গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ঢাকার ট্রাফিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। তখন সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দিনরাত কাজ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। টানা ছয়দিন শিক্ষার্থীরা সড়কে এককভাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সড়কে ট্রাফিক পুলিশ ফিরলেও শৃঙ্খলা ফেরাতে বেগ পেতে হয়।
গত ২১ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয় ‘ট্রাফিক পক্ষের’। ট্রাফিক পক্ষের শুরুর দিকে তিনশ শিক্ষার্থী ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। পরে আরও সাতশ শিক্ষার্থী যুক্ত হন। শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশের পাশাপাশি ঢাকার সড়কে বর্তমানে কাজ করছেন এক হাজার শিক্ষার্থী।
রাজধানীতে প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। ঢাকায় প্রতিদিন যেভাবে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে সেই তুলনায় বাড়ছে না সড়কের আয়তন। যত্রতত্র পার্কিং, ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকান ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে সড়কের মাঝ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপারসহ প্রতিদিন অসংখ্য কারণে যানজটের পাশাপাশি ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কে শৃঙ্খলার পূর্বশর্ত ট্রাফিক আইন মেনে চলা। কিন্তু অধিকাংশ সড়ক ব্যবহারকারী ট্রাফিক আইন মানছেন না। ফলে শৃঙ্খলা ফিরছে না সড়কে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শিশুদের থেকে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। কারণ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চেয়ে একজন শিশুকে ট্রাফিক সচেতনতা সম্পর্কে শিক্ষা দিলে সেটির প্রভাব বেশি পড়বে। স্কুল পর্যায় থেকে শিশুরা ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করলে মঙ্গল।
পিপিইপি থেকে ট্রাফিক সম্পর্কে শেখা বিভিন্ন বিষয় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। ট্রাফিক সংকেত, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করে রাস্তা পার হওয়া এবং সিগন্যাল সিস্টেমসহ বিভিন্ন বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে পেরেছি।- ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থী ইনাইয়া মাজিফা
ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্টের (ডিআরএসপি) উদ্যোগে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে সড়ক নিরাপত্তার ব্যবহারিক অংশগ্রহণমূলক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। জাইকা বিশেষজ্ঞ দল (জেইটি) শিক্ষার্থীদের জন্য সড়ক নিরাপত্তা শিক্ষা কার্যক্রমের নাম দেয় প্রাকটিক্যাল অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি এডুকেশন প্রোগ্রাম (পিপিইপি)।
এরই ধারাবাহিকতায় ‘সড়ক নিরাপত্তা পোস্টার ও স্লোগান প্রতিযোগিতা–২০২৪’ ঢাকা মহানগরীর ১৬টি স্কুল ও ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিআরএসপি প্রজেক্টের আওতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৬টি স্কুল ও ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
পিপিইপি প্রশিক্ষণের পর সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্বে শিক্ষার্থীরা
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ইনাইয়া মাজিফা। প্রাকটিক্যাল অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি এডুকেশন প্রোগ্রাম (পিপিইপি) থেকে ট্রাফিক আইন ও ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে জানতে পারে সে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ঢাকার সড়ক ট্রাফিক পুলিশহীন হয়ে পড়লে সহপাঠীদের নিয়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন মাজিফা।
সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইনাইয়া মাজিফা জাগো নিউজকে বলেন, ‘পিপিইপি থেকে ট্রাফিক সম্পর্কে শেখা বিভিন্ন বিষয় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। ট্রাফিক সংকেত, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করে রাস্তা পার হওয়া এবং সিগন্যাল সিস্টেমসহ বিভিন্ন বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে পেরেছি।’
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ
২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বর্ণমালা আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রাকটিক্যাল অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি এডুকেশন প্রোগ্রাম (পিপিইপি) অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ডিএমপির প্রশিক্ষিত কর্মকর্তারা পঞ্চম শ্রেণির ৫০ জন শিক্ষার্থীকে ট্রাফিক লাইটের অর্থ, জেব্রা ক্রসিং ও সিগন্যাল রাইট বিষয় নিয়ে একটি ছোট মডেল ব্যবহার করে নিরাপদে রাস্তা পার হওয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেন।
পিপিইপি হলো- জাপানে পুলিশ বাস্তবায়িত সড়ক নিরাপত্তা শিক্ষার একটি অনুশীলন। এটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। প্রথমত, শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করার ভূমিকা, যেমন একটি বল নিয়ে খেলা। দ্বিতীয়ত, শিশুদের ট্রাফিক সংকেত ও কীভাবে রাস্তা পার হতে হয় তা শেখানো। তৃতীয়ত, প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বাচ্চাদের বোঝার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
