• সারাদিন বসে থাকলেও বেচাকেনা হয় না
• বেচাকেনা হয় দুই-তিনদিন পর পর
নারায়ণগঞ্জের থান কাপড়ের ব্যবসায়ীরা অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েই দিন পার করছেন। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও লাভের মুখ দেখছেন না। এমনকি ন্যূনতম বনিবাট্টা পর্যন্তও করতে পারছেন না অনেকে। অথচ এক সময় প্রতিদিন কোটি টাকার বেঁচাকেনা হতো। সেই সঙ্গে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করতো মার্কেটের ব্যবসায়ী ও সাধারণ শ্রমিকরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সব ধরনের গেঞ্জির থান কাপড়ের অন্যতম পাইকারি ও খুচরা বিক্রির মার্কেট হলো নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকার রেলওয়ে সুপার মার্কেট। মার্কেটের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন জায়গায় তাদের দোকান রয়েছে। আগে এই ব্যবসা অল্প পুঁজিতে করা গেলেও এখন আর সে অবস্থা নেই।
যার ঘরে মাল নেই সে ঘরেও কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার মাল থাকে। এমনও ঘর আছে যেখানে দুই থেকে চার কোটি টাকার মাল রয়েছে। এখান থেকে নারায়ণগঞ্জের শিল্প নগরী বিসিকসহ বিভিন্ন এলাকার গার্মেন্টস মালিকরা থান কাপড় সংগ্রহ করেন। এরপর এসব কাপড় নিয়ে কারখানায় গেঞ্জি, টি-শার্ট তৈরি করেন। পরে এসব পণ্য সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন।
একই সঙ্গে এসব পণ্য আবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে তাদের এই মার্কেটে ক্রেতার আনাগোনা একেবারেই কমে গেছে। আগে ব্যবসায়ীরা যেখানে দিনে ৪০ থেকে ৫০ হাজার পাউন্ড মাল বিক্রি করতেন সেখানে এখন মাসে ৪ থেকে ৫ হাজার পাউন্ড মালও বিক্রি করতে পারছেন না। এতে ব্যবসায়ী ও তাদের অধীনে থাকা শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছেন। অনেক শ্রমিকের যাতায়াতের খরচও পর্যন্ত উঠে না।
রেলওয়ে সুপার মার্কেট ও সংশ্লিষ্ট প্রায় দেড় হাজার দোকান রয়েছে। আর এই দোকানগুলোর সঙ্গে ৮ থেকে ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান জড়িত। বর্তমানে তারা কেউই ভালো নেই।
বিগত ১৫ বছর ধরে এখানে থানকাপড় ভাঁজ করার কাজ করেন ৬৫ বছর বয়সী আসমা বেগম। তিনি বলেন, আগে কখনো এতো খারাপ সময় দেখিনি। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫০০ টাকার কাজ সহজেই করা যেতো। আর এখন সারাদিনেও ২০০ টাকা আয় করতে পারি না।
মার্কেটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোক্তার হোসেন বলেন, মূলত গার্মেন্টে থেকে ওয়েস্টিজ কাপড় কিনে এখানে বিক্রি করি। আমাদের কাছ থেকে স্থানীয় হোসিয়ারী ব্যবসায়ীরা কাপড় কেনে। ইদানিং বাংলাদেশের গার্মেন্টসগুলোতে অর্ডার কমে গেছে। তাই আমরা তাদের কাছ থেকে মাল পাচ্ছি না। পাশাপাশি রাজনৈতিক সমস্যার কারণে অনেকে মাল বিক্রি করতে পারছে না। এজন্যই ব্যবসার অবস্থা খারাপ যাচ্ছে।
আরেক ব্যবসায়ী সাদিক রূপম বলেন, এটা একটা বড় বাণিজ্যিক এলাকা ছিল এক সময়। এখন আর আগের মতো ব্যবসা হয় না। অনেকে ইতিমধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছে। আমরা দুইদিন তিনদিন পর বেচাকেনা করি। আগে এমন ছিল না। গত ১ বছর ধরে ব্যবসার পরিস্থিতি বেশি খারাপ যাচ্ছে।
রেলওয়ে সুপার মার্কেট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, অবস্থা ভালো নয়। সারাদিন বসে থাকলেও বেচাকেনা হয় না। আমরা গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের উপর নির্ভরশীল। তারা ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি। বর্তমানে তাদের ব্যবসা মন্দা থাকায় আমাদের অবস্থাও ভালো যাচ্ছে না। তবে দেশের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এএইচ/এমএস