বসন্তে মুশফিক ফিরলেন কালবৈশাখীর রূপে

0
3


ছবি: সংগৃহীত

কিছু কিছু দিন থাকে, যা করতে চাওয়া হয় তার সবই সম্ভব হয়ে যায়। মুশফিকুর রহিমের জন্য আজ তেমনই এক দিন। অবশ্য কেবল একদিন নয়, আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচেও যে ঝড় তুলেছিলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল! যেখানে শেষ করেছিলেন, আজ সিলেটে দর্শকরা দেখলো সেই অসমাপ্ত ঝড়ের পরের অধ্যায়। এটা আর ঝড় রইলো না; আইরিশ বোলারদের উপর দিয়ে বয়ে গেছে বসন্তের মাঝপথে এক ভয়াবহ কালবৈশাখী! আর এর নামই মুশফিকুর রহিম।

মিস্টার ডিপেন্ডেবলকে উপমিত করতে গেলে যে ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ের কথা উঠে আসে তাতে ঝড়, কালবৈশাখী, তাণ্ডব সদৃশ শব্দগুলোর ব্যবহার খুব একটা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু চিত্রকরের তুলিতে যেমন ক্যানভাসে জন্ম নিতে পারে ভয়াল সুন্দর কোনো ছবি; তেমনি মুশফিকুর রহিমের নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসনের ইনিংসে ছিল সব ধরনের শটের ব্যবহার।

ছবি: সংগৃহীত

দলীয় ১৯০ রানের মাথায় নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হওয়ার পর ব্যাট করতে নামেন মুশফিকুর রহিম। সিরিজের প্রথম ম্যাচের অসমাপ্ত ঝড়কে আবার নিয়ে আসেন মাঠে। অন্যপ্রান্তে তাওহীদ হৃদয় এদিনও ছিলেন সাবলীল। দুই ব্যাটার মিলে আইরিশ বোলারদের সীমানা থেকে বল কুড়িয়ে আনতেই ব্যস্ত রাখেন। আগ্রাসী এই জুটিতে আসে ৭৮ বলে ১২৮ রান। ১ রানের জন্য তাওহীদ হৃদয় ফিফটি মিস করলেও নিজের সেঞ্চুরি ঠিকই তুলে নেন মুশফিক।

তবে এই সেঞ্চুরির যে অনেক রং! লফটেড শট, স্কয়ার কাটে কিংবা কাভার ড্রাইভে ওভার বাউন্ডারি, স্লগ সুইপ কিংবা স্কুপ- অভিধানের কোন শট ছিল না সেখানে! দিনটিকে একদম নিজের করে রাখবেন বলেই হয়তো পণ করেছিলেন মুশফিক। দলীয় রানের পুঁজিকে যেমন তিনি নিয়ে গেছেন এমন জায়গায়, যেখানে রেকর্ড বইয়ে শুরু হয়ে যায় কাটাছেড়া। দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডের দিনে মুশফিক নিজের নামটিও স্মরণীয় করে রাখলেন দেশের ওয়ানডে ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরি করে। ইনিংসের শেষ বলে তিনি স্ট্রাইকে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৫৯ বলে ৯৯ রান নিয়ে। শেষ বলে আসে কাঙ্ক্ষিত সিঙ্গেল; ৬০ বলে তিনি পূর্ণ করেন শতক। স্ট্রাইক রেটটাও নজরকারা, ১৬৬.৬৬! এর আগে এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন সাকিব আল হাসান। তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন ৬৩ বলে।

ছবি: সংগৃহীত

মুশফিকুর রহিম সবশেষ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন বছর দুই আগে। ফর্মহীনতা, দল থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা, অনেক প্রতিকূলতা পাড় করতে হয়েছে মুশফিককে। তবুও হাল ছাড়েননি তিনি। ঝড়-ঝাঁপটা সব উপেক্ষা করে অনুশীলনে নিজেকে ফিট রেখেছেন তিনি। এর প্রতিফলন বারবার দেখেছে বাংলাদেশের ভক্তরা। গত দেড় দশক ধরে একের পর এক রেকর্ড করে গেছেন এই পরিশ্রমী ক্রিকেটার। বারবার ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। নিজের মাইলফলক তিনি প্রতিনিয়ত স্থাপন করে গেছেন উঁচু থেকে আরও উঁচুতে।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় দুই বছর পর সেঞ্চুরির দেখা পেলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। এটি তার ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি। ছয় বছর পর ছয় নাম্বারে খেলে রেকর্ড বইয়ে ঝড় তুলেছেন মুশফিক। টানা দু’টি ঝড়ো ইনিংসে দারুণ এক বার্তাই পেলো বাংলাদেশ ক্রিকেট- মুশফিক ফিরেছেন, আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে।

আরও পড়ুন: মুশফিকের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড

/এম ই