সড়কে যে কয়েকদিন পুলিশ ছিল না তখন আমরা অনেক শিক্ষার্থী মূল সড়কের পাশাপাশি অলিগলিতেও শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করি। তখন সড়কে চলাচলরত প্রত্যেকের উৎসাহ পেয়েছি আমরা। তারা আমাদের খাবার, জুস ও পানি দিয়েছেন বিনামূল্যে।- বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী
পিপিইপির প্রথম বাস্তবায়ন ট্রাফিক লাইট এবং নিরাপদ রিকশা চড়ার সঙ্গে জেব্রা ক্রসিংকে কেন্দ্র করে। ডিএমপির তিনজন প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের রোল মডেল হিসেবে একটি আকর্ষণীয় উপায়ে কীভাবে রাস্তায় ট্রাফিক লাইট ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে হবে, কীভাবে রিকশায় চড়তে হবে তা দেখান এবং অনুশীলনে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করেন। এতে শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হয়ে প্রশিক্ষণ নেয়।
প্রতিযোগিতায় যেসব স্কুলের শিক্ষার্থী অংশ নেয়
উত্তরার নওয়াব হাবিবুল্লাহ্ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গুলশানের ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মণিপুর হাইস্কুল। তেজগাঁওয়ের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও এসএফএক্স গ্রিনহেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, রমনার মাস্টারমাইন্ড স্কুল ও বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। মতিঝিলের রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ওয়ারীর শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শের-ই-বাংলা স্কুল, লালবাগে আজিমপুর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল।
পোস্টার প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা হলেন- ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী হালিমাতুস সাদিয়া, কৃত্বিকা দাস, মুনিম সাফা ও ইনাইয়া মাজিফা, মাস্টারমাইন্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের আদিয়ান আরাফ, গ্রাউন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এজহার এবতেসাম এনান, শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শার্লিন সাফা, ইসরাত জাহান ইতি এবং শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের আদনিন তাজরি আলম ও আশফিয়া কিবরিয়া।
স্লোগান প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা হলেন- আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির মাহমুদুল হাসান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির এহসানুল হক ও ওয়াসিকুর রহমান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের মো. আবদুল্লাহ আল নাইম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশিক মাহমুদ, মুস্তারিন আক্তার মনীষা, মো. মানিক, মো. আল-আমিন, সুমাইয়া জান্নাত ও আনিসা আহামেদ শোভা।
শিশুদের ট্রাফিক পার্ক হবে ঢাকায়
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উদ্যোগে জাপানের আদলে ঢাকায় চিলড্রেনস ট্রাফিক পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। চিলড্রেনস ট্রাফিক পার্কে নতুন প্রজন্মকে শৈশব থেকেই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হাতে কলমে শেখানো হবে সড়কে চলাচলের নিয়ম। এ পার্কে শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হবে। জাইকা ও ডিএমপির যৌথ উদ্যোগে বেশ কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও শিশুদের সচেতন করতে কাজ করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চিলড্রেনস ট্রাফিক পার্ক তৈরি করা হবে।
সড়কে ট্রাফিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী জাগো নিউজকে বলেন, সড়কে যে কয়েকদিন পুলিশ ছিল না তখন আমরা অনেক শিক্ষার্থী মূল সড়কের পাশাপাশি অলিগলিতেও শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করি। তখন সড়কে চলাচলরত প্রত্যেকের উৎসাহ পেয়েছি আমরা। তারা আমাদের খাবার, জুস ও পানি দিয়েছেন বিনামূল্যে।
তেজগাঁওয়ের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী উম্মে তাফসিরুন নওশিন জাগো নিউজকে বলেন, রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ যে এত কষ্ট করে আগে বুঝিনি। রোদ, বৃষ্টিসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তারা সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। আমরা শিক্ষার্থীরা সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকালে বুঝেছি ট্রাফিক পুলিশের কষ্টের শেষ নেই। তবুও মানুষ আইন মানতে চায় না। আমরা সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সুশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এখনো কাজ করে যাচ্ছি।
পোস্টার ও স্লোগান প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা যা বলছেন
