Site icon Amra Moulvibazari

‘বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধ কি না সেটা কি তোমার থেকে জানতে হবে?’

‘বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধ কি না সেটা কি তোমার থেকে জানতে হবে?’


পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) ছাত্র রাজনীতিসহ সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয় গত ১৩ আগস্ট। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের প্রকাশ্য কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণসংযোগ চালিয়েছে ছাত্রদল। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে গণসংযোগ করার বিষয়ে জানতে ফোনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান সুমিতকে কল দিলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধ কি না সেটা কি তোমার থেকে জানতে হবে? আমরা সেখানে কোনো গণসংযোগ করিনি। তবে একটা মতবিনিময় সভা করেছি। আমি ব্যস্ত আছি। তুমি আমার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা কইরো।’

রোববার (৩ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠের পশ্চিমে মুক্তমঞ্চের পাশে শিক্ষার্থীদের মাঝে গণসংযোগ চালায় ছাত্রদল। এতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান সুমিত, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাইয়্যুমুল হাসান ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফারহান আরিফ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তব্য উপস্থাপনের পাশাপাশি তাদের মাঝে ছাত্রদলের ‘গৌরবোজ্জ্বল অতীত; সংগ্রামী বর্তমান ও আগামীর প্রতিশ্রুতি’ এবং ‘তারেক রহমান কর্তৃক জাতির সামনে উপস্থাপিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ সম্বলিত দুটি বই বিলি করেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সকালে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমন উপলক্ষে প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ৫০ জনের মতো নেতাকর্মী জড়ো হন। এরপর কেন্দ্রীয় নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এলে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন নেতাকর্মীরা। পরে কর্মীদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতাদের গণসংযোগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন শাখা ছাত্রদলের নেতারা।

প্রায় এক ঘণ্টার গণসংযোগকালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্রদল নিয়ে মতামত শোনেন। পরে ছাত্রদলের দলীয় কর্মসূচির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা হয়।

রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ছাত্রদলের এমন কার্যক্রমে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, রাজনীতিমুক্ত একটি ক্যাম্পাসে এভাবে গণসংযোগ করা এবং দলের বই-পুস্তক বিতরণ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনভঙ্গের শামিল।

পাবিপ্রবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ এটা সবাই জানে। ছাত্রদলের উচিত ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা। কিন্তু তারা সেটা না করে প্রকাশ্যে গণসংযোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু নামেই রাজনীতি করেছে, আমরা এর বাস্তব কোনো প্রতিফলন দেখতে পাই না।’

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মজনু আলম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত মতাদর্শ থাকবে, সেটা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা ক্যম্পাসের অভ্যন্তরে কোনো রাজনীতি চাই না।’

এদিকে পরে ফোন করে প্রতিবেদকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ছাত্রদল নেতা মাসুদুর রহমান সুমিত। তিনি বলেন, ‘আপনার সাংবাদিক পরিচয় আমি শুনতে পাইনি। প্রথমে ভাবছি আপনি ছাত্রদলের কেউ, এজন্য রাগ করে বলছি, তুমি তো সেখানেই ছিলা না।’

মাসুদুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সিন্ডিকেটের যেকোনো সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। তবে এই ক্যাম্পাসে কমিটি আছে। তাদের কেউই ক্যাম্পাসে ছিল না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘আমি এ মুহূর্তে ক্যাম্পাসের বাইরে আছি। বিষয়টি মাত্র জানলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টিকে সমর্থন করে না। আমি ক্যাম্পাসে এসে বিষয়টির তদন্ত করবো। কারা এটার সঙ্গে জড়িত সেটা খুঁজে বের করবো।’

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version