সিনিয়র করেসপনডেন্ট, নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার মেয়র পদে মনোনয়ন পেয়েছেন শিশু নির্যাতনে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা হালিম সিকদার। তার বিরুদ্ধে তিন শিশুকে মারধরের পর তাদের মধ্যে দুজনের চুল কেটে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় গোপালদী পৌর মেয়র পদে হালিম সিকদারের নাম আছে। এ ছাড়া আড়াইহাজার পৌরসভায় মেয়র পদে বর্তমান মেয়র সুন্দর আলী আবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
হালিম সিকদার আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ২০১৩ ও ২০১৮ সালের পর টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি গোপালদী পৌরসভা মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেলেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি চুরির অভিযোগে তিন শিশুকে মারধরের পর গ্রাম ঘুরিয়ে দুই শিশুর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি হালিম সিকদার।
অবশ্য শিশু নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে হালিম সিকদার বলেন, এই কাজ আমি করিনি। মামলার বাদী এবং শিশুদের পরিবারও আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছে। মানুষ এগুলো বিশ্বাস করে না। ভোটের মাঠেও এর কোনো প্রভাব নেই।
যদিও গত ৬ ফেব্রুয়ারি চুল কেটে দেয়ার ঘটনাটিকে ‘শাসন’ দাবি করেছিলেন হালিম সিকদার। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আর যেন কেউ চুরি না করে, সে জন্য তাদের শাসনের পর সুন্দর করে চুল কেটে দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।’ ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ আদালতে এসে নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর শিশুদের চুল কেটে দেয়ার ঘটনাকে ‘এক ধরনের শাসন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
হালিম সিকদারকে শিশু নির্যাতনকারী উল্লেখ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনির হোসেন বলেন, ‘হালিম সিকদার একজন চিহ্নিত শিশু নির্যাতনকারী। ৭, ৮ ও ১১ বছর বয়সী তিন শিশু খেলার ছলে একটি লোহার টুকরা হাতে নেয়ায় তিনি ওই শিশুদের মারধরের পর হাত বেঁধে গ্রাম ঘুরিয়েছেন। পরে দুই শিশুর মাথার চুল কেটে দেন। শুধু তা–ই নয়, বিষয়টি কাউকে জানালে শিশুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে গ্রামছাড়া করার হুমকিও দিয়েছেন বলে দাবি মনির হোসেনের। তাকে ফের মনোনয়ন দেয়ায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ বলেও জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।
প্রসঙ্গত, গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে চুরির অভিযোগে আড়াইহাজারে রামচন্দ্রদী বাজারে ৭, ৮ ও ১১ বছর বয়সী তিন শিশুকে মারধরের পর হাত বেঁধে গ্রাম ঘুরিয়ে দুই শিশুর মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। এ ঘটনার পরদিন নির্যাতনের শিকার এক শিশুর বাবা বাদী হয়ে গোপালদী পৌরসভা মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হালিম শিকদারসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে আড়াইহাজার থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ মামলার দুই আসামিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর থেকে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের মামলা ও হামলার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠে মেয়রের বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ঘটনার তদন্ত করা হয়। মেয়রের বিরুদ্ধে করা মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্তের ভার নেয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস কান্তি রায় মামলাটির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মেয়রসহ মামলার সব আসামি এখন জামিনে আছেন। আমরা শিগগিরই মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দেবো।
এসজেড/