পোস্টার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী হালিমাতুস সাদিয়া। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করেন এই শিক্ষার্থী। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় প্রতিযোগিতার পরে ট্রাফিক সম্পর্কে কতটুকু জানতে পেরেছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, পুলিশের ট্রাফিক সদস্যরা আমাদের রাস্তার অনেক আইন-কানুন সম্পর্কে বুঝিয়েছেন। জেব্রা ক্রসিং দিয়ে কীভাবে পার হতে হবে, জেব্রা ক্রসিং না থাকলে কীভাবে রাস্তা পার হতে হবে, ফুটওভারব্রজি ছাড়া রাস্তা পার হওয়া যাবে না, হুট করে গাড়ি চলা অবস্থায় রাস্তা পার হওয়া যাবে না। এসব বিষয় জেনে এখন নিয়ম মেনে রাস্তায় চলাচল করছি।
ট্রাফিক আইন সম্পর্কে স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে ব্যবহারিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ বই পড়ে একটি বিষয় শেখার চেয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকাল থেকে ট্রাফিক আইন মেনে চলা শিখলে ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত হবে।-ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান
শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শার্লিন সাফা বলেন, আগে স্কুলে আম্মুর সঙ্গে যেতে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করতাম না, রাস্তার মাঝখান দিয়ে পার হয়েছি। কিন্তু ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতার পর নিয়ম মেনে রাস্তায় চলাচল করছি। নিয়ম মেনে চললে দুর্ঘটনা হবে না। ছোটবেলা থেকে ট্রাফিক সম্পর্কে সচেতন হলে এবং সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি হলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। পাশাপাশি আমাদের অভিভাকদেরও ট্রাফিক সম্পর্কে সচেতন করা আমাদেরই দায়িত্ব।
পুলিশ যা বলছে
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে ব্যবহারিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ বই পড়ে একটি বিষয় শেখার চেয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকাল থেকে ট্রাফিক আইন মেনে চলা শিখলে ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত হবে। এছাড়া শিশুরা যখন কোনো কিছু ব্যবহারিকভাবে শেখে তখন তাদের অভিভাকদেরও শেখাতে পারে। এজন্যই স্কুল প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, প্রতি মাসে সবগুলো জোনে ট্রাফিকের সহকারী পুলিশ কমিশনার ও ট্রাফিক ইন্সপেক্টররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করে যাচ্ছেন। ট্রাফিক আইন জানার পরেই মানার কথা আসে। সে কারণেই শিশু-কিশোরদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জানাতে পুলিশ নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করছে। গত ২১ অক্টোবর থেকে ট্রাফিক পক্ষ শুরু হয়েছে। প্রতিটি স্কুলের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে তাদের শিক্ষার্থীদের কিছু সময়ের জন্য পুলিশের সঙ্গে ট্রাফিকের কাজ করলে সচেতনতা তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করায় মানুষ উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। সড়কে যারা ট্রাফিকের কাজ করছে সব শিক্ষার্থীর জন্য সনদের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে কর্মজীবনে সেই শিক্ষার্থী মূল্যায়িত হয়।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ মানবসৃষ্ট। শিক্ষার্থীরা যদি দুর্ঘটনার কারণগুলো জানতে পারে তবে তারা বিপজ্জনক ড্রাইভিং থেকে ঝুঁকি এড়াতে পদক্ষেপ নিতে পারবে। এসব শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনা রোধে সচেতন থাকবে।- জাইকা এক্সপার্ট টিমের নাও সুজিমুরা
জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা শহরে অন্যতম সমস্যা ট্রাফিক। শিশু থেকে বয়স্ক আমাদের সবার সচেতন হতে হবে। আমি প্রত্যাশা করি সবাই ট্রাফিক সেফটি সম্পর্কে সচেতন হবেন ও অন্যদের সচেতন করবেন। ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরাতে সচেতনতার কাজটি শুধু পুলিশের কাঁধে ছেড়ে না দিয়ে ছাত্র-সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। রাস্তায় গাড়ি দুর্ঘটনায় যেন একজন মানুষও না মারা যায় সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন করার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
জাইকা এক্সপার্ট টিমের বক্তব্য
এ বিষয়ে জাইকা এক্সপার্ট টিমের নাও সুজিমুরা জাগো নিউজকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ মানবসৃষ্ট। শিক্ষার্থীরা যদি দুর্ঘটনার কারণগুলো জানতে পারে তবে তারা বিপজ্জনক ড্রাইভিং থেকে ঝুঁকি এড়াতে পদক্ষেপ নিতে পারবে। এসব শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনা রোধে সচেতন থাকবে। জাপানে এমন অনেকের উদাহরণ রয়েছে যারা ট্রাফিক নিরাপত্তার শিক্ষা পেয়ে সড়কে দায়িত্বশীল হয়েছেন।
নাও সুজিমুরা বলেন, আমরা আশা করি সড়ক ব্যবহারকারীরা শিক্ষার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো কমাতে পারবে এবং ট্রাফিক আইন পালনকারী মানুষের সংখ্যা বাড়াতে পারবে। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে যদি অনেক বেশি মানুষ সচেতন হয় তবে ভবিষ্যতে ট্রাফিক সিগন্যালের প্রয়োজন হবে না। মানুষের বিবেচনা এবং সচেতনতা ট্রাফিক লাইট হিসেবে কাজ করতে পারে।
জাইকা এক্সপার্ট টিমের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ ও দুর্ঘটনা কমলে সড়কের অবকাঠামো মেরামত সংক্রান্ত ব্যয়ও কমে আসবে।
টিটি/এএসএ/জেআইএম