দীর্ঘ একযুগ পর ঘনিষ্ঠ মিত্র রাষ্ট্র সিরিয়া সফরে গেলেন ইরানের রাষ্ট্রপ্রধান। ইব্রাহিম রইসির সাথে বৈঠকের মাধ্যমে আবারও আন্তর্জাতিক দৃশ্যপটে বাশার আল আসাদ। তেহরানের আশ্বাস, পশ্চিমাদের অবরোধ-নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, সিরিয়ার পাশে থাকবে তারা। এদিকে, বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন বাস্তবতায় মধ্যপ্রাচ্যে আবারও গুরুত্ব বাড়ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার। খবর এপি’র।
সিরিয়ার আসাদ পরিবারের সাথে ইরানের সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দামেস্কের কঠিন বিপদেও সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে পাশে ছিলো তেহরান। অথচ, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার মাটিতে ইরানের কোনো প্রেসিডেন্ট পা রাখলেন, দীর্ঘ ১২ বছর পর।
বুধবার (৩ মে) দামেস্ক পৌছেই, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বেশকিছু বাণিজ্যিক চুক্তিতে সই করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রঈসি। তবে, এসব বৈঠক বা চুক্তি নয়, ইরানি প্রেসিডেন্টের সফরকে দেখা হচ্ছে, বাশার আল আসাদের প্রতি সমর্থনের প্রমাণ হিসেবে। এদিন দুই নেতাই একসুরে সমালোচনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি বলেন, সিরিয়ায় মার্কিনীদের অবস্থান কখনই এ অঞ্চলের জন্য নিরাপদ নয়। যেকোনো মুহূর্তে পুরো অঞ্চলের সুরক্ষা কাঠামোকে টালমাটাল করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদ। যতো দ্রুত আমেরিকানরা এ ভূখণ্ড ছাড়বে, ততো আশঙ্কামুক্ত হবে দামেস্ক। এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সিরিয়ার অখণ্ডতা বজায় রাখা।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদ কমানোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করছি আমরা। দখলদার বাহিনী কবে নাগাদ সেনা প্রত্যাহার করবে- তা নিয়েই এখন চিন্তিত আমরা। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করতে পারলে; স্বাভাবিকভাবেই শান্তি আসবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের কারণেই ইরানি প্রেসিডেন্টের সিরিয়া সফর। চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি-ইরান দূরত্ব ঘোচানোর পর, দামেস্কের গুরুত্ব বাড়ছে এ অঞ্চলে। যেখানে গত এক দশকের গৃহযুদ্ধে বাশার আল আসাদের টিকে থাকাই কঠিন ছিলো, সেই তিনি আবারও ফিরছেন, বৈশ্বিক দৃশ্যপটে।
এ প্রসঙ্গে দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বাসেম আবু আবদুল্লাহ্ বলেন, এক দশকের যুদ্ধ-সংঘাতে যে কিছুই হাসিল হয়নি সেটা এখন পরিষ্কার। সহিংসতার অবসানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- সেটি এ অঞ্চলের নেতৃবৃন্দকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে চীন। সে কারণেই, নতুন অর্থনৈতিক চুক্তিতে আগ্রহী তাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র ইরান। সৌদি আরবও পাল্টাচ্ছে মনোভাব। কারণ, যুবরাজ জানেন, ভিশন-টোয়েন্টি থার্টির সাফল্যের জন্য কূটনীতি-অর্থনীতি দুটোই প্রয়োজন।
তবে সিরিয়ার সাথে প্রতিবেশীদের নতুন এ সখ্যতাকে স্বাভাবিকভাবেই ভালোভাবে নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র।
এ প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, ইরান-সিরিয়ার মধ্যে গভীর সম্পর্ক সত্যিই উদ্বেগের। দু’দেশের নতুন চুক্তি ওই অঞ্চলে মার্কিন মিত্র বা সহযোগীদের জন্যেই শুধু নয়; বরং- পুরো বিশ্বের জন্য দুঃশ্চিন্তার কারণ। জোট বেঁধে প্রতিবেশী দেশগুলোয় তারা ছড়াচ্ছে অস্থিতিশীলতা।
প্রসঙ্গত, এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালে সিরিয়া সফরে যান ইরানি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। তারপরের বছরই দেশটিতে শুরু হয় যুদ্ধ-সংঘাত। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান ও রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কারণেই, টিকে গেছে আসাদ পরিবার।
/এসএইচ