টিকা বাবদ সরকারের ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা নয়, প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বলে গতকাল সোমবার (২৫ এপ্রিল) প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দেয়া বক্তব্যকে আগের ঘোষণার সংশোধন বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আগের বক্তব্য সংশোধন করাকে টিআইবির বিশ্লেষণকে যথার্থতা প্রদান করে বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে টিআইবি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি বলে, টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিকার ক্রয়মূল্য ও কার্যক্রমের প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ১২ হাজার ৯৯৩ থেকে ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। যা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষিত ৪০ হাজার কোটির অর্ধেকের কম। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই খরচ পূর্বে ৪০ হাজার কোটি টাকা প্রকাশ হয়েছিল বলেও মন্ত্রী সংবাদ ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেছেন। সে সময় তিনি আরো উল্লেখ করেন, অনুদান হিসেবে যে টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে, সেসবের মূল্য যোগ করে তিনি মোট খরচ ৪০ হাজার কোটি টাকা উল্লেখ করেছিলেন।
কোন যুক্তিতে ও কীসের ভিত্তিতে বিনামূল্যে অনুদান হিসেবে পাওয়া টিকার মূল্য নির্ধারণ করা হলো এবং কোন যুক্তিতে তা খরচ হিসেবে বিবেচিত হলো তা বোধগম্য নয় বলে জানিয়েছে টিআইবি। সংস্থাটি আশা প্রকাশ করে বলে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টিকা ক্রয় ও বিতরণ বাবদ খরচের হিসেব আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবে।
কোভিড সংকট মোকাবেলায় সরকারের অর্জন বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গেও ব্যাখ্যা দিয়েছে টিআইবি। জানিয়েছে, করোনা সংকট মোকাবেলায় সরকারের ইতিবাচক অর্জনগুলো ধারাবহিক গবেষণায় যথাযথ গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছে টিআইবি। তাই টিআইবি’র বিরুদ্ধে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা বা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা কিংবা দেশের কোনো সফলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগ আনার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেছে টিআইবি।
জরিপ পদ্ধতি সংক্রান্ত সমালোচনার জবাবে টিআইবি জানায়, বরাবরের মতো এই গবেষণায় জরিপ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান বিজ্ঞানে অধিকতর অনুসৃত মানদন্ড ও চর্চা অনুসরণ করা হয়েছে। গবেষণায় বৈজ্ঞানিক মান ও পদ্ধতিগত উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে।
সংস্থাটি দাবি করেছে, জরিপে ৮ বিভাগের ৪৩টি জেলায় নিয়োগকৃত মাঠ তথ্য সংগ্রহকারীগণ স্থানীয় জনগণের সহায়তায় গবেষণায় উল্লেখিত সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ চিকিৎসা সেবা, নমুনা পরীক্ষা ও টিকা গ্রহণ করেছে এমন সেবাগ্রহীতাদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের মধ্যে থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১৮০০ জন সেবাগ্রহীতার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে। সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় চিকিৎসা গ্রহণকালীন সময়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ না করে তাদের টেলিফোন নাম্বার সংগ্রহ করে পরবর্তী সময়ে তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। পরিসংখ্যান বিজ্ঞানে টেলিফোন সাক্ষাৎকার একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। ফলে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে সঠিক তথ্য উঠে আসে না, এই অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই।
এছাড়া, টেলিফোন সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি ৪৩টি জেলার ১০৫টি টিকা কেন্দ্র হতে টিকা গ্রহণ করার পর টিকা কেন্দ্র হতে বের হওয়ার সময় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪০১৫ জন টিকাগ্রহীতাদের টিকার নিবন্ধন ও টিকা গ্রহণের অভিজ্ঞতা বিষয়ে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার (এক্সিট পোল) গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানায় টিআইবি। জরিপের পাশাপাশি সারাদেশের ৪৮টি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৬৭১ জন মানুষের কাছ থেকে গুণগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে।
সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার সেবাগ্রহীতার মতামত নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে টিআইবি দাবি করেছে, গবেষণাকালীন সময়ে সংগৃহীত প্রতিটি তথ্য একাধিক উৎস থেকে সংগ্রহ করে যাচাইবাছাইয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে এই গবেষণার ফলাফল সঠিক নয় এমন অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই। বরং, এই গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লিখিত প্রতিটি তথ্য ও বিশ্লেষণ বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ।
‘করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবেলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেসব দ্বিমত প্রকাশ করেছেন, এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণসহ জাহিদ মালেকের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করার আগ্রহ জানিয়েছে সংস্থাটি। তাদের প্রতিবেদনকে ‘সঠিক নয় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত না করে বরং টিআইবি কর্তৃক চিহ্নিত ঘাটতিসমূহকে দূর করা এবং সুপারিশকৃত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে করোনা নিয়ন্ত্রণে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব বলে উল্লেখ করেছে।
/এমএন