আসন্ন জাতিসংঘ কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি লবির ক্রমবর্ধমান আধিপত্য প্রতিরোধ করে এবং স্বার্থের দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে উঠে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের চাহিদার ভিত্তিতে বাস্তবসম্মত জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সোমবার (৪ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানায় টিআইবি।
টিআইবি জানায়, সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতিসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন নিশ্চিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট ৯ দফা সুপারিশ সংবলিত পলিসি ব্রিফ হস্তান্তর করেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়ন এবং সম্মেলনের এজেন্ডাভুক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সুশাসনের বেশকিছু ঘাটতি লক্ষ্য করেছে তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জলবায়ু অর্থায়নের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ-প্রক্রিয়ায় শুদ্ধাচার ও প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিল সরবরাহে ঘাটতি, জলবায়ু তহবিলের অপর্যাপ্ততা, ক্ষতিগ্রস্ত দেশে অভিযোজনে কম অগ্রাধিকারের পাশাপাশি প্রকল্প সময়াবদ্ধ বাস্তবায়ন ও ক্ষয়-ক্ষতি তহবিলে অনুদান-ভিত্তিক বরাদ্দ, এনডিসি বাস্তবায়ন জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় ঘাটতি রয়েছে।
ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে আয়োজক দেশ এবং সম্মেলন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের বিনিয়োগকারীদের সভা আয়োজন এবং সম্মেলনের সভাপতি এবং আয়োজক দেশ এই প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকায় সম্মেলন আয়োজনে জড়িতদের আচরণবিধি ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি লবির আধিপত্য ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে, ইউএনএফসিসিসি প্রতিবেদনে পছন্দসই পরিবর্তনে চাপ প্রয়োগসহ পরিবশেবান্ধব জ্বালানি প্রসারে অর্থ প্রদানের বিষয়ে প্রশ্ন তুলছে। অন্যদিকে, প্যারিস চুক্তিতে প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিল প্রদান বাধ্যতামূলক না করে ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে এবং ‘নতুন’ ও ‘অতিরিক্ত’ সহায়তাকে উন্নত দেশগুলো শর্তযুক্ত ঋণ আকারে প্রদান করছে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রদত্ত মোট অর্থ যা জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তার ৭০শতাংশই ঋণ। ফলে উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু অর্থায়ন প্রাপ্তি একদিকে যেমন ক্রমেই কঠিন ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের জনগণের ওপর নতুন ঋণের বোঝা তৈরি করছে। আবার, ২০২৪ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করা হলেও তা কার্যত চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু তহবিল প্রদানে বহুমুখী সুশাসনের ঘাটতি আমরা লক্ষ্য করছি। আসন্ন জাতিসংঘ কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি লবির ক্রমবর্ধমান আধিপত্য প্রতিরোধ করে এবং স্বার্থের দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে উঠে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের চাহিদার ভিত্তিতে একটি বাস্তবসম্মত জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের আহ্বান জানাই।
আসন্ন কপ-২৯ সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতিসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন নিশ্চিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের বিবেচনার জন্য কিছু সুপারিশ করেছে টিআইবি।
এর মধ্যে রয়েছে- জলবায়ু অর্থায়ন সময়াবদ্ধভাবে সরবরাহে উন্নয়নশীল এবং ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে একত্রে কাজ করা; স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে উন্নত দেশগুলোকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারসহ নতুন অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে একটি রোডম্যাপ প্রস্তুতে সমন্বিত দাবি উত্থাপন করা; ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরসহ নেট-জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সিদ্ধান্তগ্রহণ করা ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সরকারের করণীয় হিসেবে টিআইবির সুপারিশমালায় রয়েছে- কৌশলগতভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব প্রদানে এবং জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা হ্রাসে ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টারপ্ল্যান (আইইপিএমপি) সংশোধন; বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০০৯ এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) তহবিল ব্যবহার নীতিমালা, ২০১২ সংশোধন ও এতে তহবিল ব্যবহার বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান সংযোজন; কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বন্ধে বাধ্যবাধকতাসম্পন্ন একটি ঘোষণা প্রদান ইত্যাদি।
এসএম/ইএ/এমএস