Site icon Amra Moulvibazari

বাবা সিদ্দিক নিহতের ঘটনায় কোন গ্যাং জড়িত?

বাবা সিদ্দিক নিহতের ঘটনায় কোন গ্যাং জড়িত?


ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহে কাজ করছে পুলিশ। ছবি: হিন্দুস্তান টাইমস।

বন্দুকধারীদের গুলিতে মারা গেছেন মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী ও ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির নেতা বাবা সিদ্দিক। শনিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় অস্ত্রধারীদের ছোঁড়া বুলেটে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।

ছেলের অফিসের সামনে বাবা সিদ্দিককে লক্ষ্য করে আনুমানিক ৬টি গুলি ছোড়ে বন্দুকধারীরা। যার মধ্যে চারটি গুলিবিদ্ধ করে তাকে। হামলার সময় আহত হন তার এক সহযোগীও।

এরপর, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে লিলাবতী হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে সেখানেই মৃত্যু হয় তার। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে উত্তর প্রদেশ ও হরিয়ানা থেকে আটক করা হয়েছে দুইজনকে। 

হামলায় কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে?

প্রাথমিকভাবে ঘতনাস্থল থেকে বুলেটের শেল সংগ্রহ করেছে পুলিশ। তবে, কি ধরনের বন্ধুক ব্যবহার করা হয়েছে, তদন্তের স্বার্থে তা উল্লেখ করা হয়নি। দেশি কাট্টা অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।

হঠাৎ করে এই নেতাকে হত্যার পেছনে আসল কারণ কী?

এমন প্রশ্নের জবাবে মুম্বাই পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাবা সিদ্দিকের হত্যা একটি পূর্বপরিকল্পিত কাজ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কন্ট্রাক্ট কিলিং, ব্যবসায়িক শত্রুতা বা বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্পের সাথে সম্পর্কিত হুমকি সহ বিভিন্ন দিক থেকে মামলাটি তদন্ত করছে অপরাধ শাখা।

তিনি আরও জানান, এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সন্দেহভাজনদের অগ্রিম অর্থ দেয়া হয়েছে। তবে, এখন-ই কোন বিষয় নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

দুই অভিযুক্ত হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হলেও, অন্য একজন সন্দেহভাজন পলাতক রয়েছে। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছে পুলিশের এই কর্মকর্তা।

গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজনরা কারা?

গ্রেফতারকৃতরা হলেন হরিয়ানার গুরমাইল বলজিৎ সিং (২৩) এবং উত্তর প্রদেশের ধর্মরাজ রাজেশ কাশ্যপ (১৯)। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর প্রাসঙ্গিক ধারায় হত্যার পাশাপাশি অস্ত্র আইন এবং মহারাষ্ট্র পুলিশ আইনের বিধানের অধীনে, মোট তিনজন সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে নির্মল নগর থানায় একটি মামলা ইতোমধ্যে নথিভুক্ত করা হয়েছে।

হামলা কি পূর্বপরিকল্পিত?

সংবাদ সংস্থা এএনআই, মুম্বাই পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে অভিযুক্তরা বাবা সিদ্দিক-এর বাড়ি এবং অফিস চত্বরে বেশ কয়েকবার তল্লাশি চালিয়েছিলো। এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় দেড় থেকে দুই মাস আগ থেকে-ই মুম্বাইয়ে অবস্থান করছিলো সন্দেহভাজনরা। সেই সাথে, বাবা সিদ্দিকের ওপর নজর রাখছিলো।

মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘিরে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। কারণ-আগামী মাসেই বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কোন গ্যাং জড়িত?

যদিও কিছু ভারতীয় সংবাদমাদ্ধমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাবা সিদ্দিকের হত্যায় গ্রেফতার হওয়া দুই সন্দেহভাজন দাবি করেছে যে তারা লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য।

এদিকে, এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই) জানিয়েছে, দিল্লি পুলিশ এই হত্যার তদন্ত করতে মুম্বাইতে একটি বিশেষ তদন্ত দল পাঠাবে।

বাবা সিদ্দিক হত্যাকাণ্ডের সাথে বলিউডে’র যোগসূত্র রয়েছে?

তবে, এই হত্যাকাণ্ডে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে ‘বলিউড’। বাবা সিদ্দিকের সাথে ‘বলিউড’-এর তারকের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। বিশেষকরে, সালমান খান, সুনীল দত্ত, সঞ্জয় দত্ত ও শাহরুখ খানের সঙ্গে আড্ডা দিতেন তিনি।

২০১৩ সালে, বাবা সিদ্দিকের পার্টিতেই ‘মানভঞ্জন’ হয় শাহরুখ ও সালমান-এর মধ্যে। দুই খানকে দু’পাশে নিয়ে তোলা তার ছবি স্মরণীয় হয়ে আছে।

এদিকে, বাবা’র মৃত্যুতে বলিউড অভিনেতা রীতেশ দেশমুখ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করে লিখেছেন, বাবা সিদ্দিকের মৃত্যুতে অত্যন্ত দুঃখিত এবং ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এই কঠিন সময়ে ঈশ্বর বাবা’র পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য ধারন করার ক্ষমতা দান করুণ। এই জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে-ই হবে।

মৃত্যুর আগে, স্থানীয় সময় শনিবার, সকাল ১১টায়, বাবা সিদ্দিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সে সবশেষ পোস্ট করে সবাই-কে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছিলেন, ‘শুভ দশেরা’।

ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির এই নেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিনডে। ৬৬ বছর বয়সী বাবা সিদ্দিক দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, তিনি অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপিতে যোগ দেন। মুম্বাইয়ের বান্দ্রা পশ্চিম থেকে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি।

/এআই



Exit mobile version