Site icon Amra Moulvibazari

বাবা-মায়ের সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি

বাবা-মায়ের সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি


সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা মহান রাব্বুল আলামিনের পর একজন মানুষের ওপর সবচেয়ে বেশি ইহসান ও অনুগ্রহ থাকে তার বাবা মায়ের। মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন, জন্মদান করেন, স্তন্যদান করেন, কোলে-পিঠে বড় করেন। বাবা দিনরাত পরিশ্রম করে তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালন করেন। তার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করতে সচেষ্ট থাকেন।

বাবা মায়ের অপরিসীম অনুগ্রহের ঋণ শোধ করার সামর্থ্য কোনো সন্তানের নেই। পৃথিবীতে সন্তানের জন্য বাবা মায়ের চেয়ে বেশি নিঃস্বার্থ কল্যাণকামীও আর কেউ নেই। তাই সন্তানের কর্তব্য বাবা মায়ের নেক নির্দেশ মেনে চলা, তাদের খুশি ও সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা, কোনোভাবেই তাদের কষ্ট না দেওয়া। বাবা-মায়ের সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্ট হন, বাবা-মায়ের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অষন্তুষ্ট হন।

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, বাবা-মায়ের সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি, তাদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (সুনানে তিরমিজি: ১৯০০)

কোরআনে আল্লাহ তাআলা নিজের ইবাদতের সাথে যুক্ত করে বাবা মায়ের প্রতি উত্তম আচরণ ও ইহসানের আবশ্যকীয়তা বর্ণনা করেছেন। বাধ্যক্যে উপনীত বাবা-মায়ের সেবা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের কোনো আচরণে বিরক্তি প্রকাশ করতেও নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং বাবা-মায়ের সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। তাদের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন’। (সুরা ইসরা: ২৩, ২৪)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বাবা মায়ের প্রতি সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়ে মায়ের কষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আমি মানুষকে তার মা-বাবা প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। (সুরা আহকাফ: ১৫)

হাদিসে আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় কাজ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সবচেয়ে উত্তম উপায় হিসেবে নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদতের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে বাবা-মায়ের সাথে উত্তম আচরণ ও তাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের কথা। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি নবিজিকে (সা.) প্রশ্ন করলেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল কি? নবিজি (সা.) বললেন, যথাসময়ে নামাজ আদায়। তিনি বললেন, তারপর কোনটি? নবিজি (সা.) উত্তর দিলেন, বাবা-মায়ের সাথে উত্তম আচরণ করা। (আল লুলু ওয়াল মারজান: ৫২)

বাবা-মায়ের সাথে সম্পর্ক রক্ষা, তাদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন ও উত্তম আচরণের প্রতিদান পাওয়া শুরু হয় দুনিয়াতেই। বাবা মায়ের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করলে দুনিয়াতে সমৃদ্ধি ও বরকত আসে। আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করে দেন। প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়িয়ে দেন। হায়াত বাড়িয়ে দেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি চায় যে, তার রিজিকে সমৃদ্ধি আসুক এবং আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখে। (সহিহ বুখারি: ২০৬৭)

একইভাবে বাবা মাকে কষ্ট দেওয়া, তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তিও দুনিয়া থেকেই শুরু হয়। আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, বিদ্রোহ ও রক্তসম্পৰ্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মতো মারাত্মক আর কোন পাপ নেই, আল্লাহ তাআলা যার শাস্তি পৃথিবীতেও প্রদান করেন এবং আখিরাতের জন্যও অবশিষ্ট রাখেন। (সুনানে তিরমিজি: ২৫১১)

উল্লিখিত দুটি হাদিসে ব্যাপকভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার পুরস্কার ও ছিন্ন করার শাস্তি বর্ণনা করা হয়েছে। পৃথিবীতে আমাদের প্রথম ও সবচেয়ে কাছের আত্মীয়তা বাবা-মায়ের সাথে। আমাদের ওপর তাদের অধিকার সবচেয়ে বেশি। তাই এই দুটি হাদিসে বর্ণিত পুরস্কার ও শাস্তি তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা না করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পযোজ্য।

ওএফএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version