আল-আমিন হক অহন:
ট্রেনের ঈদযাত্রায় বিনা টিকিটের যাত্রী রুখতে এবার আরও কঠোর হচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। টিকিট ছাড়া স্টেশনে যাতে কেউ ঢুকতে না পারে, সে উদ্দেশ্যে কমলাপুর, বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর স্টেশনে মূল গেটের বাইরে আলাদা বাঁশের বেস্টনি তৈরি করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এবার র্যাব, পুলিশ আর রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়া সম্ভব হবে না। তবে বিশাল চাহিদার তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা কম হওয়ায় ছাদের যাত্রী ঠেকানোর চ্যালেঞ্জ রেল কীভাবে উতরাবে, সেই প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে।
ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে মূল গেট ছাড়াও রয়েছে অনেক ফাঁকফোকর। তেমনি একটি অবৈধ পথে প্ল্যাটফর্মে ঢোকা যায় কিনা তা পরখ করতে গিয়ে পাওয়া গেছে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের অফিসের ছোট একটি গেট। যমুনা টিভির প্রতিবেদকের কথায় সেটা একজন খুলেও দেয়। কতিপয় রেল কর্মচারির দখলে থাকা এই স্থানের মতো আরও অন্তত ৬টি পথে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করা যায়। তার মধ্যে স্টেশনের বরাদ্দকৃত দোকানের পেছনের দরজা অন্যতম। ঈদ যাত্রায় রেল কর্মচারিদের সহযোগিতায় এভাবে অবৈধভাবে প্ল্যাটফর্মে ঢোকা কোনো কষ্টকর ব্যাপার নয়।
এমন ফাঁকফোকর বন্ধে এবার কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রধান গেটের বাইরে আলাদা করে দেয়া হয়েছে বাঁশের বেস্টনি। সরু পথে অন্তত তিনটি স্থানে টিকিট দেখিয়ে প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে হবে ঘরমুখোদের। তার আগে যাত্রীদের পাড়ি দিতে হবে র্যাব, আরএনবি ও পুলিশের নজরদারি। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার জানান, রেলওয়ে স্টেশনে কেবল একদিক দিয়েই প্রবেশ করতে হবে। বাকি সব পথ বন্ধ থাকবে। এখানে তাই বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা হবে বেশ দুরূহ এক ব্যাপার।
রেল মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন বলেন, মানুষ যতই গরীব হোক, দুর্বল হোক; তারা ঈদে বাড়ি যাবে। ট্রেনের ছাদে যাওয়া যেন তাদের এক দাবিতে পরিণত হয়েছে! এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অনেকেই মারা গেছে ছাদ থেকে পড়ে। এই দায় কে নেবে? এটা খুবই ঝুকিপূর্ণ। গত বছর মহামান্য হাইকোর্ট ট্রেনের ছাদে যাত্রী ওঠার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
প্রতি বছর ঈদের সময়ে একটি পরিচিত দৃশ্য হচ্ছে, ট্রেনের ছাদে, ইঞ্জিনের সামনে, দরজায়- সর্বত্র ঘরমুখো যাত্রীর ভিড়। দাঁড়িয়ে কিংবা ঝুলে ঝুলে টিকিট ছাড়াই গন্তব্যে যাচ্ছে শত শত যাত্রী। বিনা টিকিটের যাত্রীদের কারণে অনেকে টিকিট কেটেও ট্রেনে উঠতে পারেন না। এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা কখনোই বন্ধ করা যায়নি। তবে এবার সেই কঠিন কাজ কীভাবে সম্ভব হবে, সে প্রসঙ্গে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সরকারের যে সকল এজেন্সি আছে যেমন, স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাব, বিজিবি সকলেই যদি সহযোগিতা করে তবে আশা করি আমরা বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণকে এবার রুখে দিতে পারবো।
রেল মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন বলেন, রেল পুলিশ, পুলিশ, র্যাব- প্রচুর ফোর্স থাকবে। স্টেশনে প্রবেশের সময় যাত্রীদের টিকিট ও এনআইডির কপি দেখাতে হবে। এবার রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে কঠোরভাবে। আশা করি, এবার বিনা টিকিটে কেউ স্টেশন বা প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে পারবে না।
যাত্রার দিনে প্রতি ট্রেনেই নন এসিতে ২৫ শতাংশ আসনবিহীন টিকিট বিক্রি করবে রেলওয়ে। এর মাধ্যমেও বিনা টিকিটে যাত্রা নিরুৎসাহিত করা যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
/এম ই