Site icon Amra Moulvibazari

এসডিজি অর্জনে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র ও শ্রম আইন বাস্তবায়নের তাগিদ

এসডিজি অর্জনে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র ও শ্রম আইন বাস্তবায়নের তাগিদ


২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের জন্য কর্মক্ষেত্র নিরাপদ ও শ্রম আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া কারখানায় মনিটরিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

রোববার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ‘রানা প্লাজার ট্র্যাজেডির দশ বছর: গার্মেন্টস শ্রমিকদের বর্তমান পরিস্থিতি এবং অগ্রগতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা জানান।

তারা শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন করার সকল বাধা দূর করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও তারা জোর দেন।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স লীগ (বিটিজিডব্লিউএল), ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স (ইউএফজিডব্লিউ), বাংলাদেশ বিপ্লবী গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (বিআরজিডব্লিউএফ), বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (বিজিআইডব্লিউএফ) এবং জাতীয় গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (এনজিডব্লিউএফ) এই গোলটেবিলের আয়োজন করে।

বিটিজিডব্লিউএল সভাপতি জেডএম কামরুল আনাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং এনজিডব্লিউএফ সভাপতি আমিরুল হক আমিন গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এ সময় ইউএফজিডব্লিউ এর প্রতিনিধি শেহেলী আফরোজ লাভলী সেখানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

আইএলও ঢাকা অফিসের প্রতিনিধি নীরন রামজুথান বলেন, আমরা আশা করি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে রানা প্লাজা ধসের মতো ঘটনা ঘটবে না। কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কারখানা ও প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরিদর্শন আরও সক্রিয়, স্বচ্ছ এবং দক্ষতাসম্পন্ন হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, আইএলও অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশে শিল্প-কারখানায় শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত কাজের পরিবেশে নিশ্চিত করতে কাজ করছে। আমরা শোভন কাজ এবং কর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখব। নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি শুধুমাত্র পোশাক খাত নয় সমস্ত শিল্পের উপরই ফোকাস করা উচিত।

সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি ইস্ট্রুপ পিটারসেন বলেন, একটি শোভন সমাজ গঠনের জন্য সরকার, নিয়োগকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে মুক্ত আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেড ইউনিয়ন আমাদের সমাজের মেরুদণ্ড। বাংলাদেশে সামাজিক সংলাপ জোরদার উচিত। ট্রেড ইউনিয়ন এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডিশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভোন লিন্ডে বলেন, আমাদের দেশে ১৪০ বছরের ট্রেড ইউনিয়নের ইতিহাস রয়েছে। সমস্ত সেক্টরে দরকষাকষির আলোচনার সুযোগ প্রয়োজন। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুইডেন বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে কাজ করছে।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের পরিচালক নাজমা ইয়াসমিন বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের বিকল্প কোনও উপায় নেই। পরবর্তী সংশোধিত শ্রম আইনে, সরকারের উচিত শ্রমিকদের পুনর্বাসন, স্বাস্থ্য এবং উপযুক্ত কাজের পরিবেশ বিষয়গুলির উপর জোর দেওয়া। শ্রম আইন শ্রমিকবান্ধব হওয়া উচিত।

আরএসসি-আরজিএম সাসটেইনেবল কাউন্সিলের প্রতিনিধি সেফাত আহমেদ বলেন, আমরা গত তিন বছরে ১০ হাজার পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেছি এবং ২০ লাখ শ্রমিককে নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখন ১৮২২টি পোশাক কারখানায় কাজ করছি। ৫১১টি কারখানা নিরাপত্তার বিষয়ে অসাধারণ সফল হয়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করছি।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া এমপি বলেছেন, শ্রমিকদের পেছনে ফেলে দেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশন অর্জন করতে পারবে না। তাই শিগগিরই শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, একসময় মানুষ নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ভাবত না। রানা প্লাজা ধস আমাদের শিখিয়েছে। দেশের সব শিল্পে নিরাপত্তা এবং উপযুক্ত কাজের জায়গা নিশ্চিত করতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এসময় তিনি দেশের কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের বাংলাদেশি পণ্যের দাম বাড়ানোরও আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, রানা প্লাজা ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ধসে পড়ে। এই ঘটনায় প্রায় ১১৩৮ জন নিহত এবং প্রায় ২৫০০ শ্রমিক আহত হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৪ হাজার পোশাক কারখানা রয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক এই শিল্পে নিযুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী।

এএআর/



Exit mobile version