নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে ৯ রানে হারিয়ে আসরের প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করলো অস্ট্রেলিয়া। আগে ব্যাট করতে নেমে গ্রেস হ্যারিস, এলিসা পেরি ও তাহলিয়া ম্যাকগ্রার ব্যাটের ওপর ভর করে ৮ উইকেটে ১৫১ রান সংগ্রহ করে অজিরা। লক্ষ্য তাড়ায় ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের ব্যাটে জয়ের সম্ভাবনা জেগেছিল ভারতের। হারমানপ্রীত লড়াই চালিয়ে যান শেষপর্যন্ত। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৪ রান। তখন অস্ট্রেলিয়ার বোলার অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড ঝলক দেখান। তার দু’টি উইকেটের পাশাপাশি ওভারটিতে চার উইকেট তুলে নেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ফলে টানা নবমবারের মতো নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিতে পৌছায় এলিসা হিলির দল।
রোববার (১৩ অক্টোবর) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক তাহলিয়া ম্যাকগ্রা। অজিদের নিয়মিত অধিনায়ক এলিসা হিলি চোট পাওয়ায় এদিন অস্ট্রেলিয়ার নেততৃ দেন তিনি। আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই রেনুকা সিংয়ের বোলিং তোপে মাত্র ১৭ রান তুলতেই বেথ মুনি ও জর্জিয়া ওয়্যারহ্যামের উইকেট হারায় অজিরা।
তবে অজি অধিনায়কের পরিবর্তে ওপেনিংয়ে নামা গ্রেস হ্যারিসের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। হ্যারিস করেন, ৪২ বলে ৪০ রান। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তাহলিয়া ম্যাকগ্রা ২৬ বলে ৩২ এবং এলিসা পেরি ২৩ বলে ৩২ রান তোলেন। শেষ অবধি অজিদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১৫১ রান। ভারতের দীপ্তি শর্মা ও রেনুকা সিং দুটি করে উইকেট নেন।
১৫২ রান তাড়ায় জয়ের জন্য ভারতের যেমন শুরু প্রয়োজন ছিল সেটাই করেছিলেন স্মৃতি মান্ধানা ও শেফালি ভার্মা। প্রথম তিন ওভারে তারা দুজনে মিলে বিনা উইকেটে ২৫ রান যোগ করেছিলেন। তবে ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তাদের জুটি ভাঙেন অ্যাশলে গার্ডনার। ডানহাতি স্পিনারের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল ডেলিভারিতে লং অনের উপর দিয়ে ছক্কা মারার চেষ্টায় অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন শেফালি। দারুণ শুরু করা ওপেনারকে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে ১৩ বলে ২০ রানের ইনিংস খেলে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পঞ্চমবারের মতো গার্ডনারের বলে আউট হয়েছেন শেফালি। আরেক ওপেনার মান্ধানা ফিরেছেন পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই। সোফি মোলিনিউয়ের গুড লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাকফুটে গিয়ে পুল করতে চেয়েছিলেন মান্ধানা। তবে বল খানিকটা নিচু হওয়ায় প্যাডে আঘাত করে। আম্পায়ার শুরুতে আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে ৬ রান করা ভারতের ওপেনারকে ফেরায় অস্ট্রেলিয়া। সবমিলিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৪১ রান তুলতে ২ উইকেট হারাতে হয় ভারতকে।
তিনে নেমে শুরুটা বেশ ভালো করেছিলেন জেমাইমা রদ্রিগেজ। তবে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এসেছেন তিনি। মেগান শুটের লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে থাকা গার্ডনারকে ক্যাচ দিয়েছেন ১৬ রান করা জেমাইমা। পাঁচে নামা দীপ্তি শর্মাকে দ্রুতই ফেরানোর সুযোগ ছিল অস্ট্রেলিয়ার। তবে সাদারল্যান্ডের স্লোয়ার ডেলিভারিতে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিলেও সেটা লুফে নিতে পারেননি মোলিনিউ।
ব্যক্তিগত ১৫ রানের সময় জীবন পেয়েছেন হারমানপ্রীতও। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে ক্যাচ নিতে পারেনি ডার্সি ব্রাউন। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ৬৩ রানের জুটি গড়েন হারমানপ্রীত ও দীপ্তি। তাদের দুজনের জমে ওঠা জুটি ভাঙেন মোলিনিউ। বাঁহাতি স্পিনার বলে মিড উইকেটর উপর দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা জর্জিয়া ওয়ারেহামকে ক্যাচ দিয়েছেন। ভারতের অলরাউন্ডার ফিরেছেন ২৫ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলে।
পরের ওভারে ফিরে গেছেন রিচা ঘোষও। শুটের বলে কভার পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়েছেন ভারতের উইকেটকিপার ব্যাটার। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ভারতকে জয়ের আশা দেখাচ্ছিলেন হারমানপ্রীত। দলের বিপর্যয়ের মুখে ৪৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে ওভারের প্রথম বলে এক রান নিয়েছেন হারমানপ্রীত কৌর। দ্বিতীয় বলে অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের স্লোয়ার ফুলটসে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে ফেরেন পূজা ভাস্তকর। পরের বলে ফিরেছেন অরুন্ধুতি রেড্ডিও। হারমানপ্রীতকে স্ট্রাইক দিতেই নিজের উইকেট বিসর্জন দিয়েছেন তিনি। শেষ তিন বলে যখন ১৩ রান প্রয়োজন তখন আরও একবার সিঙ্গেল নিয়েছেন ভারতের অধিনায়ক। তাতে জয়ের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় ভারতের। শেষ ওভারে সব মিলিয়ে ৪ রান তুলতে ৪ উইকেট হারায় তারা। এমন অবস্থায় হারমানপ্রীতের অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংস কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে।
এই হারে সেমির আশা ক্ষীণ বলা চলে ভারতের। ৪ ম্যাচ থেকে ভারতের সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। নিউজিল্যান্ড তাদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের মেয়েদের হারালে ভারতের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে।
/আরআইএম