Site icon Amra Moulvibazari

তীব্র গরম থেকে বাঁচতে যা যা করণীয়

তীব্র গরম থেকে বাঁচতে যা যা করণীয়


বাড়ছে গরম। সঙ্গে বাড়ছে হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোকের ঝুঁকি। হিট স্ট্রোকের কিছু লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো জানা থাকলে নিজে যেমন সচেতন থাকা যায়, অন্যদের দিকেও খেয়াল রাখা যায়।

এই তীব্র গরমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক চিকিৎসকই নানান পরামর্শ দিচ্ছেন। এরকমই একজন ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অস্টিন’য়ের ‘মেডিসিন পালমোনারি ক্রিটিকাল কেয়ার’ বিভাগের অধ্যাপক রুমি আহমেদ খান। ‘হিট স্ট্রোক’ ও ‘হিট এক্সহশন’য়ের ঝুঁকি এড়াতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি। তার স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো।

তিনি লিখেছেন, ঢাকার তাপমাত্রা এখন প্রতিদিনই চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠছে! শুনলাম এই সপ্তাহে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ (৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে) করার সম্ভাবনা রয়েছে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জেলায়। এই তাপমাত্রায় দিনের পর দিন বাইরে থাকলে বা কাজ করলে হিট এক্সহশন বা হিট স্ট্রোক হয়ে যাবার সম্ভাবনা খুব বেশি! হিট স্ট্রোক একটা মেডিকেল ইমার্জেন্সি এবং অতি দ্রুত স্পেসিয়ালাইজড মেডিকেল ফ্যাসিলিটিতে না নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালে মৃত্যুর সম্ভাবনা খুব বেশি!

এই গরমে বেশিক্ষণ বাইরে থাকার কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়! আমাদের শরীর খুব তাপমাত্রা সেনসিটিভ! তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে আমাদের বডি বিভিন্নভাবে তাপমাত্রা কমাতে কাজ শুরু করে দেয়! প্রধানতম পদ্ধতি হচ্ছে ঘাম তৈরি করে! যখন আমাদের বডির সারফেস থেকে ঘাম ইভাপোরেট হয়ে শুকায়- তা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনে! তবে এই ঘামের মাধ্যমে তাপমাত্রা কমানোর একটা লিমিটেশন আছে! হিউমিডিটি যদি ৭৫% এর বেশি হয় তাহলে এই পদ্ধতি খুব একটা কাজ করে না! আমি চেক করলাম- ঢাকার আজ হিউমিডিটি হচ্ছে ৭৮%!

অতিরিক্ত গরমের কারণে কী কী সমস্যা হতে পারে সেটি ব্যাখ্যা করেছেন রুমি আহমেদ। তিনি লিখেছেন, প্রথম ধাপে যা হয় তা হচ্ছে হিট ক্রাম্প! অতিরিক্ত ঘামের কারণে লবণ ও পানির অভাব হয় এবং এর প্রভাবে মাসল (বিশেষ করে পায়ের) মাসল ক্র্যাম্প (কামড়ানো) শুরু করে! এরপর হচ্ছে এক্সহশন! হিট এক্সহশন এক দফায় হিট এক্সপোজারের কারণে না হয়ে অনেক দিনের কিউমিলিভ এফেক্টে হতেও পারে! যেমন আপনি পর পর তিন চারদিন দু’তিন ঘণ্টা করে বাইরে গরমে থাকলেন! তারপর পাঁচদিনের দিন আপনার হিট এক্সহশনের সিম্পটম শুরু হলো! যারা বয়স্ক, যারা অতিরিক্ত শুকনা বা ওবিজ, শিশু- প্রেগন্যান্ট, যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে- এরাই বেশি ভালনারেবল!

হিট এক্সহশনের লক্ষণ হচ্ছে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, দুর্বলতা, মাথা ধরা, মাথা ব্যথা, বমিবমি ভাব আর ফেইন্ট ভাব হওয়া! থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে দেখতে পারেন হিট এক্সহশন কনফার্ম করার জন্য! হিট এক্সহশনের এক পর্যায়ে শ্বাস প্রশ্বাস ও হার্ট রেট দ্রুত হতে শুরু করবে!

কীভাবে চিকিৎসা করবেন হিট এক্সহশনের!

