গত ১১ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছে অভিনেত্রী কুসুম সিকদার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘শরতের জবা’। অভিনয়ের জন্য তিনি পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। নিজের গল্পগ্রস্থ ‘অজাগতিক ছায়া’র গল্প থেকে তৈরি হয়েছে তার প্রথম সিনেমার চিত্রনাট্য। ছবি নির্মাণের অভিজ্ঞতা, দর্শক হিসেবে তা উপভোগ করা, কাছের মানুষদের প্রতিক্রিয়া তিনি ভাগাভাগি করেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান মিথুন।
জাগো নিউজ: বড়পর্দায় নিজের বানানো সিনেমা দেখে কেমন লাগলো?
কুসুম সিকদার: নিজের সিনেমা পর্দায় দেখার অনুভূতিটা দারুণ। সিনেমাটি মুক্তির আগে প্রায় এক বছর নিয়মিত সম্পাদনার কাজ দেখতে প্যানেলে যেতে হয়েছে। সম্পাদনার প্যানেলে দৃশ্যগুলো বেশ বড় করেই দেখা যায়, তবে তা সিনেমা হলের মতো নয়। যা হোক, ভেবেছিলাম মুক্তির আগে অনেকবার সিনেমাটি দেখেছি, হলে গিয়ে দেখতে বোধহয় আর ভালো লাগবে না। কারণ সিনেমার সবকিছুই তো সম্পাদনার সময় দেখতে দেখতে মুখস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আমার সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তির পর সাত-আটবারের বেশি হলে গিয়ে ছবিটি দেখেছি। কিন্তু সিনেমাটি দেখে একবারও খারাপ লাগেনি। সিনেমাটি বারবার দেখেও, প্রতিবার যে কতটা ভালো লেগেছে, তা বলে বোঝানো যাবে না।
জাগো নিউজ: নতুন সিনেমার কাজ শুরু করার পরিকল্পনা কবে?
কুসুম সিকদার: এখনো ‘শরতের জবা’ সিনেমাটি নিয়ে অনেক কিছু করা বাকি। কেবল প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির কাজ শেষ হয়েছে। এরপর ওটিটিতে দেব। এরপর যদি দেশের বাইরের কোনো উৎসবে সিনেমাটি পাঠাই, সেজন্যও প্রস্তুতিসহ অনেক কাজ বাকি। এসব কাজ শেষ হওয়ার পর নতুন সিনেমার কথা ভাববো।
জাগো নিউজ: দর্শকদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পেলেন?
কুসুম সিকদার: দেশে এই মুহূর্তে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। সেই কারণে একদম সিনেমা হল ভর্তি দর্শক ‘শরতের জবা’র কোনো শোতেই ছিল না। কিন্তু আমার যে ভয়টা ছিল, সেটা প্রথম শোয়ের পর কেটে গেছে। কারণ প্রতিটি শোতে হল পরিপূর্ণ না থাকলেও মোটামোটি ভালোই দর্শক ছিল। সিনেমাটি পূজা উপলক্ষে গত ১১ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছিল। ফলে পূজার একটি আমেজ ছিল। আমার সিনেমা মুক্তির পর হলিউডের কিছু ইংলিশ সিনেমা হলে এসেছিল। তারপরও ‘শরতের জবা’ ভালো চলেছে। কোরবানির ঈদের পর থেকে আমাদের দেশের সার্বিক পরিস্থিতির জন্য সিনেমা হলগুলোতে দর্শক একদমই ছিল না। কিন্তু ‘শরতের জবা’ দিয়ে হলে দর্শক ফিরেছে। ‘শরতের জবা’ সিনেমাটিতে দেখেছেন এ রকম যত দর্শকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই এর প্রশংসা করেছেন। কেউ কোনো খারাপ মন্তব্য করেননি। এতে আমি বেশ খুশি।
জাগো নিউজ: আপনার সঙ্গে ‘শরতের জবা’ সিনেমায় আপনার চেয়ে তরুণ একজন শিল্পী অভিনয় করেছেন। আপনার মতো শিল্পীর পাশাপাশি কাজ করা এই শিল্পীকে কত নম্বর দেবেন?
কুসুম সিকদার: এ সিনেমায় যারা কাজ করেছেন, প্রত্যেকেই তাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সিনেমাটিতে দুই প্রজন্মের শিল্পীরা কাজ করেছেন। আমার বিপরীতে ছিলেন ইয়াশ রোহান। শিল্পী হিসেবে সে আমার মোস্ট জুনিয়র। ওর অভিনয়কে নম্বর দেওয়ার চেয়ে বলবো, রোহান দারুণ অভিনয় করেছে।
জাগো নিউজ: এ সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনার কাজও করতে হয়েছে, ভবিষ্যতে এই কাজ করাটা আপনার জন্য সহজ হবে বলে মনে করেন?
কুসুম সিকদার: সিনেমাটির নির্মাণ, ক্যাম্পেইন, চিত্রনাট্যসহ সব কিছুই করেছি। এসব কাজ করতে গিয়ে ভালো-মন্দ মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। পরবর্তী কাজের জন্য এগুলো আমাকে সহায়তা করবে। সিনেমাটি করতে গিয়ে আমি যা যা শিখেছি, যেসব ভুল করেছি, সেগুলো পরবর্তীতে কাজে লাগবে নিশ্চয়ই।
জাগো নিউজ: বইমেলায় নতুন কোনো বই আসছে?
কুসুম সিকদার: নতুন বই লেখার একদমই সময় পাইনি। ‘শরতের জবা’র পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। এখনো এ সিনেমাটি নিয়েই ব্যস্ত আছি। কোনো কিছু লিখতে গেলে গভীর মনোযোগের প্রয়োজন হয়। লেখালেখির সময় অন্যকিছু মাথায় রাখলে আসলে লেখালেখি ভালো হয় না। ‘শরতের জবা’র সব কাজ শেষ করি, তারপর লেখালেখিতে মন দেব। বইমেলার খুব বেশি দেরি নেই। এই সময়ের মধ্যে বই লেখার কাজ শেষ করতে পারব না। ফলে আমার পাঠকরা-দর্শকরা আমার নতুন কোনো বই এবারের মেলাতে পাচ্ছেন না।
জগো নিউজ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী?
কুসুম সিকদার: আমি সবকিছুর চেয়ে দেশকে বেশি ভালোবাসি। অনেকবার বিভিন্ন দেশে আসা-যাওয়া করেছি। দেশ ভালো না বাসলে কোনো একটি দেশেই থেকে যেতাম। দেশের বাইরে গিয়েও যে বারবার দেশে ফিরে আসি, এটাই প্রমাণ যে আমি দেশকে কতটা ভালোবাসি। দেশের ভালোর জন্য যা কিছু হবে, আমি তার পক্ষেই আছি। আমি চাই দেশের ভালো হোক, দেশের মঙ্গল হোক।
জাগো নিউজ: কিন্তু বিনোদন অঙ্গনের অনেক তারকা উন্নত জীবনের প্রত্যাশাসহ আরও অনেক কারণে বিদেশে স্থায়ী হচ্ছেন।
কুসুম সিকদার: আগেই বলেছি, আমি বিভিন্ন দেশে প্রচুর যাতায়াত করি। কিন্তু নিজের দেশেই শান্তি পাই। নিজের দেশের মানুষ, নিজের দেশের খাবার-দাবার, আবহাওয়া, শীত, বসন্ত, শরৎ সব মিলিয়ে দারুণ প্রকৃতি। আপতত দেশ ছেড়ে বিদেশে স্থায়ী হওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।
এমএমএফ/আরএমডি/এএসএম