সাপের কামড়ে মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য ও আক্রান্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় বুধবার (২৩ অক্টোবর) রিট পিটিশন দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজী নাজমুল হাসান রাকিব এবং ইন্তেখাব উল আলম।
রিটে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষককে বিবাদী করা হয়েছে।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এবং বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নে-সাপের কামড়ে মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের এবং সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে বলে জানান রিটকারী আইনজীবী।
রিটকারী আইনজীবী জানান, সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব বৈচিত্রা, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবেন।
বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্রা বজায় রাখার জন্য বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ প্রণয়ন করা হয়। যেখানে ৫২ ধারায় বলা হয়-৫২(১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা বিধি প্রণয়ন করতে পারবে। ৫২(২) যেসব বিষয়ে বিধি প্রণয়ন করা যাবে।
পরবর্তীতে সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা বন্য প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত জানমালের ক্ষতিপূরণ বিধিমালা-২০২১ প্রণয়ন করা হয়। যেখানে ক্ষতিপুরণের বিধান রাখা হয় শুধুমাত্র বাঘ, হাতি, কুমির ও ভালুক দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আহত/নিহত হলে। তবে সাফারি পার্কে যেকোনো বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে। মৃত্যু হলে ক্ষতিপুরণ ৩ লাখ টাকা গুরুতর আহত হলে অনধিক ১ লাখ টাকা। কিন্তু সাপের কামড়ে নিহত/আহত হলে কোনো ক্ষতিপূরণের বিধান এতে রাখা হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০২৩ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিবছর বাংলাদেশে কমপক্ষে ৭৫১১ জন সাপের কামড়ে মারা যায়। সাপের কামড়ের ৯৫% ভাগই ঘটে গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুবিধা তারা পায় না। যাদের বেশিরভাগ কৃষক বা কৃষিকাজে জড়িত।
যাদের ৬১% ভাগ লোক চিকিৎসা নিতে যায় ওঝার কাছে, মাত্র ১৭% চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যায়।
বর্ষাকালে যাতায়াত ব্যবস্থার অসুবিধার জন্য দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না; অনেক সময় হাসপাতালে নিতে পারলেও অ্যান্টিভ্যানম থাকে না; অনেক সময় অ্যান্টিভ্যানম থাকলেও-দেরিতে নেওয়ায় অ্যান্টিভ্যানম রোগীকে বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট হয় না।
আবার অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিভ্যানম দেওয়ার পর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়, আইসিইউ প্রয়োজন হয়, রুগীর মৃত্যু ঘটে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তির মৃত্যু শুধু তার একার মৃত্যু নয়, পরিবারের সবাই চরম আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ে।
অন্যদিকে সাপ আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য খুবই জরুরি। প্রতি বছর ইদুরের কারণে যে পরিমাণ ফসল নষ্ট হয় তার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে পাওয়া ৯৮টি জাতের সাপের মধ্যে মাত্র ৩১টি বিষাক্ত। জীবনের ভয়ে মানুষ সব ধরনের সাপ নির্বিচারে হত্যা করছে।
যেখানে বাঘ, সিংহ, হাতি, কুমির ও ভালুক দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে মানুষ ক্ষতিপূরণ পায়, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে মানুষ ক্ষতিপূরণ পায়, সেখানে সাপের কামড়ে কেউ মারা গেলে ক্ষতিপূরণ পাবে না-সেটা বৈষম্যমূলক।
এফএইচ/এমআইএইচএস/এমএস