Site icon Amra Moulvibazari

সাহায্য চেয়েও পেলেন না মা, চিকিৎসক রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচালেন আগুনে পুড়ে যাওয়া শিশুর

সাহায্য চেয়েও পেলেন না মা, চিকিৎসক রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচালেন আগুনে পুড়ে যাওয়া শিশুর


নোয়াখালী প্রতিনিধি:

আগুনে পুড়ে গেছে শিশুটির পুরো শরীর। মুমূর্ষু অবস্থায় ভর্তি করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। জরুরী ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়। তাৎক্ষনিক রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শিশুটির মায়ের আর্তনাদে ভারি হয়ে যায় হাসপাতালের চারপাশ। অবশেষে সেই শিশুকে বাঁচাতে নিজেই রক্ত দিতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক। এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচানো হলো শিশুটির।

মানবিক এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে প্রশংসায় ভাসছেন নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিমান চন্দ্র আচার্য। মঙ্গলবার (৭ মার্চ) রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই ঘটনাটি ঘটে।

পুড়ে যাওয়া শিশু মোহাম্মদ আজিম (২) এর বাড়ী উপজেলার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের শতফুল গ্রামে। তার পিতা মো. জিহাদ একজন দিনমজুর। শিশুটি বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডের ১২ নং বেডে ভর্তি আছেন।

শিশুটির সাথে থাকা তার মা নাজমা বেগম জানান, বাড়িতে ধান সিদ্ধ করা চুলা থেকে নেয়া গরম ছাই স্তূপ করে রাখা ছিল। শিশুটি হাটতে হাটতে সেই গরম ছাইয়ের স্তূপের মধ্যে পড়ে যায়। এতে তার দুই পাসহ শরীরের অনেকাংশ পুড়ে যায়।

শনিবার মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থা সংকাটপন্ন হওয়ায় চিকিৎকরা জেলা সদরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় জেলা সদরে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি। উপজেলা সদর হাসপাতালে তাকে থাকতে হয়েছে।

এদিকে বারবার শিশুটির শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশ ড্রেসিং করতে গিয়ে রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়। সব শেষে গতকাল মঙ্গলবার জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা শিশুটিকে জরুরি ভিত্তিতে এক ব্যাগ রক্ত দেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু সাথে কোনো পুরুষ না থাকায় রক্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। সন্তানকে বাঁচানোর জন্য সবার কাছে সহযোগিতা চেয়ে পায়নি তার মা। পরে চিকিৎসক বিমান তার শিশুটিকে রক্ত দান করেন।

চিকিৎসক বিমান চন্দ্র আচার্য জানান, শিশুটির শরীরের অনেকাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। রোগীটির বাড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। তাদের সহযোগিতা করার মত উপজেলা সদরে কেউ ছিল না। শিশুটির মায়ের আর্তনাদ নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। কোনো প্রশংসা পাওয়ার জন্য নয়, সম্পূর্ণ মানবিক দিক বিবেচনা করে তিনি এই কাজটি করেছেন। এর আগেও ১৫ বার তিনি বিভিন্ন সময় অসহায় রোগীদের রক্ত দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিনাজ উদ্দিন বলেন, শিশুটি আগুনে পুড়ে আহত হওয়ার পরদিন উপজেলা সদরে পাঠানো হয়েছে। আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে আমার। সব শেষে ডাক্তার বিমান চন্দ্র আচার্য শিশুটিকে রক্ত দিয়ে যে সহযোগিতা করেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এই ধরনের মানবিক হলে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া নিশ্চিত হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার সৌমেন সাহা বলেন, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ৭ লাখ লোকের জন্য ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি। আইনগতভাবে অনেক রোগীকে বাহিরে পাঠানোর পরামর্শ দিতে হয়। কিন্তু আর্থিক ও মানবিক বিষয়ে অনেক সময় বাহিরে পাঠানোটা সঠিক হয় না। পুড়ে যাওয়া শিশুটিকে আমাদের একজন রক্ত দিয়েছেন। ঘটনাটি আমি শুনেছি। এটি নিশ্চয় প্রশংসার দাবি রাখে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে ধন্যবাদ জানাই।

এটিএম/



Exit mobile version