বাঙালি হিসেবে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হোক আমরা চাই না। আবার বাঙালি হিসেবে একটা দেশের অবনতি হোক সেটাও আমরা চাই না। এমনই মন্তব্য করলেন কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমন কল্যাণ লাহিড়ী।
বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর গত ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপরেই বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের দায়িত্ব ভার নেয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন কারণে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে চির ধরে বলে অনেকেই মনে করেছেন।
এরমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার পালাবদলের ফলে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে? প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পরেই এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র কোন পথে যাবে?
এই সব প্রশ্নের উত্তরে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমন কল্যাণ লাহিড়ী জানিয়েছেন, ভারতবর্ষ অর্থাৎ আমরা চাইছিলাম ট্রাম্প আসুক। আমরা বাঙালি হিসেবে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি চাই না। আবার বাঙালি হিসেবে একটি দেশের অবনতি হোক সেটাও আমরা চাই না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আসার পর বাংলাদেশের একটা স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে এবং নতুন করে রাষ্ট্র গঠনের, আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের যে ব্যবস্থা তা পূর্ণবহাল হবে। আমার মনে হয় ট্রাম্প আসার পর কোনো রেষারেষিতে না গিয়ে ভারতবর্ষের মনন, বাঙালির মননটা উনি বুঝতে পারবেন। দুই দেশ আবার যাতে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে সেই দিকে তিনি নজর দেবেন।
শেখ হাসিনা দেশে ফেরার বিষয়ে অধ্যাপক ড. ইমন কল্যাণ লাহিড়ী বলেন, একটা আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দেশে ফেরা উচিত। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কেন দেশ ছেড়ে পালাতে হবে? অন্যায়, দোষ হতে পারে, সেটা বিচার হতে পারে, ট্রাইবুনাল হতে পারে। তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কখনো দেশ ছেড়ে পালানো উচিত নয়।
অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ী আরও বলেন, সুষ্ঠ বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রথমে নির্বাচন করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমেরিকার সহযোগিতা থাকবে। প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোট করে সরকার গঠন করতে পারে আবার পৃথকভাবে ভোটের ময়দানে নামতে পারে। তবে একটা সরকার যতদিন না তৈরি হবে সুষ্ঠু বাংলাদেশ গড়ে উঠবে না।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে অত্যন্ত পন্ডিত ও বিদগ্ধ মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করে অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ী জানিয়েছেন, তার উচিত দ্রুত বাংলাদেশে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা। আমরা ভারতীয় বাঙালিরা সব সময় চাই ভারত-বাংলাদেশের সুসম্পর্ক থাকুক।
ট্রাম্পের জয়ের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আরেক অধ্যাপক ড. কনক সরকার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয়বারে ট্রাম্পের জয় ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবাই জানে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যথেষ্ট সখ্য রয়েছে। সে দিক থেকে বাংলাদেশকে নতুন করে ট্রাম্পের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন একটা সমীকরণ গড়ে উঠতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন করার জন্য সাময়িকভাবে প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন ড. ইউনূস। বাংলাদেশের সুষ্ঠুভাবে একটি নির্বাচন করা ও বাংলাদেশের দায়িত্বভার নির্বাচিত সরকারের হাতে তুলে দেওয়া।
অধ্যাপক কনক সরকারের শেখ হাসিনার প্রসঙ্গে অভিমত, তার দেশে ফেরা বাস্তবে সম্ভব নয়। তিনি পদত্যাগ করার সময় পাননি ঠিকই। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। ইতিহাস বলছে, নেতা যখন পরিবর্তন হয় বা দেশ ছাড়ে, তখন তার শাসনের পতন ঘটে। তিনি দেশ ত্যাগ করেছেন এটাই যথেষ্ট। তার লিখিত বিবৃতির প্রয়োজন পড়ে না। অতএব এক্ষেত্রে তিনি আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন। এখন নির্বাচনের মাধ্যমেই নতুন সরকার আসবে।
ডিডি/এমএসএম