শিক্ষা প্রশাসনের অনিয়ম-দুর্নীতি ধরার কাজ করে থাকে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি ধরার এ অধিদপ্তর হয়ে ওঠে ঘুস বাণিজ্যের ‘স্বর্গরাজ্য’। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুরোনোদের সরিয়ে ঢেলে সাজানো হয় ডিআইএ। তাতেও সংস্থাটির কাজে গতি আসছে না। উল্টো কর্মকর্তাদের মধ্যে সম্পর্কের ‘টানাপোড়েন’ দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে সংস্থার পরিচালককে করা হয় বদলি। বর্তমানে পরিচালক পদটি শূন্য। বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদেরও নেই কাজের অভিজ্ঞতা। দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে পদে পদে বিড়ম্বনায় পড়ছেন তারা। ফলে কার্যত অচল ডিআইএ।
আবার নতুন যারা দায়িত্বে এসেছেন, তারা পুরোনোদের পথ অনুসরণ করে ঘুস বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। এমনকি ঢাকার বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তদন্তে গিয়ে ঘুস চাওয়ায় শিক্ষকদের হাতে গণপিটুনিও খেয়েছেন কেউ কেউ। ফলে চরম ইমেজ সংকটে পড়েছে সংস্থাটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিআইএ’র কর্মকর্তারা সারাদেশের স্কুল-কলেজ মাদরাসা পরিদর্শন করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতি খুঁজে বের করা তাদের কাজ। তারা তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেন। মন্ত্রণালয় তাতে অনুমোদন দিলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানপর্যায়ে শাস্তি বাস্তবায়ন করে থাকে।
ডিআইএ’র কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের রেষারেষিতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মার খেতে হচ্ছে। গত ১১ নভেম্বর কক্সবাজারের চকরিয়া সরকারি কলেজে একটি কর্মশালায় গিয়ে ঘুস চাওয়ার অভিযোগ তুলে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন ডিআইএ’র সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মনিরুল আলম মাসুম। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে ডিআইএ। তদন্ত কমিটির প্রধান দায়িত্ব যাকে দেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সংস্থাটিতে অভ্যন্তরীণ সমস্যাও বেড়েছে। নতুন যারা এ প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, তাদের প্রশাসনিক দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। ফলে পরিদর্শন, প্রতিবেদন তৈরি, নথি উপস্থাপন, শাখা পরিচালনায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। দপ্তরটি ঠিকমতো কার্যক্রম পরিচালনা করতেও পারছে না। তবে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল পরিচালক ও যুগ্ম-পরিচালকের ‘মানসিক দ্বন্দ্ব’।
দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে আসার পরই ২১ নভেম্বর ডিআইএ পরিচালক কাজী মো. আবু কাইয়ুম শিশিরকে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে ডিআইএ থেকে তাকে ময়মনসিংহের মুমিন্নুনিসা সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক পদে পদায়ন করা হয়।
জানতে চাইলে যুগ্ম-পরিচালক মো. আবুয়াল কায়সার জাগো নিউজকে বলেন, দপ্তরের প্রধান হিসেবে পরিচালকের কথা মেনে চলাটা আমার কাজ। কিন্তু পরিদর্শনের জন্য কর্মকর্তা নির্ধারণে তিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি সব ঠিকঠাক করার পরও তিনি তা কেটে ফেলে দেন। তারপরও কোনো দ্বন্দ্ব ছিল বলে আমি মনে করি না।
যুগ্ম-পরিচালকের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআইএ’র পরিচালক পদ থেকে সদ্য বদলি হওয়া অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ুম জাগো নিউজকে বলেন, মানসিক দূরত্ব থেকে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এ নিয়ে যুগ্ম-পরিচালকের সঙ্গে আমার দুবার বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছিল। যেহেতু আমাকে এখন বদলি করা হয়েছে, সেজন্য আমি ডিআইএ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।
ডিআইএ’র অচলাবস্থা নিয়ে খোঁজখবর নেবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, বেশিরভাগ দপ্তরে গ্রুপ-উপগ্রুপ রয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে আমরা খবর পেলে তদন্ত করছি। প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ডিআইএ’র বিষয়েও খোঁজ নেবো।
এএএইচ/জেডএইচ/