সকাল দেখে নাকি বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে? এটা আসলে প্রবচনের মত। তবে কখনো কখনো তার উল্টোটাও ঘটে। ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনের সকালটা মনে হয় ঠিক তেমনি। সকালে মনে হচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে অনিবার্য্য পরিণতির মুখে বাংলাদেশ।
কারণ, আগের দিনের তিন উইকেটে ১০১ রান নিয়ে খেলতে নামা শান্তর দল বুধবার সকালে আধঘণ্টারও কম সময়ে ১১২ রানের মধ্যে খুইয়ে বসলো আরও ৩ উইকেট।
দ্বিতীয় দিন যে দু’জন লড়াই- সংগ্রাম করে খানিক দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন সেই মুশফিকুর রহিম (৩৩), আর মাহমুদুল হাসান জয় (৪০) ফিরে গেলেন রাবাদার বলে। তার পরপরই কেশব মহারাজের শিকার হলেন লিটন দাসও। তখনো ইনিংস পরাজয় এড়াতে বাংলাদেশের দরকার ৯০ রান।
অতিবড় বাংলাদেশ ভক্তও তখন আশা ছেড়ে পরাজয়ের প্রহর গুনছিলেন। বাকি ৪ উইকেটে ৯০ রান করে ইনিংস পরাজয়ের লজ্জা এড়ানো যে হিমালয়ের চুড়ায় ওঠার মতই কঠিন।
যাদের ওপর বেশি আশা ছিল সেই মুশফিক (৩৩), আর লিটন (৭) অল্প সময়ে ফিরে গেলে মনে হচ্ছিল লাঞ্চের আগেই শেষ হয়ে যাবে ম্যাচ। কিন্তু ওই যে বলা হলো, সকালটাই শেষ কথা নয়। বেলা গড়ানোর সাথে সাথেই বদলে গেল বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের চালচিত্র। শক্ত হাতে হাল ধরলেন মেহেদি হাসান মিরাজ আর অভিষেক হওয়া জাকের আলী অনিক।
তারা দু’জন চরম খারাপ অবস্থায় একদম খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েও লড়াই- সংগ্রাম করে দলকে ইনিংস পরাজয় মুক্ত করে এগিয়ে দিলেন। অভিষেক টেস্টে ১৮ নম্বর বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে হাফ সেঞ্চুরি (৫৮) করে জাকের বিদায় নিলেও মিরাজ লড়াই চালিয়ে যান এবং আজ বৃষ্টি ও আলোর স্বল্পতায় দিনের দুইঘণ্টা আগে খেলা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত ৮৭ রানে ক্রিজে মিরাজ।
অষ্টম উইকেটে মিরাজকে সঙ্গ দিচ্ছেন অফস্পিনার নাইম হাসান ( ১৬ নট আউট)। তারা দুজনও অষ্টম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৩৩ রান যোগ করেছেন । আর তাতেই অনেক চরাই উৎরাই পাড়ি দিয়ে এখন ৮১ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ।
যে ম্যাচ শেষ হয়ে যেতে পারতো আজ তৃতীয় দিন সকালেই। সেটা গড়ালো আগামীকাল বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনও। শুধু তাই নয়, এখন বাংলাদেশ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে সেখান থেকে জয়ের স্বপ্নও দেখা যায়। বাংলাদেশ আর ১০০ রান যোগ করতে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারবে।
লিডটা অন্তত দেড়শো হলেও লড়াই হতে পারে। তা করতে হলে মিরাজকে সেঞ্চুরি করতে হবে। সঙ্গী নাইম হাসানের সাপোর্টটাও জরুরি। টেস্ট ক্যারিয়ারে একটি মাত্র সেঞ্চুরি আছে মিরাজের। সঙ্গী নাইম হাসানও একটু-আধটু ব্যাটিং পারেন। কাজেই তারা দু’জন অষ্টম উইকেট দলকে আরও ৬০-৭০ রান জুড়ে দিলে লিডটা দেড়শোতে গিয়ে ঠেকবে। তখন প্রোটিয়াদের চেপে ধরা যাবে।
তবে খেলা শেষে কথা বলতে আসা বাংলাদেশ স্পিন কোচ মোশতাক কোন টার্গেট বেঁধে এগুতে নারাজ। তার কথা, ‘ভেতরে বিশ্বাস রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা পাকিস্তানের সাথে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়েও টেস্ট জিতেছি। কাজেই বিশ্বাস থাকলে জেতা সম্ভব।’
এই টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে কত রান করতে পারলে বাংলাদেশের জেতার সম্ভাবনা থাকবে? এ প্রশ্ন করা হলে মোশতাক বলেন, ‘যত বেশি রান করা সম্ভব, তত করতে হবে। তারপর বিশ্বাস নিয়ে লড়াই করতে হবে।’
এআরবি/আইএইচএস