গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান। জেলায় ‘বাইদে মাহাবুব’ নামে পরিচিত তিনি।। বিগত সরকারের সময় তার ক্ষমতা ছিল একজন মন্ত্রীর চেয়েও বেশি। প্রভাব খাটিয়ে করেছেন নানা স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি।
ক্ষমতার জোরে ৩০ লাখ টাকা মূল্যের সরকারি কালভার্ট বাগিয়ে নির্মাণ করেছেন নিজের খামারে। খামারে চলাচলের জন্য একই দপ্তর থেকে বাগিয়ে নিয়েছেন ২৪০ মিটার পিচঢালা রাস্তা। যার সুফল ভোগ করছেন শুধুমাত্র তিনিই।
টেন্ডারের নথি অনুযায়ী, কালভার্টটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১২ লাখ টাকা। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ইচ্ছেমতো কাজ করিয়ে বিল করেন ৩০ লাখ টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, সরকারি টাকার প্রকল্প ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহারের সুযোগ নেই।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সদর উপজেলার চর গোবারা এলাকার বড়ভিটা কমিউনিটি ক্লিনিক ও প্রাইমারি স্কুল থেকে পণ্ডিতবাড়ি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা পিচঢালা রাস্তায় উন্নীতকরণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। একই সড়কের পুরোনো ফেরিঘাটের কাছে একটি বক্স কালভার্ট হওয়ার কথা ছিল সেখানে। সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালে টেন্ডার আহ্বান করেন দপ্তরটি।
টেন্ডারটি একই প্যাকেজের হলেও আলাদা আলাদাভাবে সড়ক ও কালভাটের কাজ পায় দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কালভাটের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১২ লাখ টাকা। তবে কালভার্টটি যেখানে হওয়ার কথা ছিল সেখানে না হতে দিয়ে সদর উপজেলার দত্তডাঙ্গা বিলে নিজের খামারে বাগিয়ে নেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান।
অভিযোগ আছে, এলজিইডি থেকে কালভার্টটির নির্মাণ ব্যয় ১২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ইচ্ছেমতো কাজ করিয়ে ৩০ লাখ বিল করান মাহাবুব আলী খান। দপ্তরটিও নিয়মবহির্ভূতভাবে বিলের অনুমোদন দেয়।
কালভার্টটির ঠিকাদার নুরু সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৯ সালে টেন্ডার পাওয়ার কিছুদিন পরেই মাহাবুব আলী খান আমাকে ডেকে বলেন, কালভার্টটি আমার খামারে নির্মাণ করতে হবে এবং ভালো করে নির্মাণ করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে সেখানে বড় গাড়ি যাওয়া-আসা করবে। সেই কারণে যাতে টেকসই হয়, সেভাবে নির্মাণ করতে নির্দেশ দেন। টেন্ডারে ১২ মিলি রড উল্লেখ থাকলেও তিনি ২০ মিলি রড ব্যবহার করেছেন। কালভার্টটির সাইজও টেন্ডারের চেয়ে বড় করা হয়েছে। যে কারণে বিল ১২ লাখ থেকে ৩০ লাখে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাহাবুব আলী খান বলার পর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম ফজলুল স্যারকে বিষয়টি জানাই। তিনি বলেন, কাজটি ওইখানেই করতে হবে। পরে আমি আর কী করবো! কালভার্টটি ওইখানেই করে দিয়ে আসি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, কালভার্টটির অনুমোদন আগের যিনি নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন তিনি দিয়েছেন। আমি শুধু বিল পাস করেছি।
প্রকল্পের কাজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কীভাবে বিল পাস হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তিনি অনেক কিছু করেছেন। আমাদের কাছ থেকে তো শুধু কালভার্ট নিছে। শুধু তিনি নয়, বিগত দিনে দেখেছি সবাই একই কাজ করেছেন। আমি বিল পাস না করালে এখানে থাকতে পারতাম না। তবে ২৪০ মিটার পিচঢালা সড়ক নিয়ে কোনো তথ্য বা বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী একে এম ফজলুল বর্তমান সদর দপ্তরে কর্মরত। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোনে তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
জেলা দুদকের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ‘সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত কিছু করার সুযোগ নেই। কোনো প্রকল্প ব্যক্তিস্বার্থে করা হলে সেটি দুর্নীতি। তিনি যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কালভার্টটি বাগিয়ে নিজের খামারে করে থাকেন, তাহলে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনে অপরাধ করেছেন। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান বর্তমান সেনাবাহিনীর ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, অস্ত্র লুটসহ স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা দিদার হত্যা মামলার আসামি। বর্তমানে তিনি পলাতক। যে কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আশিক জামান অভি/এসআর/জিকেএস