বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় এবং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান করায় দুই শিক্ষক ও সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সাময়িক বহিষ্কার করা হলেও তারা নিয়মিত অফিস করছেন এবং বেতন পাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় তাদের সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে সিন্ডিকেটে বহিষ্কার সিদ্ধান্ত পাস হওয়া সত্ত্বেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নোটিশ প্রদান করা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীর অধিকাংশই নিয়মিত অফিস করছেন। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারের সহকারী রেজিস্ট্রার হাফিজুর রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার মাহবুবা আক্তার, প্রক্টর অফিসের রাফিউল হাসান রাসেল, নিরাপত্তা শাখার উপ-রেজিস্ট্রার তৌহিদুল ইসলাম জনি, কর্মচারী আমির হোসেন, আশিকুন্নাহার টুকটুকি এবং নুরনবী।
বহিষ্কৃত দুই শিক্ষক গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মণ্ডল আসাদ অফিসে না এলেও নিয়মিত বেতন ও বোনাস পাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হানুর রহমান বলেন, আবু সাঈদের মৃত্যুর চার মাস পার হলেও সঠিক বিচার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন এখনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বহিষ্কারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না? কেন তারা এখনো অফিস করতে পারছেন এবং বেতন পাচ্ছেন?
বহিষ্কৃত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার মাহবুবা আক্তার বলেন, ‘আমি অফিসিয়ালি কোনো নোটিশ বা আদেশ পাইনি। তাই অফিস করছি।’
ট্রেজারার দপ্তরের হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা মো. মাজারুল আনোয়ার বলেন, ‘আমাদের দপ্তরে বেতন বন্ধ করার অফিসিয়াল কোনো নোটিশ আসেনি। তাই তাদের অক্টোবর মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে।’
সাঈদ হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘কিছু প্রক্রিয়া মেনে চলা হচ্ছে। আশা করছি, খুব দ্রুত বহিষ্কারের আদেশ আসবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, এটি যথাযথভাবে প্রক্রিয়াধীন। তাদের কাজের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগেই তাদের বেতন প্রদানে স্বাক্ষর করা হয়েছিল। তাই তারা বেতন পেয়েছেন। এতে কোনো সমস্যা হবে না এবং বেতন কাটা সম্ভব হবে।
ফারহান সাদিক সাজু/এফএ/এএসএম
