গু হওয়া বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪ নেতা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে এসে ভিকটিম ছাত্রশিবির নেতারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন। এসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও সহকারী আইন সম্পাদক আমানুল্লাহ আদিব।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের এ চার নেতা হলেন, মো. আবুজর গিফারী, ওমর আলী, মো. রুহুল আমিন ও ইস্রাফিল হোসেন। মো. আবুজর গিফারী ২০১৫ সালে গুম হওয়ার সময় জয়পুরহাট জেলার ছাত্রশিবিরের সভাপতি এবং ওমর আলী একই জেলার ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারী ছিলেন।

অপরদিকে মো. রুহুল আমিন ছাত্রশিবিরের যশোর জেলা পশ্চিম চৌগাছা উপজেলার সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন এবং ইস্রাফিল হোসেন একই থানার সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

ছাত্রশিবিরের আইন সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসন আমলে ছাত্রশিবিরের ওপর সর্বোচ্চ বর্বরতা চালানো হয়। অভিযোগ দায়েরকারী চার শিবির নেতা এই বর্বরতার শিকার। পুলিশের বর্বর নির্যাতনের কারণে তাদের পা কেটে ফেলা হয়েছে এবং কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে। রাত ৩টার দিকে আবুজর গিফারী ও ওমর আলীর পায়ে গুলি করা হয়। একইভাবে রুহুল আমিন ও ইস্রাফিল হোসেনকে গভীর রাতে নির্জন স্থানে নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ পড়ানো হয় এবং চোখ বাঁধা অবস্থায় তাদের দুজনের দু পায়ে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়।

ভিকটিম ছাত্রশিবির নেতা আবুজর গিফারী বলেন, আমার পায়ে গুলি করার পর শুধু ড্রেসিং ও রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। আমাদের ভাইরা অনেক চেষ্টা করেছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। বার বার আবেদন করার পরও আমাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। অবশেষে আমাদের পা গুলো বিনা চিকিৎসায় পচে যায়। পরে ঢাকায় এসে ডাক্তার সিদ্ধান্ত দেন পা কেটে ফেলতে হবে।

ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা অভিযোগে যা বলা হয়েছে

২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর জেলা শাখার বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য জয়পুরহাট থেকে হানিফ বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন আবুজর গিফারী ও ওমর আলী। আব্দুল্লাহপুর আসলে ৯ ডিসেম্বর সকাল ৬টার দিকে সাদা পোশাকে র্যাব পরিচয়ে দুজনকেই মাইক্রোবাসে উঠিয়ে উত্তরা র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।

১৫ ডিসেম্বর সকাল ১১টার দিকে তাদেরকে মাইক্রোবাসে করে হাত এবং চোখ বেঁধে রাজশাহী র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১৫ ডিসেম্বর রাত এবং ১৬ ডিসেম্বর সারাদিন আবারো চালানো হয় অবর্ণনীয় নির্যাতন। ১৬ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে রাজশাহী থেকে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় পাঁচবিবি থানায় শিমলতলী এলাকায়। অতপর সেখান থেকে তাদের সঙ্গে বোমা ও অস্ত্র দিয়ে দেওয়া হয়। তারপর তাদেরকে রাত ৪টার দিকে জয়পুরহাট র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়।

১৭ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় আবারো শুরুহয় জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্মম নির্যাতন। এরপর সকাল ১০ টার দিকে অস্ত্র এবং বোমাসহ সংবাদ সম্মেলন করেন জয়পুরহাট র্যাবের তৎকালীন মিডিয়া উইং। দুপুরে পাঁচবিবি থানার কাছে তাদেরকে অস্ত্র মামলা দিয়ে হস্তান্তর করা হয়।

সেখানে রাত ২টা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশ নির্যাতন চালায়। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে তাদেরকে হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় আওলায় ইউনিয়নের একটি পরিত্যক্ত জায়গায়। পুলিশ দুজনের হাঁটুতে গুলি করে পা ঝাঁঝরা করে দেয়। তাদেরকে স্থানীয় হসপিটালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে রেফার করে দেয়। সেখানেও তাদের চিকিৎসা না দিয়ে ঢাকার পঙ্গু হসপিটালে রেফার করে দেয়। ২জনেরই প্রচুর রক্তক্ষরন হওয়ায় মাংস ৭৫ শতাংশ পঁচে যাওয়ায় ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ তে দুজনের অনুমতি সাপেক্ষে ২টি পা কেটে ফেলা হয়।

মো. রুহুল আমিন এবং ইস্রাফিল হোসেনের গুমের ঘটনা:

২০১৬ সালের ৩ আগষ্ট সাংগঠনিক কাজ শেষ করে রুহুল আমিন বাড়ি যাওয়ার পথে চৌগাছা থানার ১ জন এস আই তাদেরকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। ৪ আগষ্ট তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে আবার চৌগাছা থানায় নিয়ে আসার পথে কয়ারপাড়া এলাকায় আসলে দুজনেরই দুই হাতে হ্যান্ডকাপ পড়ানো হয় এবং চোখ বেঁধে ফেলা হয়।

গভীর রাতে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বন্দুলিতলার নির্জন মাঠে। সেখানে নিয়ে দুজনের হাঁটুতে পুলিশ গুলিকরে পা ঝাঁঝরা করে দেয়। সেখান থেকে তাদেরকে উপজেলা সরকারী হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই তাদের রেফার করা হয় যশোর সদর হসপিটালে। সেখানে ২দিন চিকিৎসার পর কোন উন্নতি না হওয়ায় তাদেরকে ঢাকার পঙ্গু হসপিটালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভর্তি হওয়ার ৭দিন পর ডাক্তার পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত দেয়। ইত্যেমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার করে যে বন্ধুক যুদ্ধে ২ শিবির নেতা আহত।

এফএইচ/এসআইটি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version