লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত মোহাম্মদ নিজামের বাড়িতে তার মৃত্যু সংবাদ আসার পর থেকে চলছে শোকের মাতম। অবৈধভাবে প্রবাসে থাকায় মায়ের মৃত্যু সংবাদেও আসতে পারেননি দেশে। এবার তার ফেরার কথা ছিল। তবে তার আগেই প্রাণ দিতে হলো সেই প্রবাসেই।
নিহত নিজাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের খাড়েরা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।
শনিবার (০২ নভেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেলে লেবাননের বৈরুতে নিজ কর্মস্থলে হেঁটে যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ নিজাম। পথিমধ্যে একটি কফিশপে দাঁড়ান তিনি। এ সময় ইসরায়েলি বাহিনী একটি ভবনে বিমান হামলা চালায়। এসময় বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন নিজাম। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয় তার। এই খবর গ্রামে এসে পৌঁছালে বাড়িতে শুরু হয় শোকের মাতম।
পরিবারের সদস্যরা জানান, দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নিজাম সবার ছোট। নিজামের যখন ৬ বছর তখন তার বাবা মারা যান। পরিবার ছিল অস্বচ্ছল। ফলে একযুগ আগে ঋণ করে মাকে বাড়িতে রেখে জীবিকার তাগিদে লেবাননে যান নিজাম। সেখানে বৈধভাবে গেলেও নানা জটিলতায় অবৈধ প্রবাসী হয়ে যান। তাই দীর্ঘ ১২ বছরেও নিজ বাড়িতে ফিরতে পারেননি তিনি। এরইমাঝে মারা যান তার মা। অবৈধভাবে প্রবাসে থাকায় মায়ের মরদেহটিও দেখতে পারেননি তিনি। সম্প্রতি দেশে ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল নিজামের। পরিবার ছিল তার অপেক্ষায়। কিন্তু এখন অপেক্ষা তার মরদেহের।
নিহত নিজামের বড় বোন সায়েরা বেগম জানান, ২০১২ সালে নিজাম লেবানন যান। প্রথম তার আকামা ছিল। পরে আকামার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর টাকা বেশি লাগায় আর নতুন করে করেননি। এতোদিন অবৈধভাবে থাকায় দেশে ফিরতে পারেননি একযুগ ধরে। সম্প্রতি দেশে আসার চেষ্টা করছিলেন। এসে বাড়িঘর মেরামত করে বিয়ে করার কথা ছিল। কিন্তু এখন আমার ভাইয়ের লাশ আসবে।
স্থানীয় সংরক্ষিত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রেহেনা বেগম বলেন, রাতে ফোন করে জানানো হয়েছে হাসপাতালে নেওয়ার পর নিজাম মারা গেছে। এখন তার পরিবার মরদেহের অপেক্ষায় আছে। সরকারিভাবে যেন তার মরদেহ দেশে দ্রুত ফিরিয়ে আনা হয়, সেই দাবি জানাচ্ছি।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহরিয়ার মোক্তার জানান, এরইমধ্যে আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারাও মরদেহটি দ্রুত কীভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা যায় সেই চেষ্টা করছেন। আপডেট থাকলে তারা জানাবেন।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/এফএ/এমএস