Site icon Amra Moulvibazari

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে লন্ডনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সাইফুজ্জামান

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে লন্ডনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সাইফুজ্জামান


আল জাজিরার তদন্তকারী ইউনিট (আই-ইউনিট) জানতে পেরেছে, বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে লন্ডনে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের একটি বাড়িতে বসবাস করছেন। যুক্তরাজ্যে মিলিয়ন ডলার পাচার ও বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগ তদন্তের সময় তার বিদেশ ভ্রমণে নিষাধাজ্ঞা জারি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আই-ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে লন্ডনে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পাশ দিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে। জানা গেছে, লন্ডনে ৯০ লাখেরও বেশি ডলার মূল্যের ছয়টি বাড়ি রয়েছে, যা তার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ছোট একটি অংশ।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আল জাজিরা ‘দ্য মিনিস্টার মিলিয়নস’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়েছে, একাধিক দেশে সাইফুজ্জামানের সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য ৫০ কোটি ডলার। সাবেক এই মন্ত্রী আল জাজিরার আন্ডারকভার সাংবাদিকদের কাছে গর্ব করে বলেছিলেন, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক ও দুবাইতে তার অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এছাড়া ২০১৬ সাল থেকে তিনি শুধু যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টিরও বেশি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন।

আল জাজিরার প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, দুবাইয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তির সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ধারণার চেয়েও বেশি। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রেও আরও কয়েকশ অ্যাপার্টমেন্টের সঙ্গে এই অ্যাপার্টমেন্টগুলো এখন সাবেক মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর সম্পদ জব্দ করার জন্য আদেশ দিয়েছে দুদক।

ফাঁস হওয়া ২০২৩ সালের একটি নথিতে দেখা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৫০টিরও বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক, যার মূল্য ১৪ কোটি ডলারেরও বেশি। রেকর্ডগুলোতে উঠে আসে যে তার স্ত্রী রুখমিলা জামান, যিনি বাংলাদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তের অধীনেও রয়েছেন, তিনি দুবাইতে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যের আরও ৫০টি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক।

আল জাজিরার আন্ডারকভার ফুটেজে সাবেক এই মন্ত্রী দুবাইয়ের মর্যাদাপূর্ণ অপেরা জেলায় একটি পেন্টহাউসের মালিক হওয়ার বিষয়ে গর্ব করেন। সেই সঙ্গে জমির রেকর্ডগুলো নিশ্চিত করে যে তিনি সেখানে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক, যার দাম ৫০ লাখ ডলারেরও বেশি।

নতুন ফাঁস হওয়া তথ্যে দেখা গেছে, সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩০০টিরও বেশি বিলাশবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে প্রায় ১৭ কোটি ঢলার খরচ করেছেন। সামগ্রিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, এই জুটি বিশ্বজুড়ে ৬০০টিরও বেশি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক।

মানি লন্ডারিংয়ের তদন্ত

বাংলাদেশের মুদ্রা আইন কোনো নাগরিককে বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যেতে নিষেধ করে। আল জাজিরা বলছে, সাইফুজ্জামন চৌধুরী ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তার বিদেশি সম্পদের তথ্য জানাতে ও হিসাব না দিয়ে বাংলাদেশের কর আইন ভঙ্গ করেছেন।

চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রীদের ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এই তালিকায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীও রয়েছে। এরই মধ্যে তাদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার পাশি বাংলাদেশ ছেড়ে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দুদক।

এদিকে, সাইফুজ্জামান আল জাজিরাকে বলেছেন যে তার বিদেশি সম্পত্তি কেনার জন্য খরচ করা অর্থ বাংলাদেশের বাইরে থাকা দীর্ঘ দিনের বৈধ ব্যবসা থেকে এসেছে। তার দাবি, তিনি হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শিকারে’ পরিণত হয়েছেন।

সূত্র: আল জাজিরার তদন্তকারী ইউনিট

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version