প্রথম কাজ- ছায়ায় নিয়ে আসুন রুগীকে! রিহাইড্রেশন করুন! ওরস্যালাইন সবচেয়ে ভালো! শুধু ঠান্ডা পানি হলেও চলবে প্রথমে! আসে পাশে পুকুর থাকলে গলা পর্যন্ত পুকুরের পানিতে নামিয়ে দিন! পুকুর না থাকলে বাথটাবে শুইয়ে দিন এবং পানির মধ্যে কিছু বরফ ঢেলে দিন! তাও না থাকলে ঠান্ডা পানিতে গোসল করিয়ে দিন। তারপর টেবিল ফ্যান দিয়ে শরীর শুকিয়ে দিন। টেম্পারেচার না নামলে আবার ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে দিন এবং ম্যাক্স স্পিড টেবিল ফ্যান দিয়ে শরীর শুকিয়ে দিন!

মনে রাখতে হবে ঠান্ডা পানির রিহাইড্রেশন খুব জরুরি! তবে এটাও মনে রাখতে হবে শুধু পানি অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে! সে জন্য ওরস্যালাইন উপকারী! যদি হিট এক্সহশনের ঠিকমতো চিকিৎসা করা না যায় অথবা ডায়াগনোসিস করা না যায়- হিট স্ট্রোক হয়ে যাবার সম্ভাবনা খুব বেশি! যদি দেখেন স্কিন শুকনা লাল হয়ে গিয়েছে; ঘাম হচ্ছে না, পালস হাই হয়ে গিয়েছে, রোগী উল্টা পাল্টা কথা বলছে অথবা কোনো কথা বলছে না অথবা রোগী অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে- তখন হিট স্ট্রোক সন্দেহ করুন!

এরপরের ধাপে একের পর এক অর্গান ফেইল করা শুরু করবে! প্রথমে ব্রেইনের নিউরোনগুলো ড্যামেজ হবে। এরপর আমাদের লিভার ও রক্তনালীর সেলগুলোর ড্যামেজ শুরু হবে! ইভেঞ্চুয়ালি সব অর্গানই ফেইল করবে! রোগী এই অবস্থায় পৌঁছে গেলে উপরের স্টেপগুলো তো নিতে হবেই- যত দ্রুত সম্ভব আইসিইউ আছে এমন হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে! তবে রোগীকে ঢাকা পাঠানোর নামে আরও দশ ঘণ্টা গরমের মধ্যে ঢাকার পথে ট্রাফিক জামে ফেলে রাখার কোনো মানে হয় না!

আপনার স্থানীয় ঔষধের দোকানের স্বত্বাধিকারীকে বলুন কিছু স্যালাইনের ব্যাগ ফ্রিজে রেখে দিতে (ডিপ ফ্রিজ নয়)! রোগীকে ওই ঠান্ডা স্যালাইন ইন্টারভিনাস দিতে পারলেও অনেক কাজ হবে! তবে মূল লক্ষ্যটা হবে কেউই যাতে হিট এক্সহশন পর্যায়ে না যায়! ঘরের বাইরে যেতে হলে- সাথে বড় ঠান্ডা পানির ফ্লাস্ক বা বোতল রাখুন এবং কিছু পরপর পানি খেয়ে মুখ ভিজিয়ে রাখুন! শিশুরা যারা বাইরে স্কুলে যায়, মাঠে দৌড়া দৌড়ি করে তাদেরকে স্কুলে না পাঠানোই ভালো! স্কুলেতো আর এসি নেই! বেশি রিস্কি গরম পড়লে স্কুল বন্ধ করে দেয়াই ভালো! আমি শিউর না এখন দেশের স্কুলগুলো রোজার জন্য বন্ধ কিনা!

যতো হালকা পাতলা খোলামেলা পোশাক পরা যায় ততো ভালো! তবে আমাদের ধর্মীয় রক্ষণশীল সমাজে নারীদের জন্য এই এডভাইসটা তো প্র্যাকটিকাল না! ওনাদের এই সময়গুলোতে ঘরের বাইরে বের না হওয়াটাই সেফ! আরেকটা কথা নারীরা কিন্তু ঘরের ভিতরে রান্না ঘরে একটা রিস্কি এনভায়রনমেন্ট আছেন! গরমের দিন রান্না ঘরের তাপমাত্রা অন্যান্য রুমের চেয়ে অনেক বেশি! এই ব্যাপারটাও অনুগ্রহ করে মাথায় রাখবেন!

ইউএইচ/



Exit mobile version